শামসুর রাহমানের আদমজী পুরস্কার নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি

>

শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯—১৭ আগস্ট ২০০৬)। ছবি: নাসির আলী মামুন
শামসুর রাহমান (২৩ অক্টোবর ১৯২৯—১৭ আগস্ট ২০০৬)। ছবি: নাসির আলী মামুন

কবি–লেখক–সাহিত্যিকদের জীবন নানা ঘটনায় ভরপুর। তার মধ্যে যেমন হাস্যরস ও আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা আছে, রয়েছে বিষাদমুখর ঘটনাও। আবার অপ্রত্যাশিত, চমকে দেওয়ার মতো ঘটনাও কম নেই তাঁদের জীবনে। এই নতুন বিভাগে আমরা প্রকাশ করব কবি–লেখকদের জীবন থেকে নেওয়া নানা ঘটনা।

১৯৬৩ সালে কবি শামসুর রাহমানের দ্বিতীয় কবিতার বই রৌদ্র করোটিতে প্রকাশিত হয় নাট্যকার মুনীর চৌধুরীর উদ্যোগে। কীভাবে বইটি বের হলো, তা নিজের হাতেই লিখে গেছেন শামসুর রাহমান। তাঁর বিবরণ থেকে জানা যায়, মুনীর চৌধুরী যে সময় লেখক সংঘের প্রধান, আবদুল বারী চৌধুরী তখন লেখক সংঘের দপ্তরে চাকরিরত। এই বারী চৌধুরীই তাগাদা দিয়ে কবির কাছ থেকে পাণ্ডুলিপিটি নেন। এই বইয়ের জন্য পরে আদমজী পুরস্কার পান শামসুর রাহমান। সে কাহিনিও তিনি লিখে গেছেন আত্মজীবনীতে। সেই সূত্রে জানা যায়, আবদুল বারী চৌধুরীর উদ্যোগেই পুরস্কারের জন্য জমা দেওয়া হয় রৌদ্র করোটিতে এবং সেটি পুরস্কারও পেয়ে যায়। কিন্তু এ ঘটনায় বেজায় অখুশি ছিলেন তখনকার লেখকদের কেউ কেউ।

একদিন দুপুরে আজিমপুরে শামসুর রাহমানকে দাঁড় করান যুবক সালেহ চৌধুরী। তিনি তাঁকে জানান যে কয়েকজন সাহিত্যিক উঠেপড়ে লেগেছেন, যাতে তিনি আদমজী পুরস্কারটি না পান। রাহমানকে এ ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলেন তিনি। এ সময় রাহমান তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে তাঁর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয় এ ব্যাপারে।

পর দিন দৈনিক ইত্তেফাক-এর ভেতরের পাতায় ছাপা হয় বেশ কয়েকজন প্রবীণ ও নবীন সাহিত্যিকের বিবৃতি। বিবৃতির হেতু একটিই—শামসুর রাহমানকে যেন না দেওয়া হয় এ পুরস্কার। বইটি থেকে আপাত-আপত্তিকর কয়েকটি পঙ্​ক্তিও তাঁরা যুক্ত করেন ওই বিবৃতিতে। রাহমান আহত হয়েছিলেন এসব দেখে। লেখকেরা যে এমন নোংরামি করতে পারেন, তাঁর কল্পনাতেও ছিল না সেটি।

তবে এত কিছু করেও আটকানো যায়নি শামসুর রাহমানের আদমজী পুরস্কার। তিনি এবং শহীদুল্লা কায়সার ১৯৬৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের হাত থেকে এ পুরস্কার নেন। মজার ব্যাপার হলো আইয়ুবের বিরুদ্ধে লেখা ‘হাতির শুঁড়’ নামের কবিতাটি রৌদ্র করোটিতে বইয়েই ছিল।

এমন আরেকটি ঘটনাই ঘটেছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং ওয়ার্কশপে আমন্ত্রণ পাওয়ার সময়ও। আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পল এঙ্গেলসের কাছে তখন বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন সাহিত্যিক বদনাম করেছিলেন সুনীলের। তাঁদের কিন্তু আইওয়াতে আমন্ত্রণ পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না। কারণ, এঙ্গেলস ত্রিশের কাছাকাছি বয়সের লেখক খুঁজছিলেন।

সূত্র: শামসুর রাহমানের আত্মজীবনী কালের ধুলোয় লেখা ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের অর্ধেক জীবন।

গ্রন্থনা: রাসেল রায়হান