
ভাষা একটি চলমান অভিজ্ঞতার ভান্ড। মানুষের প্রতিদিনের জীবন এগিয়ে যায় কোনো নতুন রহস্যের উন্মোচনের অভিপ্রায়ে। মনোজগৎ আর পরিপার্শ্বের ঘটনার নিরন্তর বিক্রিয়ায় যেসব নতুন অভিজ্ঞতার জন্ম হয়, তা আমাদের প্রলুব্ধ করে। আর এসব নতুন অভিজ্ঞতামালা থেকে প্রতিনিয়ত তৈরি হয় নতুন ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি।
কাজী রাকিব এমন এক শিল্পী, নানা নিরীক্ষায় ছবিতে ছবিতে যিনি ক্রমাগত আবিষ্কার করেন প্রকাশের শব্দমালা। প্রকাশের তাগিদে দ্বিমাত্রিক অবতল অতিক্রম করে কখনো তিনি চলে গেছেন ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্যে। মাধ্যম তাঁকে কখনোই সীমাবদ্ধ করতে পারেনি।
সম্প্রতি গ্যালারি কায়ায় শুরু হয়েছে এ শিল্পীর প্রদর্শনী, যেখানে ১৯৭৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তাঁর কাজের একটি ক্রমবর্ণনা উপস্থাপিত। প্রদর্শনীতে তাঁর প্রথম দিকের পরাবাস্তবধর্মী কাজ থেকে শুরু করে অতিসাম্প্রতিক ‘শিফন’ অথবা ‘ওয়াটার’ শিরোনামের কাজগুলো দেখতে পাওয়া যায়।
‘শিফন’ সিরিজের কাজগুলো দেখে প্রথমে অনেকেই একটু থমকে যাতে পারেন। বিশেষত যাঁরা তাঁর ১৯৯৩-পরবর্তী সময়ের কাজের সঙ্গে পরিচিত। ’৯৩-এর সময়কালে শিল্পীর যে কাজগুলো আমরা দেখেছি, তার গল্পগুলো মনে করলে দেখা যাবে, সে সময় তিনি আঁকছিলেন আকাশ থেকে দেখা ভূদৃশ্য, আপাতদৃষ্টিতে যা একেবারেই বিমূর্ত বলে মনে হতো।
তেমনি ‘শিফন’ শীর্ষক কাজগুলোয় শিফন কাপড়ের পরতে পরতে আলোছায়া এবং রঙের যে মায়াজাল তৈরি হয়, শিল্পী তাকে দৃশ্যায়িত করেছেন। আর এই বিষয়ে যে ধারণাগত অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে, সেটি ভেঙে দিতেই সম্ভবত ‘বিহাইন্ড দ্য শিফন’ শিরোনামের কাজগুলোও দেখা যায় এখানে।
কাজী রাকিবের দীর্ঘ শিল্পযাত্রায় আমরা তাঁকে দেখি পরিশীলিত উপস্থাপনায় বিষয়কে প্রকাশ করতে। যেখানে বিষয় মাধুর্যের নিরিখে সীমায়িত। শিল্পীর এই প্রবণতা লক্ষ করা যায় তাঁর যাত্রার প্রারম্ভ থেকেই। ধাতু, কাচ, কাঠ, কাগজ, মণ্ড, কাপড় যে মাধ্যমেই তিনি কাজ করুন না কেন, সবকিছুতেই মূর্ত হয় তাঁর নিজস্ব স্বাক্ষরের ছাপ। প্রদর্শনীটি আমাদের শিল্পকলার ইতিহাস ধারণে অবদান রাখবে।
প্রদর্শনী উপলক্ষে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। ৭৬টি শিল্পকর্ম নিয়ে ১৬ জানুয়ারি শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত।