শান্তশিষ্ট ‘লেজবিশিষ্ট’ সত্যজিৎ!

সত্যজিৎ রায় শৈশবে খুব শান্তশিষ্ট ছিলেন, তাঁর অন্য বন্ধুদের মতো এতটা ডানপিটে ছিলেন না। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর তাঁর বন্ধুরা তাই সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করেনি। তারা সত্যজিতের নাম দেয় ‘শান্তশিষ্ট’, যারা আবার আরও এক কাঠি ওপরে, এই ‘শান্তশিষ্ট’-এর সঙ্গে তারা জুড়ে দেয় ‘লেজবিশিষ্ট’। সত্যজিৎ অবশ্য এগুলোকে খুব একটা পাত্তা দিতেন না, তা না হলে কি এসব কথা নিজের বইয়ে লিখতেন। হ্যাঁ, স্কুলে গিয়ে তিনি তাঁর মূল নামই হারিয়ে ফেলেছিলেন, সবাই তাঁকে চিনত ‘মানিক’ নামে।

স্কুলশিক্ষকেরাও তাঁকে নিয়ে মাঝেমধ্যে রসিকতা করতেন। স্কুলে সত্যজিৎ রায়ের নানাবিধ পরিচয় যখন একটা একটা করে প্রকাশ হতে শুরু করল—যেমন তাঁর বাবা খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়, দাদা উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, তখন তিনি পড়লেন মহাবিপাকে। এর কিছুদিন পর প্রকাশ পেল বিখ্যাত ক্রিকেটার কার্তিক বোস তাঁর কাকা। আবার তিনি ছিলেন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কনক দাশের ভাগনেও বটে। তো সত্যজিতের এই বহুমুখী পরিচয়, তথা তাঁর পারিবারিক পরিচয় নিয়ে ঠাট্টা করতেই একদিন এক শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে দাঁড় করালেন সত্যজিৎকে। বললেন, তোমার আত্মীয়স্বজন তো সবাই খ্যাতিমান। পঞ্চম জর্জ তোমার কী হয়, দাদু নাকি! সত্যজিৎ অবশ্য বিষয়টা হালকাভাবেই নিলেন! হেসেই উড়িয়ে দিলেন।

আরেকটি মজার ঘটনা সত্যজিৎ রায় উল্লেখ করেছেন তাঁর আত্মস্মৃতিমূলক এক বইয়ে। ঘটনাটি এমন, শৈশবে একবার তাঁকে বাটি ভরে আইসক্রিম দেওয়া হলো। কিন্তু তিনি মুখে দিয়ে যখন অনুভব করলেন ঠান্ডায় দাঁত শিরশির করছে, তখন আইসক্রিম গরম করে আনতে বললেন। এ নিয়ে বড় হয়ে প্রচুর ঠাট্টামশকরা শুনতে হয়েছিল সত্যজিৎকে।

সূত্র: সত্যজিৎ রায়ের যখন ছোট ছিলাম

গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন