বিরলতম সুকর্মের স্বাক্ষর 'মিত্রাক্ষর'

মিত্রাক্ষর—মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
মিত্রাক্ষর—মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান

মিত্রাক্ষর—মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান
প্রকাশক: অনন্যা প্রকাশকাল: ২০১৩
প্রচ্ছদ: সমর মজুমদার
দাম: ৫৫০ টাকা পৃষ্ঠা: ৪৬০
অমিত্রাক্ষর ছন্দ বা পরবর্তীকালে ফ্রি ভার্স বা মুক্তছন্দের আবির্ভাব বাংলা কাব্যসাহিত্যে নিশ্চিতই এক বৈপ্লবিক ঘটনা। কবিতার ছন্দমুক্তি এ ক্ষেত্রে নতুন এক জোয়ার আনলেও মিত্রাক্ষর ছন্দের কবিতা বা কাব্যকলার কি বিলুপ্তি ঘটেছে? ঘটেনি। ঘটার আশঙ্কাও নেই। রবীন্দ্রনাথ তো যথার্থই বলেছেন, ‘মিলটা মনের ওপর ঘা দেয়, তাহাকে বাজাইয়া তোলে, একটা শব্দের পরে ঠিক তাহার অনুরূপ আর একটা শব্দ পড়িলে সচকিত মনোযোগে ঝংকৃত হইয়া উঠে...।’
এবং সত্যি বলতে কী রবীন্দ্রনাথের উল্লিখিত উদ্ধৃতির অনুসরণে যখন অন্ত্যমিলের এই শব্দকোষ মিত্রাক্ষর আদ্যন্তপাঠে মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করি, তখন রীতিমতো ঘোরের দশায় আক্রান্ত হই। বাংলা ভাষা যে বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও শক্তিশালী ভাষাগুলোর একটি, একজন কৌতূহলী অগবেষক পাঠকও এই কোষগ্রন্থের পাঠ শেষে সহজেই তা অনুধাবন করতে পারবেন। এই সংকলন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, বাংলা ভাষার শব্দ বা শব্দবন্ধের ভান্ডার আকাশচুম্বী হতে পারার ক্ষমতাধর। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান কৃত মিত্রাক্ষর শব্দের প্রায় সার্বিক পরিচয়বাহী এই কোষগ্রন্থ বা অভিধানের বৈশিষ্ট্য এখানেই যে, যে বিশেষ প্রকরণে তিনি অভিধানটির সংকলন বা সম্পাদনার কাজ শেষ করেছেন, তা রীতিমতো বিস্ময়-জাগানিয়া। বস্তুত অন্যান্য ভাষায় এ জাতীয় অভিধানের অস্তিত্ব থাকলেও, আমাদের ভাষায় এত দিন তা ছিল না। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সদ্যই প্রথম সে কাজটি সম্পন্ন করে আবার অগ্রচারীর মর্যাদার অধিকারী হলেন, যেমনটা হয়েছিলেন বাংলা ভাষায় প্রথম সমার্থ শব্দকোষ প্রণয়ন করে।

প্রশ্ন তো উঠতেই পারে, লেখকও প্রশ্ন তুলেছেন, এ অভিধান কীভাবে কার কাজে লাগবে? এর জবাবে সোজাসাপটা বলা যায়, অভিনিবেশসহকারে যাঁরা বাংলা ভাষা চর্চায় নিরত, তাঁদের প্রত্যেকের কাজে লাগবে এই শব্দকোষ বা অভিধান। যেমন অন্ত্যমিল রয়েছে, এমন শব্দের একটি গুচ্ছের সন্ধান যদি আমরা সাধারণ বাংলা অভিধানে খুঁজতে যাই, তাহলে পাতার পর পাতা উল্টাতে রীতিমতো গলদঘর্ম হতে হবে। কিন্তু এই শব্দকোষ বা অভিধানে আমরা অন্ত্যমিলের একগুচ্ছ শব্দ ঠিক জায়গামতো বিন্যাসিত দশায় পেয়ে যাচ্ছি। যেমন: আবর্ত আম্রাবর্ত আর্যাবর্ত ইলাবর্ত উদরাবর্ত কৈবর্ত ঘূর্ণাবর্ত জলাবর্ত ঝটিকাবর্ত কঙ্কাবর্ত তৃণাবর্ত দক্ষিণাবর্ত পরিবর্ত প্রত্যাবর্ত বর্ত্ম বাতাবর্ত বাত্যাবর্ত বামাবর্ত ব্রহ্মাবর্ত সংবর্ত সূর্যাবর্ত। অভিধানজুড়ে এমন শব্দগুচ্ছের ছড়াছড়ি। বস্তুত এটি অন্ত্যমিলের বা মিত্রাক্ষরের শব্দকোষ হলেও, অভিধান যাঁরা ঘাঁটেন, তাঁরাই দেখবেন, অন্ত্যমিলযুক্ত উল্লিখিত শব্দগুলো কত বিচিত্র ভাবপ্রকাশী! কেউ যদি এসব শব্দ থেকে বাছাই করে সমিল বা অনুপ্রাসঋদ্ধ কবিতা বা গদ্য বাক্যবন্ধ রচনা করতে চান, অনায়াসে তা করতে পারেন; কেউ যদি চান, বাংলা শব্দভান্ডারে একই ধাঁচের কত শব্দ আছে, তার হদিস করতে চাইলেও তিনি তা করতে পারেন। কিংবা একই অন্ত্যমিলের দুই বা তিনটি শব্দ বাছাই করে দেখতে পারেন—তিনটি শব্দই কত বিচিত্র ভাবপ্রকাশক। কোনোটির সঙ্গে পুরাণ জড়িত, কোনোটির সঙ্গে সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস, কোনোটি নিছক ভাব বা ভাবনাগত অর্থের দ্যোতক।

এই শব্দকোষের ব্যবহারবিধিও নির্দেশ করেছেন মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান। তাতে আগ্রহী পাঠক ও গবেষক মাত্রেই সহজেই বুঝে যাবেন, কীভাবে অগ্রসর হতে হবে এই শব্দকোষে আহূত ও বিন্যাসিত শব্দ বা শব্দগুচ্ছের পাঠে।

এই আলোচনার শুরুতে রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতির উল্লেখ করেছিলাম এ কারণে যে এই অন্ত্যমিল শব্দকোষ সত্যিই প্রমাণ করবে যে মিত্রাক্ষর বা অন্ত্যমিলের ব্যবহার আমাদের প্রাত্যহিক জীবন ও সাহিত্যের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বা উপজীব্য বলে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রণীত এই অভিধান আমাদের ভাষা-গবেষণার ক্ষেত্রে একটা মাইলফলকস্বরূপ ঘটনা হয়ে উঠেছে এবং এই উচ্চারণে বাহুল্যের অবকাশ নেই।

গবেষক মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে আন্তরিক অভিনন্দন এ রকমের একটি বিরল অথচ পরিশ্রমসাধ্য কাজ এই বয়সে এসে সমাধা করার জন্য।

মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: অন্তর্বাস্তবতা বহির্বাস্তবতা

লেখক: আবদুল মান্নান সৈয়দ

প্রচ্ছদ ও অলংকরণ: কাইয়ুম চৌধুরী

প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন

দাম: ৪০০ টাকা

আবদুল মান্নান সৈয়দ আমাদের হাতেগোনা সেই গবেষকদের একজন, যাঁদের যেকোনো রচনার পাঠই খুলে দেয় চিন্তার নতুন নতুন দিগন্ত। তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়: অন্তর্বাস্তবতা বহির্বাস্তবতা বইয়ের পরতে পরতে তারই ছাপ আঁকা। মোট তিনটি অধ্যায়ে বিভক্ত এ বইয়ের বিষয়-বিভাগই জানান দেবে, কী গভীর অন্তর্ভেদী মান্নান সৈয়দের গবেষক-মন ও মননের দৃষ্টি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের বিচারে মান্নান সৈয়দ যে অনুপুঙ্খ বিচারশৈলীর পথ গ্রহণ এবং যেসব সূত্র থেকে তথ্য আহরণ করেছেন, এক অর্থে তা বিস্ময়কর!

গল্প সপ্তদশ

লেখক: ঝুম্পা লাহিড়ী

অনুবাদ: কমালিকা মিত্র ও পায়েল সেনগুপ্ত

প্রকাশক: আনন্দ পাবলিশার্স

দাম: ৮০০ টাকা

গল্প সপ্তদশ পুলিৎজার পুরস্কার পাওয়া ভারতীয় বংশোদ্ভূত লেখক ঝুম্পা লাহিড়ীর গল্প সংকলন। ‘বেদনার ভাষ্যকার’ ও ‘অপরিচিত ভূমি’—এই দুই পর্বে মোট ১৭টি গল্প নিয়ে এই বই। গল্পকারের জন্ম, বেড়ে ওঠা যেহেতু লন্ডনে, তাই প্রথম পর্বের গল্পগুলোতে ফুটে উঠেছে প্রবাসী ভারতীয় জীবনের অসামান্য চিত্র। বংশপরম্পরায় প্রাপ্ত কিন্তু আজন্মলালিত দেশীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ নতুন ভিন্নতর জীবনযাপনের নিত্য সংঘর্ষই এ গল্পগুলোর প্রতিপাদ্য। আবার দ্বিতীয় পর্বের গল্পে ধরা দিয়েছে দৈনন্দিন জীবনের নানা নাটকীয়তা। বইটিতে ঝুম্পা লাহিড়ীর বিভিন্ন পর্বের গল্প একসঙ্গে পড়তে পারবেন পাঠক।