‘আর এ কতা শুনবারও ইচ্চা করে না’
‘হামাকেরে বড় পুলের দরকার নাই। এডা আঁটোসাঁটো পুল ব্যানালেই চলবি। হামরা পায়ে হাঁটপার পাল্লেই হলো। কিন্তুক কে আর শোনে হামাকেরে কতা। কত চানু, কিন্তুক এডা পুল কেউ কর্যা দিল না।’ বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নাগর নদের বুড়িগঞ্জ ঘাটে একটি পাকা সেতু নির্মাণ না হওয়ায় আক্ষেপ করে কথাগুলো বলেন নিশ্চিন্তপুর গ্রামের গৃহবধূ ফয়জুন বেগম (৪০)। তিনি আরও বলেন, ‘পুলডা পার হওয়ার ভয়ে হামাকেরে মেয়েছোলরা ইশকুলোতই যাবার চায় না।’দীর্ঘদিনের দাবির পরও সেতুটি না হওয়ায় ঘোষপাড়া, নিশ্চিন্তপুর, পলিগাতি ও বিহার পশ্চিমপাড়া গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ধরেই নিয়েছে তাদের স্বপ্নের সেতু আর কখনোই হবে না।উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে বুড়িগঞ্জ হাটের পাশে ওই চার গ্রামের অবস্থান। কিন্তু বুড়িগঞ্জ ঘাটে সেতু না হওয়ায় এলাকাবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অবশ্য গ্রামের বাসিন্দারা বাঁশের সাঁকো তৈরি করে চলাচলের ব্যবস্থা করলেও বর্ষায় নদীর পানি বাড়লে সেটি ডুবে যায়। তখন এলাকাবাসীর ভোগান্তি চরমে ওঠে।এলাকাবাসী জানায়, এখানে একটি পাকা সেতুর অভাবে চার গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় আছে। প্রতিনিয়িত ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের আতঙ্ক নিয়ে পারাপার হতে হয়। এই সাঁকো দিয়ে না গিয়ে তাদের উপায়ও নেই। কেননা, বুড়িগঞ্জ বাজারে অবস্থিত বিদ্যালয়ে বিকল্প পথে যেতে কমপক্ষে দেড় কিলোমিটার পথ ঘুরতে হয়। এ ছাড়া কৃষকেরা সাঁকোটি দিয়ে ভাঁড়ে করে ধান, আলুসহ নানা কৃষিপণ্য হাটে নেন। আর এসব পারাপারের সময় অসংখ্য দুর্ঘটনা ঘটে। নিশ্চিন্তপুর গ্রামে বাড়ি বুড়িগঞ্জ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফের। তিনি জানান, এই চারটি গ্রামের মানুষের প্রতি যেন অবহেলার শেষ নেই। সাঁকোটি হলে কৃষিপ্রধান এই এলাকার মানুষ সহজে তাদের পণ্য বুড়িগঞ্জ হাটে নিতে পারত। এখন পণ্য হাটে নিতে তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হয়।পলিগাতি গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম (৫৫) বলেন, ‘জন্মের পর থ্যাকাই শুনিচ্ছি পাকা পুল হবি। শুনতে শুনতে কান ভোঁতা হয়্যা গেল। আর এ কতা শুনবারও ইচ্চা করে না। মনে হয় হামি এ জনোমোত আর পাকা পুল দেক্যা যাবার পারমো না।’এলাকার বিদ্যালয়ের শিক্ষক নজরুল ইসলাম (৪০) জানান, ওখানে একটি পাকা সেতুর অভাবে ছাত্রছাত্রীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়। কিন্তু এই দুর্ভোগ লাঘবে কাউকে কোনো উদ্যোগই নিতে দেখা যায় না। ঘোষপাড়া গ্রামের নারায়ণ ঘোষ (৬৫) বলেন, ‘এডা পুল না থাকায় হামড়া কষ্ট করে আবাদ করা ফসলের ন্যায্য দাম পাই না। তা ছাড়া বানের সময় অতিরিক্ত দেড় মাইল ঘুর্যা ফলন হাটোত লেওয়া লাগে। ভ্যান ভাড়া দিতেই হামাকেরে জান ব্যারা যায়।’ বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবদুল গফুর মণ্ডল বলেন, ওই গ্রামগুলোর মানুষ পাকা সেতুর অভাবে দুর্ভোগে আছে। কিন্তু সেতু নির্মাণে যে টাকা লাগবে, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে তা খরচ করা সম্ভব নয়। তাই বিষয়টি তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলে জানান চেয়ারম্যান। উপজেলা চেয়ারম্যান মীর শাহে আলম জানান, এলাকাবাসীর দাবি পূরণে তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন।