পাথর সে কী করে কাঁদবে
কী নিঃসঙ্গ একটা উলঙ্গ নদী!—জল খোঁজে চাতকের চোখে;
অপেক্ষা অনেক দূরে কী করুণ কাতর ভঙ্গিতে বসে আছে
ওই নীল মেঘকুঞ্জে, নক্ষত্রের নির্ঘুম আভায় কুপি হাতে
কে হাটে আলোর নিচে অন্ধকারে যৌবনের খাটিয়া বিছিয়ে?
যে যাবার সে গেছে পাথর বুকে নৈঃশব্দ্যের রুমাল ওড়াতে:
গেরুয়া বসন গায়ে নগ্ন পায়ে একা হাঁটে চাঁদের বাউল,
কেউ কি এখন আর তার ঘর ভালোবেসে ফিরিয়ে দেবে না?
যে নারী উদোম চরে ধরে রাখে আষাঢ়ের জলের ছলনা
সে কেন নদীর মতো উড়ে গিয়ে বসে আছে পাহাড়-চুড়োয়?
অরণ্যের অস্তাচলে সূর্য তাকে চুমো দিয়ে জাগিয়ে তুলেছে,
উজানে পাতাল থেকে উঠে আসে কামাতুর মাতাল প্রহরী:
যে ফুলে মধুর ঘ্রাণে মৌমাছির ঘুম ভাঙে পাতার শয্যায়
কে দেবে কবির হাতে সেই ফুল, নগ্নিতার কুসুম মিনার—
বসন্ত ছুঁয়েছে যাকে ও কোকিল! তাকে তুমি জাগাতে যেও না।
২.
যে বৃক্ষে প্রেমের বাসা তার মূলে জল নেই মাটির আঁজলায়,
কবে যে ফুরিয়ে গেছে বাঁকা স্রোতে প্রেমাঞ্জনা নদীর সঞ্চয়;
কে কাঁদে পাথর মুখে শূন্যতায়?...মরুভূমি যার বুকে থাকে!
পোড়া মন চোরা পথে পাড়ি দেয় অনন্তের দীর্ঘ মায়াসাঁকো
আজন্ম যে প্রেমে ব্যর্থ আজ তার কান্নাগুলো জমতে জমতে, দ্যাখো
কী করে ঝর্ণার মতো নিরন্তর নেমে আসছে হৃদয়ের খাদে—
যে যাচ্ছে ঘুমের ঘরে তার হাতে কেউ আর গোলাপ দেবে না।
হালভাঙা নৌকাখানি পূর্ণিমায় পড়ে আছে যাত্রীহীন ঘাটে
সময় শিকারি ওই ঘুণপোকা এই দেহকাঠ খেয়ে বাঁচে;
আমারই আয়ুর তেলে বাতি জ্বেলে কে তাড়ায় নিজের আন্ধার?
যে আমারে ঘৃণা করে আমি তারে ভালোবেসে মাতাল হয়েছি,
আগুনের জামা গায়ে তার জন্য কতদিন নরকে নেমেছি—
তবু সে বাসেনি ভালো অধমের গন্ধহীন বিদীর্ণ নিখিল—
পাথর সে কী করে কাঁদবে, তার চোখে আগুন জ্বলে না।