বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস কপালকুণ্ডলা বের হওয়ার পর তাঁর বেয়াই দামোদর মুখোপাধ্যায় কপালকুণ্ডলার উপসংহার হিসেবে লিখলেন মৃণ্ময়ী গ্রন্থটি। কিন্তু কপালকুণ্ডলার তুলনায় এটা ছিল খুবই নিম্নমানের। কিছুদিন পর বঙ্কিমচন্দ্রের সঙ্গে দেখা হলো দামোদরবাবুর। বঙ্কিমকে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কেমন লিখলাম আপনার বইয়ের উপসংহার?’ ‘মশাই, আপনি উপসংহার লিখে তো আমাকেই সংহার (ধ্বংস) করে ফেলেছেন।’ বঙ্কিমচন্দ্রের সরস উত্তর। আর সেই উত্তর শুনে একেবারেই চুপসে গিয়েছিলেন দামোদর মুখোপাধ্যায়।
বঙ্কিমচন্দ্রের এমন রসিকতার নমুনা ভূরি ভূরি। লেখক, সম্পাদক তো বটেই, সাধারণ মানুষের সঙ্গেও মজা করে কথা বলতে ভুলতেন না বঙ্কিমচন্দ্র। লেখক পরিচয়ের বাইরেও তাঁর আরেকটা পরিচয় ছিল, তিনি ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। একবার বঙ্কিমচন্দ্রের এজলাসে এক ব্যতিক্রম মামলা উঠল। এক ভদ্রলোক তাঁর প্রতিবেশীর নামে মামলা করেছেন এই বলে, তাঁর প্রতিবেশী তাঁর স্ত্রীর দিকে কুদৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। এখন বঙ্কিমবাবু যেন এর একটা বিহিত করে দেন। অগত্যা বঙ্কিমচন্দ্র মাথা চুলকে সাক্ষী খুঁজলেন। তখন অভিযোগকারী জানালেন, ‘জনাব, সাক্ষী আমার স্ত্রী স্বয়ং। তিনি নিজেই দেখেছেন লোকটি তাঁর দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকেন।’
অতঃপর শেষ হলো সব জেরা। এজলাসে সবাই উৎসুক হয়ে অপেক্ষা করছেন, কী বিচার করেন ম্যাজিস্ট্রেট! তবে বঙ্কিমচন্দ্র তো কম রসিক নন, বিচারের সময়ও তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তিনি হেসে বললেন, ‘তাহলে দেখতে পাচ্ছি আপনার স্ত্রীরও পরপুরুষের দিকে তাকিয়ে থাকার বদ অভ্যাস আছে। তা না হলে তিনি দেখলেন কীভাবে যে পরপুরুষ তাঁর দিকে তাকিয়ে আছে?’ বঙ্কিমচন্দ্রের এ কথা শুনে সবাই হেসে কুটি কুটি। ওদিকে বাদী পড়লেন বেশ শরমে। তখন বিচারক বঙ্কিমচন্দ্র প্রকাশ্য আদালতে বললেন, ‘চোখ আর হাওয়া কারও মানা মানে না, এ কথা সবার মনে রাখতে হবে।’
সূত্র: অংশুমান চক্রবর্তীর বঙ্গ মনীষীদের রঙ্গ রসিকতা
গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন