থ্রিলারের ব্যাকরণ

রোমাঞ্চ কাহিনির থাকে নিজস্ব কলকবজা। চলুন থ্রিলারের অন্দরমহলে, দুটি গল্পসহ

l মডেল: বাপ্পী। কবির হোসেনের ছবি অবলম্বনে গ্রাফিকস মনিরুল ইসলাম
l মডেল: বাপ্পী। কবির হোসেনের ছবি অবলম্বনে গ্রাফিকস মনিরুল ইসলাম

বিশ্বসাহিত্যে থ্রিলারের জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। প্রকাশনা শিল্পের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর পাঠকপ্রিয় এই ‘জনরা’ বা ধারাটি। নিয়মিত পাঠকদের বিরাট অংশ থ্রিলার গল্প-উপন্যাস পড়ে থাকেন। আমাদের দেশেও প্রচুর পাঠক আছেন, যাঁরা এ ধরনের লেখা পড়তে পছন্দ করেন, পড়ে বিনোদিত হন। ইদানীং অনেকেই এ ধরনের লেখার দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। প্রতিবছর এই সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণও হচ্ছে। যেহেতু অন্য লেখার চেয়ে এ ধরনের লেখা একটু ভিন্নধর্মী, তাই এর জন্য দরকার একটু ভিন্নধর্মী প্রক্রিয়া। বিশ্বের বেশির ভাগ থ্রিলার লেখকই সাধারণ কিছু নিয়ম অনুসরণ করে থাকেন। নিয়মগুলো এমন কঠিন কিছু নয়।
অন্যান্য গল্পের চেয়ে থ্রিলার গল্পগুলোর প্লট আলাদা, তাই এর গঠনপ্রণালিও ভিন্ন। থ্রিলার হলো ডার্ক সাইড অব দি মুন—জীবনের অন্ধকারাচ্ছন্ন গল্পগুলোই উঠে আসে এখানে। অন্যসব গল্পের মতো এখানেও প্রেম-ভালোবাসা, মানবিক সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকে, তবে সেই সঙ্গে অবিচ্ছেদ্যভাবে থাকে মানবিক ত্রুটি, খুন, ষড়যন্ত্র আর রহস্য। আর এটাই থ্রিলারের মূল উপজীব্য। পাঠককে গল্পটা এমনভাবে জানাতে হয় যেন তাঁরা রোমাঞ্চিত হন, রহস্যের গন্ধ পান, বাধ্য হন শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়তে।
প্রথমেই আসে প্লটের কথা, যে প্লট ঘিরে আবর্তিত হবে গল্পটি। এই প্লট আপনি পেতে পারেন বর্তমান আর অতীতের কোনো বাস্তবিক ঘটনা, পুরাণ, মিথলজি, রূপকথা আর মহাকাব্য থেকে। পত্রিকার প্রতিবেদন বা রিপোর্টিং থ্রিলার গল্পের প্লটের দারুণ একটি উৎস। গান, কবিতাসহ প্রায় সবকিছু থেকেই প্লট নেওয়া যেতে পারে। এ রকম কোনো কিছুর সঙ্গে নিজের কল্পনা মিশিয়ে লেখক দাঁড় করিয়ে নিতে পারেন তাঁর প্লট। বাস্তবের সঙ্গে যত বেশি কল্পনা মেশানো হবে, ততই ভালো। একটি ভালো ফিকশনে কল্পনার পরিমাণই বেশি থাকে।
বিশাল ষড়যন্ত্র আর দুনিয়া কাঁপানো প্লটের চিন্তা পরিহার করা জরুরি। দুর্বল লেখকই এমন প্লটের দিকে বেশি আকর্ষিত হন। একটা বিষয় মনে রাখা দরকার, প্লট হচ্ছে বীজের মতো। ভালো বীজই যেমন শেষ কথা নয়, তেমনি ভালো প্লটও ভালো গল্পের একমাত্র উপাদান হতে পারে না। আপনার লেখনী ক্ষমতাই প্লটকে আকর্ষণীয় করে তুলবে।
একটি প্লটকে গল্পে রূপান্তর করতে হয়, আর সেই গল্পকে এগিয়ে নিয়ে যায় ছোট-বড় কিছু চরিত্র। সেসব চরিত্রের মধ্যে মুখ্য চরিত্র থাকে এক বা একাধিক। শক্তিশালী মুখ্য চরিত্র না থাকলে গল্পটি এগিয়ে যেতে পারে না। মুখ্য চরিত্র সংখ্যায় বেশি না হওয়াই ভালো। পার্শ্বচরিত্রগুলো যেন বিরক্তিকর না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার।
গল্প চূড়ান্ত করার পর আউটলাইন করা অত্যন্ত জরুরি। লেখক গল্পটি কীভাবে লিখবেন সেটা আগে ঠিক করে নিতে হয়। কেউ কেউ ভেবে থাকেন, গল্পের আউটলাইন করা মানে সৃজনশীলতার গায়ে স্ট্রেইট জ্যাকেট পরিয়ে তার হাত-পা বেঁধে ফেলা। আদতে আউটলাইন বরং উল্টোটা করে। এটা লেখকের সৃষ্টিশীলতাকে সঠিকভাবে প্রকাশের সুযোগ করে দেয়। ভালো আউটলাইন গল্প লেখার মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। আউটলাইন ছাড়া থ্রিলার গল্প লেখা হয়তো যায়, কখনো কখনো কোনো কোনো লেখক হয়তো সেটা করতেও পারেন কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আউটলাইন ছাড়া ভুল পথে এগোতে শুরু করে গল্পটি। মাঝখানে গিয়ে লেখক খেই হারিয়ে ফেলেন। গল্পের শুরু, বিস্তার আর শেষটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আউটলাইন এ কাজগুলো ভালোমতো করতে সাহায্য করে। লেখকের পরিষ্কার ধারণা থাকে তাঁর গল্পটা কীভাবে এগোবে। আউটলাইন না করলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শেষটায় গিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। খুব ভালো সমাপ্তি দেওয়াও সম্ভব হয় না। গল্পের সমাপ্তি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কাজটা করাও কঠিন। এটা অনেকটা প্লেন ল্যান্ড করার মতোই।
থ্রিলারের অনেক জনরা আছে, কোন জনরাতে লিখবেন, সেটা আগে থেকে ঠিক করে নেওয়াও জরুরি। সুতরাং জনরাগুলো সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। এমন নয় যে, আপনার প্লট কিংবা চরিত্র নির্ধারণ করে দেবে গল্পটি কোন জনরার। সত্যি বলতে, গল্প বলার ধরনই জনরা নির্ধারণ করে দেয়। খুনের গল্প হলেই সেটা থ্রিলার জনরার মধ্যে পড়বে না, আপনি সেটা কীভাবে লিখছেন, তার ওপরই নির্ভর করছে এটি। ‘মার্ডার’ যেকোনো গল্পে থাকতে পারে কিন্তু ‘মিস্ট্রি’ যোগ হলেই সেটা ‘মার্ডার-মিস্ট্রি’ হয়। আপনি খুনের রহস্য উন্মোচন করাতে পারেন, অর্থাৎ খুনটা কে করল। আবার খুনটা কীভাবে হলো, সেটাও দেখাতে পারেন।
যা-ই হোক, আপনার কাছে একটি প্লট আছে। আপনি নিশ্চিত এটা নিয়েই লিখবেন। কিছু চরিত্রও আপনি কল্পনা করে নিয়েছেন। গল্পটির আউটলাইনও করে ফেলেছেন—কোনটার পর কোনটা আসবে, ঘটনাগুলো পর্যায়ক্রমে কীভাবে ঘটবে, চরিত্রগুলো কীভাবে উপস্থিত হবে।
আউটলাইন করার সময় আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি—শুরুতেই ‘কনফ্লিক্ট’ কিংবা ‘অ্যাকশন’ দেখানোটাই ভালো। তারপর প্রধান চরিত্রকে হুট করে সেই ‘কনফ্লিক্ট-অ্যাকশনে’ টেনে না এনে তার প্রাত্যহিক জীবনের কিছু খণ্ডচিত্র দেখানো যেতে পারে। চরিত্রটাকে মানবিক হিসেবে দেখানো, সেই সঙ্গে তার রূপান্তর ঘটানোর জন্য এটার দরকার রয়েছে। ‘কনফ্লিক্ট-অ্যাকশন’-এর যে পরিস্থিতি, সেটার পরিবর্তনের সুযোগ রাখা দরকার গল্পে। তারপর ঘটনা যেন ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’-এ চলে যায়, সেটা দেখানো যেতে পারে। নতুন পরিস্থিতির উদ্ভবও দেখানো যায় এরপর। তবে গল্পে অবশ্যই ‘ডিভিয়েশন’ থাকতে হবে। পাঠকের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরানোর জন্য এটার ভূমিকা অপরিহার্য। জাদুকরদের মতো থ্রিলার লেখককেও এ কাজটা করতে হয়। চরিত্রগুলোর ভেতরে টানাপোড়েন সৃষ্টি করা, ক্রাইসিসটাকে চূড়ান্ত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া, প্রধান চরিত্রের হতাশা, সমস্যার সমাধান প্রায় অসম্ভব দেখানো, অবশেষে ফাইনাল শো-ডাউন, আর তারপরই পরিসমাপ্তি।
ঘন ঘন টুইস্ট দেওয়ার বাতিক থাকে নতুন লেখকদের। এই প্রলোভন থেকে নিজেকে দূরে রাখাটা খুব জরুরি। এ ক্ষেত্রে ‘ম্যাজিক বুলেট’ থিওরির প্রয়োগ করা যেতে পারে। মোক্ষম একটি টুইস্টই যথেষ্ট।
মনে রাখবেন, আউটলাইন করা অনেকটা কোনো ভবনের নকশা করার মতো। এটা গল্পের ডায়াগ্রাম হিসেবে কাজ করবে। আপনার আউটলাইন যত ডিটেইল হবে, লিখতে ততটাই সুবিধা পাবেন। ডিটেইল আউটলাইন করতে হয় সময় নিয়ে। মূল গল্পটা মাথায় রেখে দিনের পর দিন ভেবে যাওয়া, ছোট ছোট ডিটেইল, ক্লু, টুইস্ট, সারপ্রাইজ টুকে রাখা, দরকার পড়লে চরিত্রগুলোর সংলাপও মাথায় চলে এলে লিখে রাখা যায়। সৃষ্টিশীল কাজগুলোর আসল উৎস স্ট্রিম অব কনসাসনেস। যখন যেটা মাথায় আসবে, টুকে রাখা তাই জরুরি। হাতের কাছে কাগজ না থাকলে সঙ্গে থাকা মুঠোফোনে রেকর্ড করে নেওয়া যেতে পারে, নইলে খুব দ্রুতই হারিয়ে যাবে এসব।
যে বিষয়টা নিয়ে লিখছেন, সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হবে। এখানে ঘাটতি থাকলে কিছুটা পড়াশোনা করে নেওয়া দরকার। অনেক সময় থ্রিলার লিখতে গেলে প্রচুর গবেষণার দরকার পড়ে, এটা অবশ্য অন্য সব লেখার বেলায়ও প্রযোজ্য। গুগল, উইকিপিডিয়া আর ইন্টারনেটের যুগে খুব সহজেই গবেষণার কাজটা করা যেতে পারে। হয়তো অনেক গবেষণা করে অনেক কিছু জেনে গেলেন, স্বভাবতই চাইবেন সেগুলো লেখার মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে। এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হয়। গবেষণার খুব কম অংশই ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। আপনি অনেক জানেন, এটা বোঝানোর দরকার নেই পাঠককে; বরং আপনি কত সুন্দরভাবে গল্পটা বললেন, সেদিকে নজর দিন। হিমশৈলীর বেশির ভাগ অংশই পানির নিচে থাকে, আপনার গবেষণারও বেশির ভাগ অংশ আপনার মাথায় থাকবে, লেখায় থাকবে তার সামান্যতম অংশ। পাঠককে জ্ঞান দিচ্ছেন, উপদেশ খয়রাত করছেন, এ রকম প্রিচিং মনোভাব থেকে বিরত থাকুন। শুধু নিজের গল্পটা বলুন। সুন্দর করে, সাবলীল ভাষায় উপস্থাপন করুন সেটি। যদি চান কিছুটা প্রিচিং করবেনই, কিছুটা জ্ঞান না দিয়ে পারছেন না, তবে সেটা প্রচ্ছন্নভাবে দিন। নইলে Large Volume Error বলে যে কথাটা প্রচলিত আছে, সেটার চোরাবালিতে পড়ে যাবেন।
ছোটগল্প আর নভেলা বাদে উপন্যাসের ক্ষেত্রে কিছু সাব-প্লটের দরকার হয়। সেগুলো যে সব সময় মূল প্লটের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে, এমন নয়। তবে খেয়াল রাখতে হয়, সাব-প্লট যেন চরিত্রগুলোর সঙ্গে অবশ্যই সম্পর্কিত থাকে। চরিত্রগুলোকে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে, এমন সাব-প্লট পাঠকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্যতা পায়। এক বা একাধিক সাব-প্লট আগে থেকে ঠিক করে নেওয়া ভালো। অনেক সময় এগুলো লেখা শুরু করার পরও চলে আসতে পারে।
চরিত্র-স্থান-প্লট, এগুলো আলাদা একটি ডায়াগ্রামে সাজিয়ে নিতে পারেন ইচ্ছে করলে। এক্ষেত্রে দেখে নিতে পারেন ‘থ্রিলারের আউটলাইন’ িশরোনামের ছকটি।
আউটলাইন করার পর বসে পড়ুন। ফরাসি লেখক অনরে দ্য বালজাক ছাড়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেউ লেখেননি, লেখেনও না। যা-ই হোক, একটি সাদা কাগজ কিংবা সাদা স্ক্রিন এখন আপনার সামনে। মাথার মধ্যে গল্প, চরিত্র আর লেখা গিজগিজ করছে। আউটলাইন বলে দিচ্ছে, কোনটার পর কোনটা লিখতে হবে। ব্যস, লিখতে শুরু করে দিন এবার।
শুরুটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক বা দুই পৃষ্ঠার মধ্যে গল্পটা শুরু করতে পারলে ভালো হয়। নইলে মুখ্য চরিত্রটাকে পরিচিত করা যেতে পারে পাঠকের কাছে। থ্রিলার উপন্যাসে একটি স্ট্যান্ডার্ড ফরমেট রয়েছে, বেশির ভাগ গল্পেই প্রথমে একটি সূচনা থাকে, তারপর কতগুলো অধ্যায়ে বিস্তৃত হয় গল্পটি। শেষে থাকে একটি পরিসমাপ্তি। তবে আপনি এটা অন্যভাবেও করতে পারেন। প্রতিটি অধ্যায়ের আলাদা আলাদা নাম দিতে পারেন, ঘটনাগুলোর সময়ানুক্রমেও সাজিয়ে নিতে পারেন অধ্যায়ের বদলে। পুরো কাহিনিটি একাধিক পর্বে বিভক্তও করা যেতে পারে। এসবই করা হয় উত্তেজনা আর রোমাঞ্চ ধরে রাখতে, বাড়িয়ে তুলতে।
অনেকটা লেখার পর হঠাৎ করে হয়তো অনুভব করলেন, যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন সেভাবে এগোচ্ছে না; গল্পটা অন্যদিকে মোড় নিয়ে ফেলেছে; যে চরিত্রগুলো কল্পনা করেছেন তার বাইরেও কিছু চরিত্রের আবির্ভাব ঘটছে। আবার ঠিক করে রাখা কিছু চরিত্র হারিয়ে গেছে গল্প থেকে। এ রকম পরিস্থিতিতে পড়লে বিচলিত না হয়ে বরং খুশি হওয়া উচিত। জেনে রাখবেন, এ রকম ঘটনা কেবল তখনই ঘটে, যখন লেখাটা দাঁড়িয়ে যায়, গল্পটি জীবন্ত হয়ে ওঠে। এ রকম ‘অপ্রত্যাশিত চরিত্র’ মোটেও অযাচিত নয়। অনেক সময় এগুলোই হয়ে উঠতে পারে গল্পটির অন্যতম শক্তিশালী, আগ্রহোদ্দীপক কিংবা কেন্দ্রীয় চরিত্র।
চরিত্রের কথা যখন উঠল, তখন আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। আপনার প্রধান চরিত্রটি অবশ্যই হতে হবে আকর্ষণীয়। গ্ল্যামার অর্থে নয়; বরং আগ্রহোদ্দীপক, মজার, শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব কিংবা নাছোড়বান্দা হিসেবে। প্রধান চরিত্র অর্থাৎ প্রোটাগনিস্ট ছাড়াও পার্শ্বচরিত্রগুলোকে আকর্ষণীয় করলে গল্পটি যেমন প্রাণবন্ত হয়, তেমনি লেখায়ও আসে বৈচিত্র্য।
আপনার লেখা যখন শেষ হবে, তখনই শুরু হবে আসল কাজ। এটা অনেকটা ভিজ্যুয়াল মিডিয়া কিংবা চলচ্চিত্রের পোস্ট-প্রোডাকশনের মতো। নিজের লেখাটা পড়ুন বারবার, অসংখ্য ভুল আর অসংগতি চোখে পড়বে—বানান বিভ্রাটের মতো সাধারণ ভুল থেকে শুরু করে কাহিনির অসংগতি, প্লট হোল, সময়ের গোলমাল, চরিত্রগুলোর বিন্যাস, সংলাপ, সম্বোধনে সমস্যা, রিপিটেশন, স্ববিরোধিতা ইত্যাদি ছাড়াও ‘স্পয়লার’ নামের বেফাঁস কিছু গল্পটার সব রহস্য আর কৌতূহল নষ্ট করে দিতে পারে। এগুলো চিহ্নিত করে পরিমার্জন করতে হবে। দরকার হলে কিছু অংশ আবার লিখতে হবে। নিজের লেখা নির্মেদ করার ব্যাপারে একটু কঠোর হতেই হয়। অপ্রয়োজনীয় মনে হলেই বাদ দিয়ে দিতে কার্পণ্য করা ঠিক হবে না। প্রথম ড্রাফট অনেকটা খনি থেকে খুঁজে পাওয়া হিরের মতো। ওটাকে কাটছাঁট করে পলিশ করতে হয়। সম্ভব হলে, তিন-চারটা ড্রাফট করা যেতে পারে। একাধিক ড্রাফটের পর নিজেই বুঝতে পারবেন, প্রকাশের জন্য আপনার লেখাটা উপযুক্ত হয়েছে কি না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে আপনাকে শুভেচ্ছা। আর না হলে ভেঙে পড়ার কিছু নেই। হাল ছেড়ে না দিয়ে আরও লিখতে শুরু করে দিন। প্রচুর পড়ুন। পড়ুন আর লিখুন। মনে রাখবেন, ব্যর্থতা একটি পথ, যে পথের শেষে থাকে সফলতা।
সবশেষে বলব, থ্রিলার গল্প লেখা অনেকটা নিজের সঙ্গে নিজে দাবা খেলার মতো। তবে পার্থক্য হলো, এখানে সাদা-কালো ঘুঁটিগুলো জীবন্ত! কম-বেশি তাদেরও নিজস্ব কিছু সামর্থ্য রয়েছে। আপনি চাইলেও সব সময় তাদের ইচ্ছেমতো পরিচালনা করতে পারবেন না। কখনো কখনো তারাও আপনাকে বাধ্য করবে তাদের মতো করে চলতে। সব ধরনের সৃষ্টির সঙ্গে স্রষ্টার সম্পর্ক হয়তো এমনই হয়।
থ্রিলারের আউটলাইন
চরিত্র স্থান-কাল প্লট
প্রধান ও পার্শ্ব চরিত্রগুলো ঘটনাগুলোর স্থান ও সময়কাল প্লট ও সাব-প্লট