বেলুনে চড়ে ওড়া

আমরা বলি ‘গ্যাস বেলুন’। কী মজার একটা জিনিস! হাত থেকে ফসকে গেলেই মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আকাশের দিকে ছুটে যায়। লাল, হলুদ, সবুজ বেলুনগুলো যখন নীল আকাশে বিন্দু হয়ে মিলিয়ে যেতে থাকে, কী দারুণ লাগে দেখতে! জাদুটা আসলে হিলিয়াম গ্যাসের। বাতাসের চেয়ে হালকা বলে হিলিয়াম বেলুনগুলো বাতাসের ওপরের স্তরে থাকতে চায়।

বিভিন্ন কার্টুন কিংবা চলচ্চিত্রে তোমরা হয়তো দেখেছ, একঝাঁক হিলিয়াম বেলুন কেমন করে আস্ত একটা মানুষকে উড়িয়ে নিয়ে যায়। এটা কি সত্যিই সম্ভব?
উত্তরটা হলো—হ্যাঁ! কিছু মানুষ ইতিমধ্যেই হিলিয়াম বেলুনের সঙ্গে আকাশ ঘুরে এসেছেন! তাঁদের মধ্যে একজন জনাথন ট্রেইপ। স্কুলে ‘আমার শখ’ রচনায় তোমরা যেমন বাগান করা, ডাকটিকিট জমানো—এসব লেখো, ট্রেইপ সম্ভবত লিখতেন ‘বেলুনে ওড়া’! হুম্, বেলুনের সঙ্গে উড়াল দেওয়াটা তাঁর শখই বটে। এই তো কিছুদিন আগেও এক কাণ্ড ঘটিয়েছেন। অফিসের চেয়ারে বসে বসে ঝিমোতে আর ভালো লাগছিল না। তাই ৩৭০টি হিলিয়াম বেলুনের সঙ্গে চেয়ারসুদ্ধ উড়াল দিয়েছিলেন তিনি! লক্ষ্য ছিল, বেলুনের সঙ্গে উড়ে আটলান্টিক সাগড় পাড়ি দেওয়া। খারাপ আবহাওয়ার জন্য পুরোটা পাড়ি দিতে ব্যর্থ হলেও, জানা গেছে, ট্রেইপ ‘একবার না পারিলে দেখো শতবার’ নীতিতে বিশ্বাসী! আবারও উড়াল দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। জেনে অবাক হবে, ট্রেইপ একা নন, এর আগে এমন প্রচেষ্টা চালিয়েছেন আরও ১২ জন। যাদের মধ্যে দুজন আটলান্টিক পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। তবে বেলুনে চড়ে সবচেয়ে বেশি পথ পাড়ি দেওয়ার রেকর্ডটি ট্রেইপেরই। ইতিপূর্বে, একঝাঁক বেলুনের সঙ্গে ১০৯ মাইল পথ পাড়ি দিয়েছেন তিনি।
এ তো গেল বেলুনে চড়ে মানুষের ওড়ার খবর। কিন্তু আস্ত একটা বাড়িসুদ্ধ বেলুনের সঙ্গে উড়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে! অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র ‘আপ’ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই প্রয়াস চালিয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল। তাদের হাউ হার্ড ক্যান ইট বি অনুষ্ঠানের জন্য একটি বাড়িসুদ্ধ আকাশে ওড়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। বাড়ি নিয়ে এই ‘বাড়াবাড়ি’ করতে এক দল বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও বেলুন পাইলট কাজ করেছেন রাত-দিন। অবশেষে ১০ হাজার ফিট ওপরে তাঁরা প্রায় এক ঘণ্টা কাটিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, এক ঘনফুট আয়তনের হিলিয়াম গ্যাস প্রায় ৩০ গ্রাম ওজন বহন করতে সক্ষম। তুমি যদি বেলুনে চড়ে উড়াল দিতে চাও, সে ক্ষেত্রে কয়টি হিলিয়াম বেলুনের প্রয়োজন হবে, চাইলে হিসাব করে দেখতে পারো!
মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও ডগোনিউজ