কত অজানার মানবদেহ

‘আমাদের শরীর একটি অপূর্ব শিল্পকর্ম’—আমাদের শরীর শিরোনামের বইয়ের শুরুতে ভূমিকায় যখন লেখক অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী এ কথা বলেন, পাঠক তখন চমৎকৃত না হয়ে পারবেন না। ভূমিকা মারফত তিনি আমাদের আরও জানাচ্ছেন, ‘শরীরের ভেতরে-বাইরে যেসব যন্ত্র রয়েছে, তাদের গঠন ও কাজকর্ম নিয়ে এ বইটি লেখা, বিশেষ করে শরীর, সুস্থতা ও চিকিৎসাবিদ্যা বিষয়ে যাঁরা উৎসাহী, তাঁদের জন্য।’ বলছেন, ‘যাঁরা নার্সিং বিষয়ে পড়ছেন, চিকিৎসাসেবা বিষয়ে যাঁরা শিক্ষার্থী, তাঁদের জন্যও এ বই উপযোগী হবে। যারা ভবিষ্যতে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করবে, বইটি তাদেরও খুব কাজে লাগবে।’

মোট ১১টি অধ্যায়ে বিভক্ত এ বই। অধ্যায়গুলো হলো, ‘শরীর কী দিয়ে গড়া’, ‘কঙ্কালতন্ত্র’, ‘পেশিতন্ত্র’, বহিরাবরণতন্ত্র’, ‘পরিপাকতন্ত্র’, ‘সংবহনতন্ত্র’, ‘শ্বসনতন্ত্র’, ‘রেচনতন্ত্র’, ‘অন্তঃস্রাবীতন্ত্র’, ‘জননতন্ত্র’ ও ‘স্নায়ুতন্ত্র’। মানবদেহ বস্তুত এই ১১টি তন্ত্রের সমাহার। আমরা শরীরী মানুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করব, অথচ সেই শরীর বা দেহের আদি-অন্ত সম্পর্কে অনালোকিত থাকব, এটি হওয়া উচিত নয়। স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার স্বার্থেই আমাদের উচিত আমাদের শরীর বা দেহের প্রতিটি বিভাগ বা তার গঠনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুঅবহিত হওয়া। সে বিচারে চিকিৎসাবিদ্যা-সংশ্লিষ্ট যাঁরা, তাঁদের জন্যই শুধু নয়, মানবদেহধারী প্রত্যেকের জন্যই এ বইয়ের পাঠ অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ।

বইয়ের প্রথম অধ্যায়ের শিরোনাম ‘শরীর কী দিয়ে গড়া’। এতে প্রায় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন লেখক মানবশরীর গঠনক্রিয়ার আদ্যোপান্ত। সচিত্র এ অধ্যায়টি পাঠ করলে আমরা জানতে পারব মানবশরীরের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে, তার গঠনের মূলে কারা কীভাবে কাজ করছে, ধারণা হবে সে বিষয়েও।

>
আমাদের শরীর
আমাদের শরীর
আমাদের শরীর
অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী
প্রচ্ছদ: অশোক কর্মকার l
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা l
প্রকাশকাল: জুন ২০১৬ l
১৪৩ পৃষ্ঠা l
দাম: ২৭০ টাকা

দ্বিতীয় অধ্যায় ‘কঙ্কালতন্ত্র’। এ অধ্যায়ের পাঠ আমাদের ধারণা দেবে কঙ্কাল দেহযন্ত্রকে কীভাবে সাহায্য করে, সে বিষয়ে। তার মূল কাজ সম্পর্কেও ধারণা দেবে। এ ছাড়া কঙ্কালের যে ২০৬টি হাড়, সেগুলোর কয়টির অবস্থান কোথায়, সে বিষয়েও তুলে ধরা হয়েছে অনুপুঙ্খ বিবরণ।

পাশাপাশি ‘পেশিতন্ত্র’ অধ্যায়ে পেশির ভূমিকা, ‘বহিরাবরণতন্ত্র’ অধ্যায়ে ত্বকের স্তরবিন্যাস, তার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া; ‘পরিপাকতন্ত্র’ অধ্যায়ে মানবদেহ সচল রাখতে তার সার্বিক সচলতার কথা; ‘সংবহনতন্ত্র’ অধ্যায়ে তুলে ধরা হয়েছে হৃদ্‌যন্ত্র, রক্তনালি ও রক্ত নিয়ে গঠিত তার সার্বিক ক্রিয়াগত পরিচিতি; ‘স্নায়ুতন্ত্র’ অধ্যায়ে (সবচেয়ে বড় অধ্যায়) পেশ করা হয়েছে স্নায়ুর আমূল পরিচিতি ও তাদের সার্বিক কাজ প্রসঙ্গ। এভাবে বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে রয়েছে শরীরের ভেতর ও বাইরে বিভিন্ন অঙ্গ–প্রতঙ্গের সুখপাঠ্য বিবরণ।

বইটির একটি বৈশিষ্ট্য অবশ্যই উল্লেখের দাবিদার: প্রতিটি অধ্যায় শেষে তুলে ধরা হয়েছে ‘নতুন কী শব্দ শিখলাম’ শিরোনামে একটি সংক্ষিপ্ত উপসংহারসুলভ পরিচ্ছেদ। এখানে তুলে ধরা হয়েছে সেই সব ইংরেজি শব্দের বাংলা অর্থ, যা প্রতিটি অধ্যায়ে টার্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।

সার্বিক অশিক্ষা ও কুশিক্ষার পাশাপাশি বৈজ্ঞানিক ধারণার ন্যূনতা যে দেশে প্রবল, তেমন পরিবেশে অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরীর সহজ-সরল ভাষায় লেখা আমাদের শরীর অবশ্যই অন্ধকারে আলোকবর্তিকাস্বরূপ একটি বই।