বাতাবি লেবুর ফলন যেভাবে বাম্পার হবে...

অলংকরণ: এস এম রাকিবুর রহমান

বাতাবি লেবু ফল হিসেবে খুবই উপকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে, এতে মানবশরীরের প্রভূত উপকার সাধিত হয়ে থাকে। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই এতদঞ্চলের বাসিন্দা হিসেবে আমরা বুঝতে পারছি যে বাতাবি লেবুর চাষও নিরুপদ্রবে বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত সহায়ক। এবার আসুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে বাতাবি লেবুর ফলন ‘বাম্পার’ হবে।

প্রথমেই আপনারা জিজ্ঞেস করতে পারেন যে বাতাবি লেবুর চাষ কেন প্রয়োজন? উত্তরে বলি, পৃথিবীতে সবকিছুর সোজা উত্তর পাওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে অনুভূতি শক্তির তীব্রতা বাড়াতে হয়। সুতরাং অনুভব করতে শিখতে হবে আগে। বুকে হাত রাখুন, চোখ বন্ধ করুন। ও হ্যাঁ, মুখটাও বন্ধ রাখতে হবে। এবার বাতাবি লেবু চাষ নিয়ে ভাবতে থাকুন। মনে-মগজে শুধু একটাই ভাবনা আনতে হবে। তা হচ্ছে বাতাবি লেবু। এবার বলুন তো, নির্ভয়ে বুকভরে শ্বাস নিতে পারছেন? বাতাবি লেবুকে কি বিশ্বকাপ ফুটবলের গোল্ডেন বলের মতো চকচকে ও আরাধ্য মনে হচ্ছে?

উত্তর যদি ইতিবাচক হয়, তবে বুঝে নিতে হবে, বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন ফলানোর মতো মানসিক স্থিরতা আপনার চলে এসেছে। আর যদি জবাব নেতিবাচক হয়, তবে হতাশ সুরে বলতেই হচ্ছে, জীবন কখনো কুসুমাস্তীর্ণ নয়—এটি বোঝার সময় আপনার চলে এসেছে।

আহা, মুখ অমন পাংশু করার কিছু নেই। মনে রাখবেন, বাতাবি লেবুর ফলনের ‘মাহাত্ম্য’ বোঝার পথ অতটা দুর্গম গিরি কান্তার মরু নয় হে। পথে কাঁটা আছে সত্যি, তবে শুরুতেই কাঁটার ঘায়ে মূর্ছা গেলে এবং কাঁটার ভয়কে মনে স্থান দিতে পারলেই বাকিটা পথে পাবেন গোলাপের স্নিগ্ধতা!

বাতাবি লেবুর স্নিগ্ধতাও কিন্তু কম নয়। বাইরেটা একটু শক্তমতো হলেও ভেতরটা রসাল। ছোটবেলায় একে আমরা অনেকেই জাম্বুরা নামে চিনতাম। তখন ফুটবলের বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার ছিল বহুল প্রচলিত। তুলনামূলকভাবে কিঞ্চিৎ ভারী হওয়ায় লাথি দিয়ে একে গোলবার পার করা কিছুটা কঠিনই ছিল বটে! কখনো কখনো জোরে কিক মারতে গিয়ে জাম্বুরা ফাটিয়ে ফেলার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই অনেকের আছে।

এই অভিজ্ঞতা মাথায় রেখেই মনে রাখবেন যে মাথার দাম জীবনের চেয়ে বেশি নয়। সুতরাং মাথা বেশি খাটানোর কোনো প্রয়োজন আপাতত বঙ্গদেশে নেই এবং যখনই মাথা খাটানো ও ঘাঁটানো বন্ধ করে দেবেন, তখনই বাতাবি লেবু, তথা জাম্বুরার বাম্পার ফলন আপনার দুহাতে ধরা দিতে বাধ্য। মনে রাখবেন, ফলন বাম্পার না হলে আপনার অবস্থাও হতে পারে এর-ওর পায়ের লাথি খেয়ে মাঠময় ঘুরে বেড়ানো জাম্বুরার মতো। অবস্থা বেশি বেগতিক হলে তা কিন্তু ফেটেও যেতে পারে!

খেয়াল করলে দেখবেন, এ লেখায় বারকয়েক ‘মনে রাখবেন’ শব্দবন্ধটি উল্লেখ করা হচ্ছে। এর কারণ হলো, বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলন নিশ্চিত করতে হলে কিছু ব্যাপার ‘মনে রাখা’ বা সতর্ক থাকা বেশি দরকার। আসলে এ ক্ষেত্রে মাথায় রাখার তেমন কিছু নেই। তাই মনে রাখার কথাগুলো মাথায় নিতে কখনোই বলিনি। বরং মাথার ব্যবহার যত কম করবেন, তত ভালো। কথায় আছে, ‘অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা।’ কিন্তু মস্তিষ্কই যদি না থাকে, তবে শয়তান কারখানা বানাবে কোথায়?

এই ‘শয়তান’ কর্তৃপক্ষভেদে নানা ধরনের হয়। মানে একেক কর্তৃপক্ষের একেক সংজ্ঞা। তবে রূপ ভিন্ন হলেও সারবস্তু এক। আমরা এখানে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কথা বলছি। ওই যাদের কারণে বাতাবি লেবু চাষ করতে হচ্ছে আরকি!

এই যে, মুখে মিচকি হাসি কেন? না না, আমার কথার অন্য কোনো অর্থ করবেন না। আমি এখানে বাতাবি লেবুর বাম্পার ফলনের উপায় বলতে এসেছি। আশা করি, কিছুটা বোঝাতেও পেরেছি। যদি বুঝে ফেলে থাকেন, তবে মনের বাগানে এক্ষুনি একটি বাতাবি লেবুর গাছ লাগিয়ে ফেলুন। একদিন নিশ্চয়ই তাতে লেবু ঝুলবে, আর দুলবে আপনার ‘নিষ্প্রয়োজন’ মাথা—এবং অবশ্যই শান্তিতে!