
উনিশ শতকের প্রথম দশক থেকে ছয়ের দশকের মধ্যে চার বাঙালি কবির জন্মগ্রহণ বাংলা ভাষার একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বিশিষ্টতায় এই চারজনের কণ্ঠস্বর দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে বাংলা কবিতাকে প্রভাবিত করেছে। এঁরা হলেন জন্ম সনক্রমে ঈশ্বর গুপ্ত (২৩ জানুয়ারি ১৮১২-১৮৫৯), মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি ১৮২৪-২৯ জুন ১৮৭৩), বিহারীলাল চক্রবর্তী (২১ মে ১৮৩৫-২৪ মে ১৮৯৪) এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১-৭ আগস্ট ১৯৪১)। এঁদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড় ছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত। ব্যক্তিগতভাবে আমি তাঁকে আধুনিক যুগের প্রথম কবি হিসেবে গণ্য করতে চাই। যুগ-সন্ধিক্ষণে একজন কবি তাঁর পূর্ববর্তী কাল, কাব্য ও কাব্যভাবনা নিয়ে যে বিপদে পড়েন, ঈশ্বর গুপ্তও সেই বিপদে পড়েছিলেন। যুগ-সন্ধিক্ষণের কবির বড় বিপদ হলো আগের সময়কালের দোষ-গুণ যেমন সহজে ঝেড়ে ফেলা যায় না, তেমনি নতুন যুগের সম্ভাবনা নিয়েও তাঁকে নানা রকমের ধন্দ পোহাতে হয়।
এই চারজনের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন সর্বকনিষ্ঠ কবি, যিনি বিশ শতকের প্রায় মাঝামাঝি পর্যন্ত বেঁচে থেকে দেখেছেন আধুনিক যুগের ঘোর-কাল—প্রথম মহাযুদ্ধ এবং দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের মঞ্চ-প্রস্তুতিসহ ভারতের স্বাধীনতার লড়াই ও ম্যানুফ্যাকচারিং পর্ব। সুদীর্ঘ জীবন পাওয়ার বদৌলতে তিনি তাঁর সৃষ্টিশীলতা দিয়ে যেমন সুবিশাল গ্রন্থরাজি লিখে গেছেন, তেমনি আপন হাতে তুলে নেওয়া ইতিহাসের দায়ও পুরাটা এড়াতে পারেননি। প্রশ্ন আসে, রবীন্দ্রনাথের দানটা কী, আর দায়টাই কী? শিল্প-সাহিত্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথের দান অফুরান। তাঁর এই অফুরান দানের মধ্যে শিল্প-সাহিত্যের প্রায় সবগুলো মাধ্যমেই তিনি বিশিষ্টতার সঙ্গে কামিয়াব হয়েছেন। তা সে কবিতাই হোক, গল্পই হোক, উপন্যাস, নাটক, চিত্রকলা—যা-ই হোক। কিন্তু শিল্প-সাহিত্যে কামিয়াবির শেষ উচ্চতম ধাপ নেই। তাই সফল-অসফল যেকোনো শিল্পী বা লেখককে তাঁর পরের কালের মানুষের কাছে দুয়েক কথা শুনতেই হয়। কখনো তা ঠিক, কখনো বেঠিক। আমরা এই ‘দুয়েক কথা’র নাম রেখেছি বিতর্ক, ডাকনাম সমালোচনা। সাহিত্য বিষয়ে হলে সেই সমালোচনাকে আদর করে ডাকি সাহিত্য-সমালোচনা। সত্যি বলতে কী, রবীন্দ্রনাথের হাতে এই তর্কটিও একটা মেধাবী বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এককথায় যদি বলি তবে বলতে হয়, বাংলা ভাষার মুল্লুকে রবীন্দ্রনাথের মতো এত সুশৃঙ্খল চিন্তা খুব কম মানুষই করতে পেরেছেন এবং যথাসম্ভব তার ওসার বাড়িয়ে দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের চিন্তার গতিস্রোত তীব্র করেছেন। এই যদি দান, তবে দায় কোথা? একটা কথা না যদি ভুলি, ভালো হয়, যেথা দান, দায় ব্যাপারটা জড়িয়ে থাকে তারই সঙ্গে। তার মানে কি অকুণ্ঠচিত্তে দান করলেও দায়ের প্রশ্ন এড়ানো যায় না? সমাজ নামের বাসিন্দা হলে অনেকটা তা-ই।
এখন একটু আসতে চাইছি আমাদের যুগে। রবীন্দ্রনাথের দানের সঙ্গে দায়ের সম্পর্ক বিচার যদি আমরা এ যুগে করি, তবে তা প্রথম এবং প্রধানত করতে হবে আমাদের জাতীয় আকাঙ্ক্ষার ভেতর দিয়ে। এই আকাঙ্ক্ষার মধ্যে যেমন ভাষা আছেন, ভাষার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত আমাদের পুরাকাল ও সমকাল আছেন, ফলে, ভবিষ্যৎও আছেন বৈকি। সেই থাকা না থাকার দ্বন্দ্বকেই বলা যেতে পারে প্রগতির লক্ষণ। প্রকৃষ্ট গতির লক্ষণ। বর্তমান বাংলাদেশের দিকে তাকালে সেই ধারণা কিছুটা অস্পষ্ট লাগে। তাহলে কি রবীন্দ্রনাথের দানের যে দায়, তার মধ্যে কিছু দ্বিধা আছে?
কী সেই দ্বিধা? নাকি আমরা যথার্থভাবে চিন্তার আগুনকে চিনে উঠতে পারি নাই। তার এক কারণ, আমরা মানুষের অসীম সম্ভাবনাকে এড়িয়ে গিয়ে হয় তার ওপর দেবত্ব আরোপ করি, নয়তো ছুড়ে ফেলে দিই।
বাইশে শ্রাবণে যখন দেশসুদ্ধ অঝোর বরষায় সিক্ত, ডুবে যাচ্ছে ‘যেটুকুন-বাকি-আছে’ নদী। গ্রামবাংলার দারিদ্র্যের ওপর বন্যার ছোবল যখন আবার একই সঙ্গে অপার সৌন্দর্যের লীলা, মনে রাখতে হবে, তখনো বাংলার কবিরা লিখে যাচ্ছেন কবিতা। যদিচ, এই সত্য অস্বীকারের কোনো পথ নাই যে, সাধারণ মানুষ, যাদের একদা আহ্লাদ করে ডাকা হতো পাঠক, তার আর বিশেষ দেখা পাওয়া যায় না। তিনি এখন আর বিশেষ কাব্য পাঠ করেন না। কেন? বালকোচিত সহজ উত্তরটি হলো, হয় পাঠক এখন নিজেই লেখেন, নয়তো কোনো এক অভিমানে তাঁদের কাব্যপাঠ-রাজ্য থেকে ‘এক্সোডাস’ ঘটেছে। যার কারণে রবীন্দ্রনাথ বাংলাদেশে এক সুবিশাল অনুষ্ঠানে পরিণত হলেও তাঁর কবিতার প্রভাব পাঠকের ওপর থেকে নয় শুধু, কবিদের ওপর থেকেও উবে গেছে। বর্তমানকালের নতুন কবিরা রবীন্দ্রনাথ কেন, সম্ভবত আর কোনো পূর্ববর্তী কবির কবিতা বা তাঁদের ধ্যানধারণা কাজে লাগান না, যতক্ষণ না ইনারা জীবিত অগ্রজকে পীর হিসেবে পান। অথচ বৈচিত্র্যসন্ধানী কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে শেখার আছে অফুরান। ভারতীয় চিন্তার আর ইউরোপীয় চিন্তার সংশ্লেষ। কিন্তু দুনিয়াকে এক-গোলকধাম (গ্লোবাল ভিলেজ) সংজ্ঞায় নিয়ে আসার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের বর্তমানকালের কবিদের যা কিছু চাই, আনতে হয় পশ্চিম থেকে। তাতে মাল যদি বিশেষ সরস না-ও হয়। এখানে তবে রবীন্দ্রনাথের দোষ কোথায়? দোষ না, আছে কবি হয়ে ওঠার সময় তাঁর মতো বিপুল প্রতিভাবানের বোঝার সামান্য একটি ভুল। কথাটি বলতেও বুক কেঁপে ওঠে।

‘আমি’র দৌরাত্ম্যে সমাজ নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ হারাল। তবে মধুসূদন দত্ত রবীন্দ্রনাথের নিকট-অগ্রজ ছিলেন না, নিকট-অগ্রজ বরং ছিলেন বিহারীলাল
ফিরি একটু রবীন্দ্রনাথের আগে। রবীন্দ্রনাথের আগে সবচেয়ে প্রতিভাবান লেখক ছিলেন কে কে? আগেই দেখিয়েছি, একজন ছিলেন ঈশ্বর গুপ্ত, ঠিক তাঁর পরই বাংলার সাহিত্যের আকাশ রৌশনদীপ্ত করে যিনি সাতসমুদ্র পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরলেন, তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত। কি তাঁর কীর্তির দান? আর আমরা যেহেতু জেনেই গিয়েছি দানের সঙ্গে দায়ের প্রশ্ন জড়িত, তাহলে, মধুর দায় কি? আমি বলব শুদ্ধ মধু। কি সেই মধু? এই মধু হলো তাঁর নতুন চেতনাবোধ। জাতীয় রাষ্ট্রভাবনার অঙ্কুর। ঔপনিবেশিক শাসকদের তিনি শুধু নিজ দেশে দেখেন নাই, বরং প্রভুগোষ্ঠীর আপন দেশ ঘুরে বেড়িয়ে আবার তাকে পায়ের তলা থেকে ধুলার মতন মুছে, তাদেরই আলোকদীপ্তি কাজে লাগিয়ে ভারতের ইতিহাসের প্রথম নায়ক চরিত্রের ধারণা পাল্টে দিলেন। চরিত্রের এই খোলনলচে পাল্টানোর কাজ ভেতরে রাজনৈতিক, বাইরে শৈল্পিক। জাতীয় রাষ্ট্র কল্পনার এটাই হলো মধুকবির সবচেয়ে বড় কীর্তি। রাবণ রাক্ষসকুলের হলেও, এ কথা তিনি ভুলে গেলেন না যে সেই সুদূর অতীতেও বাঙালিকে রাক্ষস বলেই গাল দিতে বহিঃপ্রভুগণ ছাড় দিতেন না। মধুসূদন বীরের পূজারি, তাই রাক্ষসকুলের পক্ষ নিলেন, যিনি আপন অস্ত্রে, আপন কৌশলে, আপন ভক্তিতে শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেন। এবং তথাকথিত, যদি আমাকে অনুমতি দেওয়া হয়, বলব, প্রথম লিবারেল হলেন রাম, যিনি যুদ্ধ-বুদ্ধিতে, আনন্দ-বেদনায় দেবতানামী প্রভুর সাহায্য ছাড়া এক পা-ও নড়াতে পারেন না। রামের রাক্ষস বধ তাই পরমুখাপেক্ষী সৈনিকের জয়। আর এই জয়েরই আরেক নাম ‘বেহাত বিপ্লব’ (সলিমুল্লাহ খান) বা গ্রামসি কথিত প্যাসিব রেভল্যুশন। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের দিকে তাকালেও কমবেশি এই ছবি চোখে পড়ে। মতাদর্শের দিক থেকে নায়কের এই নতুন সংজ্ঞার ভেতর দিয়ে মধুসূদন বাংলা কবিতায় যে বিপ্লবটা করলেন, সেই চিহ্নটিও আর বাংলা নামের সমাজে বা কবিতায় অবশিষ্ট নাই। যা আছে তা কখনো চিৎকার, কখনো শীৎকার!
কেন নাই?

এবার ফিরি রবীন্দ্রনাথের কাছে। কি প্রতিভা, কি বিদ্যাবুদ্ধি, আধুনিক মানুষ হিসেবে সবই তাঁর হাতের মুঠিতে ভরা। কিন্তু তারপরও মধুকৃত জাতীয় বীরের এই নতুন সংজ্ঞাকে নিজের ধারালো চোখের সামনে মতাদর্শ হিসেবে দাঁড় করাতে পারলেন না।
বাংলা কাব্যে গীতিকবিতার স্বভাব পদে ও পদার্থে সেই চর্যাপদ থেকেই জেগে আছে। তার ধারাবাহিকতার আরেক নাম বলা যায় বাংলা কাব্যেও ইতিহাস। কিন্তু মধুসূদন গীতিকবিতার সেই স্বভাবকে গলা টিপে ধরলেন না, বরং বাংলার বীরের অন্তর্জগতে গীতিসুধাকে জারি রেখেই যে অশেষ সাধন করলেন, তার নাম ইউরোপীয় ভাষায় আমরা বলি, মহাকাব্য এবং অমিত্রাক্ষর ছন্দ হলো সেই নতুন নিশানকে উচ্চে তুলে ধরার হাতিয়ার।
অগ্রজ হিসেবে রবীন্দ্রনাথ মধুসূদনের এই মিথস্ক্রিয়া এড়িয়ে গেলেন কিসের দাপটে? সোজা উত্তর ‘সাবজেক্টিভিটির’ দাপটে; যেখানে মানুষ এক সমাজের অংশ থেকে বের হয়ে একটি ভগ্নাংশের চেহারায় প্রকাশ পেল সেই ‘আমিতে’। ‘আমি’র দৌরাত্ম্যে সমাজ (তা তো ফ্রয়েডের ভাষায় অজ্ঞানও বটে) নায়ক হয়ে ওঠার সুযোগ হারাল। তবে মধুসূদন দত্ত রবীন্দ্রনাথের নিকট-অগ্রজ ছিলেন না, নিকট-অগ্রজ বরং ছিলেন চার কবির আরেকজন বিহারীলাল চক্রবর্তী। একদা ছিলেন চট্টোপাধ্যায়। কারণ অজানা যদিও, তবে জানা যায়, বিহারীলাল জন্মানোর আগেই তাঁদের বংশ বদল হয়ে নতুন উপাধি গ্রহণ করেন চক্রবর্তী। ভারতীয় সমাজে ভূমিব্যবস্থাপনার মধ্যে উপাধিবদলের এই চিহ্ন থাকা সম্ভব বলেই আমার মনে হয়। যা-ই হোক, এই উপাধিবদল অবশ্যই সমাজস্তরের কোনো বিষয়, তা নিয়ে সন্দেহ নাই। ব্যক্তি ‘আমির’ গ্রাস থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা বিহারীলাল তো করেনই নাই, বরং সেই অপরত্বহীন এক অস্তিত্বের জয়গান গাইতে গিয়ে মাইকেল মধুসূদনের দিকে তাকানোরও ফুরসত পেলেন না। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ও এই সময়ের মানুষ। বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠতম লেখক। তাঁকে বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ একজন কবি বলতেও বাধা থাকার কথা নয়। যদিও সর্বতোভাবে তাঁর ওপর আমার ইমান আনা সম্ভব হয় নাই। বাঙালি রাষ্ট্রচিন্তাবিদদের মধ্যে তিনি অবশ্য-অবশ্য উচ্চ-আসনধারীর একজন। রবীন্দ্রনাথ তাঁর সমাজদর্শনের দিকে তাকালেন, কিন্তু বঙ্কিমের কাব্যশক্তিটি নিলেন না। রবীন্দ্রনাথের অগ্রজ বিহারীরালও নেন নাই।
বিহারীলাল বঙ্কিমের চেয়ে তিন বছরের ছোট, আর মধুসূদনের চেয়ে এগারো বছরের ছোট। তিনি এঁদের দুজনের ধারেকাছে ভিড়লেন না। এক আত্মগত ‘আমি’র কাব্য-পাওয়া জীবন তাঁর। তিনি এতই মশগুল ছিলেন যে কবিতার প্রকরণ এবং সমাজচিন্তার সংশ্লেষের দিকে বিশেষ মনোযোগটিও দিতে চান নাই। মোহগ্রস্তের মতো লিখে গেছেন। বঙ্কিমের দৃঢ়তা, মধুসূদনের গীতিময় নতুন সমাজচেতনা বিহারীলালকে জাগাতে পারল না।
এবার আসি রবীন্দ্রনাথের দিকে। এক ধাক্কায় তিনি বাংলা ভাষা আর সাহিত্যকে টেনে ওঠালেন ডাঙাতে। কিন্তু তিনিও মধুসূদনের কাব্যবিপ্লবকে তাঁর নিজের দৈত্যতুল্য প্রতিভা দিয়ে আরও উঁচুতে নিলেন না। নির্দিষ্টভাবে, অন্তত কবিতায় তাঁর শক্তির সম্পূর্ণ প্রকাশ থেকে আমরা বঞ্চিত হলাম চিরকালের জন্য। রবীন্দ্রনাথ নতুন কবিতার আশ্রয় খুঁজে নিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীতে। বিহারীলালকে তিনি আবিষ্কার করলেন ‘ভোরের পাখি’ হিসেবে। যে ভোরের পাখি ছিলেন মধুসূদন, বিহারীলালের মধ্যে তা দেখতে পাওয়া একটি বড় দুর্ঘটনা ছাড়া আর কী। রবীন্দ্রনাথ অবশ্য বিহারীলালের প্রকরণ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠলেন আপন মেধার জোরে। তবে হাতে রয়ে গেল ‘আমি’র মোহ, এক ‘আমি’কে এড়িয়ে গণ-আমিকে ‘সে’ নামে ডেকে ‘সে’-তে ‘সেতু’রূপে বেঁধে দিয়েছিলেন মধুসূদন দত্ত, রবীন্দ্রনাথকে সেই ‘সে’-তু দিয়ে পার হতে দেখা গেল না। আর তাতেই তৃতীয় বচনের অমিত সম্ভাবনা থেকে একটু সরে গেল যেন বাংলা কবিতা। কবিতা ও দর্শনের রেললাইনের মতো সমান্তরাল ছুটে চলা একটু ব্যাহত হলো।
তারপরও রবীন্দ্রনাথ আমাদের ‘অসেতুসম্ভব সেতু’। আগেই বলার চেষ্টা করা হয়েছে রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা ছিল। তাঁর বিপুল পরিমাণ লেখালেখির ভেতর থেকে এখনো অনেক মণিমাণিক্য আবিষ্কারের সুযোগ আছে, যদি আমরা রবীন্দ্রনাথকে নিতান্তই একটা অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত না করে বিতর্ক বা ডিসকোর্স হিসেবে হাজির করতে পারি।
বর্তমানকালের কবিরা যদি চোখজোড়া অতীতের দিকে রেখে একটু পেছন-হাঁটা হাঁটতে পারেন ভবিষ্যতের দিকে, তাহলে বেশ একটা কাজ হয়। এই নতুন যাত্রা বাংলা কবিতাকে আবার মধুসূদন দত্তের রৌশনদীপ্ত জাতীয় চেতনাকে ফিরিয়ে দিতে পারে, এটা আমার ধারণা।