রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর অগ্রন্থিত কবিতা

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬–২১ জুন ১৯৯২
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ১৬ অক্টোবর ১৯৫৬–২১ জুন ১৯৯২

রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর এই কবিতাটি ছাপা হয়েছিল ১৯৮৭ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের অনিয়মিত প্রকাশনা স্ফুলিঙ্গতে। পত্রিকাটি সম্পাদনা করেছিলেন পিংকু ভট্টাচার্য (পিনাকী ভট্টাচার্য)। ‘শিকল’ শিরোনামের কবিতা প্রসঙ্গে জানা যায়,স্ফুলিঙ্গ-এর জন্য রুদ্রর কাছে কবিতা চাইলে তিনি তাঁর ডায়েরি থেকে পাতা ছিঁড়ে কবিতাটি দিয়েছিলেন তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী অসিত বর্ধনের হাতে। সংগত কারণে তাঁর কবিতার খাতায় এটি আর পাওয়া যায়নি। এই কবিতার জন্য সে সময় ১০০ টাকা সম্মানী দেওয়া হয়েছিল কবিকে। পাঠানো হয়েছিল পত্রিকাও। কিন্তু রুদ্রের ব্যক্তিগত সংগ্রহ তেমনভাবে সযত্নে রক্ষিত না হওয়ায় অনেক কবিতার মতো হারিয়ে গিয়েছিল এটিও। 
সম্প্রতি অন্য একটি পত্রিকা খুঁজতে গিয়ে পুরোনো পত্রিকার বান্ডিলের মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেল কবিতাটি। গত শতাব্দীর মধ্য আটের দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন যখন তুঙ্গে, রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সেই সময় হয়ে উঠেছিলেন এই আন্দোলনের কাব্যিক মুখপাত্র। এই কবিতাতেও খুঁজে পাওয়া যাবে সেই ছাপ। গতকাল ১৬ অক্টোবর ছিল রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্মদিন। এ উপলক্ষে ছাপা হলো অগ্রন্থিত এই কবিতাটি।

অলংকরণ: অশোক কর্মকার
অলংকরণ: অশোক কর্মকার

শিকল
ওই আঁটসাঁট ছোট জামাটা আমার গায়ে
পরাবার চেষ্টা কোরো না।
আমাকে থাকতে দাও ঢিলে-ঢোলা
আমাকে খোলামেলা থাকতে দাও।

সমুদ্র থেকে উঠে আসছে যে নদী
পাখির মতো ডানা মেলে,
আমাকে সে নদীর মতো থাকতে দাও অফুরন্ত,
স্রোতের মতো প্রাণবান থাকতে দাও আমাকে।

চার দেয়ালের ভেতরে আমি ছিলাম
আমি ওই বদ্ধ জলাশয়েও ছিলাম
আমি ছিলাম কবরের সুপ্রাচীন অন্ধকারে,
গতিহীনতার কারাগার আমাকে
টুকরো টুকরো করে ছিঁড়েছে।

ফিরতে বোলো না।

আমাকে থাকতে দাও স্রোতময় জলের মতন,
আমাকে থাকতে দাও জোয়ারে ভাটায়
আমাকে থাকতে দাও পতনে উত্থানে—
ওই আঁটসাঁট জামা আমাকে পরতে বোলো না।

সংকীর্ণ আস্তিনে আমার 

বাহু দুটি আটকা পড়ে যায়,
আমি পাখা মেলতে পারি না।
আমি নিঃশ্বাস নিতে পারি না।