জুয়েল মাজহারের কবিতা

কোলাজ: মনিরুল ইসলাম
‘তুই-ই বল তা না হলে আমি/ কী করে পাব রে মাতৃরূপ! তোকেই না খাই যদি গিলে?’—জুয়েল মাজহারের সম্প্রতি লেখা এই কবিতাগুচ্ছে সময়ের ক্ষরণ ও বৈচিত্র্যের বিভা।

তস্কর
তোমার সূর্যের থেকে ঝরে পড়ে তামা
তুমি এক জন্মবোবা বধির ডাকাত

একদিন আষাঢ়সন্ধ্যায় পাহাড়ের ঢালে তুমি খুঁজে পেলে
ঘুমের ফরমালিনে ডুবে থাকা একা এক নির্মানুষ বাড়ি

এর পেটের ভেতরে পেলে রত্নপাথর। পেলে নাকছাবি
পেলে পায়ের ঘুঙুর আর স্তনের কাঁচুলি

এসবের ঘুমন্ত ঝিলিক যেন লীলা

সে বাড়ির করোগেট চালে অতি ধীরে
মেঘ এসে হামা দেয় বেড়ালের মতো

তাদের তাড়িয়ে নিতে হাওয়া আসে চাবুকসমেত

হে তস্কর, তুমি সেই দৃশ্যকে ঝোলায় পুরে নিয়ে
প্রদোষের অন্ধকার পথে নেমে যাবে?

রাতের আকাশ, জেনো, তোমাকে শিকার করে নেবে;
তোমাকে ঘণ্টার মতো রাখবে ঝুলিয়ে এক অদৃশ্য আংটায়

ধরো, টগবগে ঘোড়ায় আসীন এক অজানা দেশের সেনাপতি
একদিন ঘণ্টাটাকে আংটামুক্ত করে
আকাশগঙ্গায় চুপে দিয়েছে ভাসিয়ে;

ছাড়া পেয়ে সেই ঘণ্টা বাতাসে টুপির মতো
উড়ে গেল ছদ্মবেশে, মেঘের মুখোশে

কাক ও কাকিনী
করোগেট চালে দাঁড়কাক
কাকিনীরে দিতে উপহার
শিকারিল নধর মূষিক

ইতিউতি খুঁজে দ্যাখে—নাইইইইইইই
কুচকুচে ডানার হ্লাদিনী

কা-কা কা-কা!
চরাচর ফাঁকা!

অন্য ধামে তখন কাকিনী
মহাসুখে নব নাগরের
চঞ্চুতে চঞ্চু চলে ঘষে

দুপুরের এই অপরূপ
দৃশ্যের নিবিড় তামাশা
দুপুর নিজেই বসে আঁকে

মায়াকোল, অখিল বিবর

(জহর সেনমজুমদারের জন্য)

রক্ত লাগা খড়্গ হাতে কালী এসে বলবে: কী রে তুই

এখনো আছিস ঠায় বসে?

আয় তবে কোলে নিই

ঠাঁই দিই এ মায়াজঘনে

আমাকে এখন আর ভয় পাসনে

মূর্ছা যাসনে ত্রাসে।

তারচে বরং বল ‘এবমস্তু’

অজিন-আসন থেকে নেমে আয় ধীরে;

রাত্রিদিননিরপেক্ষ মেরুন-ফিরোজা-লাল-নীল

মূর্ছাহত এ প্রহরে

এ আমাকে শুধু একবার

মাতৃজ্ঞানে জাপটে ধর, জাপটে ধর

ঠোঁট লাগা উষ্ণ-গাঢ় রক্তপয়োধরে

মুখ লাগা মুখ নামা

শষ্প-তৃণে ঘেরা এই অখিল বিবরে।

২.
আইসো

এবে অন্দরে আইসো।
এবে প্রশমন।

এবে অধিক অন্দরে আইসো
এবে প্রশমন!

শান্ত-নাভি! তৃপ্ত শিশু
জন্মদ্বারে
স্বাগত
স্বাগত

এবে আইসো,
অশেষ জোনাকিলিপ্ত মাতৃদ্বারে
পুত্র হেন, রজঃপুষ্প হেন

ভেকের শিশুর মতো লাফ দিয়া
এবে আইসো জন্মজলায়

এবে আইসো,
শূন্যগর্ভ জঠরের অযৌন নির্ভ্রূণ কুঠরিতে

তুই-ই বল তা না হলে আমি
কী করে পাব রে মাতৃরূপ!
তোকেই না খাই যদি গিলে?

অন্যআলো ডটকমে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]