শাহবাগে বাংলা বসন্ত

ফেব্রুয়ারি ২০১৩। একাত্তরের এক যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায়কে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে উঠল শাহবাগ। তারুণ্যের সেই অভূতপূর্ব জাগরণের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে পরবর্তী সময়ে বেরিয়েছে বেশ কিছু বই। সেখান থেকে নির্বাচিত কিছু বই নিয়ে এ আয়োজন
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জাতীয় জীবনে এক বিরাট ঘটনা। তখন থেকে চালু হয়েছে কিছু শব্দ বা প্রপঞ্চ। যেমন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ বা বিপক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি। এই শব্দাবলির প্রকৃত অর্থ কী, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
আমি যখন মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র প্রতিরোধপর্বে শামিল হই, আমার বয়স তখন ১৯। সুতরাং আমি মনে করতেই পারি, একটা একাডেমিক সেশন নষ্ট হবে বলে যারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করেছিল, পরীক্ষা দিয়েছিল, ঘরের কোণে চুপটি করে বসে ছিল, আমার প্রজন্মের সেই সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি। আমার মতে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হচ্ছে সেই আকাঙ্ক্ষা, যা একজনকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রণোদনা দেয়। ওই সময় যারা ছিল শিশু কিংবা যাদের জন্ম হয়নি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সঞ্চারিত করার বিষয়টি তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক ও জরুরি; তারাই হতে পারে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অথবা বিপক্ষের শক্তি। এটা আমার প্রজন্মের জন্য প্রযোজ্য নয়। আমার প্রজন্মের সদস্যরা হয় মুক্তিযোদ্ধা, বা অমুক্তিযোদ্ধা, অথবা রাজাকার।
এই আলোকে বিচার করলে দেখা যাবে, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত করার ক্ষেত্রে গণজাগরণ মঞ্চ একটা র্যাডিক্যাল ভূমিকা পালন করেছে। এ বিষয়টিকে উপজীব্য করে বেশ কিছু বই বেরিয়েছে। সেসব বইয়ের মধ্য থেকে নির্বাচিত কয়েকটির পাঠ-উপলব্ধির ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে এই লেখা।
২.
গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে প্রকাশিত একটি বই হলো ইমরান এইচ সরকার সম্পাদিত ২৫ জন লেখকের প্রবন্ধ সংকলন শাহবাগ: গণজাগরণ ও ইতিহাসের দায়। ‘তরুণ প্রজন্ম ক্রান্তিকালের দিশারী’ শিরোনামে আহমাদ মোস্তফা কামাল মঞ্চের অর্জনগুলো চিহ্নিত করেছেন এভাবে: ১. তরুণদের রাজনীতি-সচেতনতা বুলি আওড়ানো বুদ্ধিজীবীদের চেয়ে বেশি, ২. মুক্তিযুদ্ধের স্লোগানগুলো ফিরে এসেছে, ৩. যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে সংশয় ও দ্বিধা দূর হতে শুরু করেছে, ৪. তরুণদের প্রতি মানুষের আস্থা আছে, ৫. এ আন্দোলনে দেশব্যাপী সর্বস্তরের মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছেন, ৬. আদালতের রায় প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করা হয়েছে।
লেখকের মতে, ‘আমাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণেই ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে শরিক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির কাছ থেকে তথাকথিত রাজনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা আদায় করে নিয়েছিল জামায়াত এবং পরবর্তীকালে বিএনপির সঙ্গে জোট বেঁধে ২০০১ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়েছিল ঘাতক দলটি। এবার সেটি হতে দেয়নি তরুণেরা।’
৩.
২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শাহবাগে গণ-আকাঙ্ক্ষার যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল, তার একটা ‘মহড়া’ হয়েছিল ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘গণ-আদালত’-এর প্রতীকী বিচারের মধ্য দিয়ে। শাহরিয়ার কবিরের গণআদালত থেকে গণজাগরণ মঞ্চ বইটিতে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সংগঠিত কার্যক্রমের একটি ফিরিস্তি পাওয়া যায়। আন্দোলনের ডামাডোলের মধ্য দিয়ে আদালতের রায়ে জামায়াতের আমির গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে গেলেন।
গণ-আদালতের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক আহমদ শরীফ ব্যাপারটা সহ্য করতে পারেননি। তিনি লিখলেন, ‘রাজাকারদের ’৯১ সাল অবধি সহ্য করা হয়েছে। শাহ আজিজরা দেশ শাসন করেছে। জিয়া রাজাকার সহযোগিতায় নায়কতন্ত্র চালু করেছিল। হঠাৎ জাহানারার নেতৃত্বে কিন্তু কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের উদ্যমে-উদ্যোগে-আয়োজনে গণ-আদালতি আন্দোলন গড়ে উঠল, জোরালো হলো। তাদের দাবি ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধীরূপে গোলাম আযমের বিচার।...আন্দোলনে ট্রাইব্যুনাল মিলল না। সরকারও আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে কথা রাখল না। জাহানারা ইমামরাও আদালতের আশ্রয় নিলেন না। মধ্যখানে সুপ্রিম কোর্ট গোলাম আযমকে বাংলাদেশে নাগরিকরূপে স্বীকৃতি দিল।...ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ বিএনপিকে পুরো মেয়াদ অবধি রাজত্ব করতে না দেওয়ার মতলবে তুচ্ছ অজুহাতে সংসদ বর্জন করল। সঙ্গে নিল স্বৈরাচারী এরশাদের জাতীয় পার্টিকে আর রাজাকার জামায়াতে ইসলামীকে।...জনগণকে বিভ্রান্ত রাখার গরজে সৈয়দ হাসান ইমাম-শাহরিয়ার কবির প্রভৃতি সব আওয়ামী লীগার দিয়ে গঠন করিয়েছে নির্মূল ও সমন্বয় কমিটি। অর্থ আত্মসাৎ প্রভৃতি অভিযোগ ও দ্বন্দ্বে কমিটি দুভাগ হয়েছে। এটা আর জমবে না আন্দোলন হিসেবে। আমি চরম ঘৃণায় তাদের সম্পর্ক ত্যাগ করেছি গণ-আদালতি আসামি হয়েও।’ (আহমদ শরীফের ডায়েরি: ভাব-বুদ্বুদ)
সুবিধাবাদের রাজনীতির যে কলঙ্ক বড় রাজনৈতিক দলগুলোর গায়ে লেগে আছে, তা থেকে তারা বেরিয়ে আসেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার তাদের নির্বাচনী ওয়াদা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করল। আদালত জামায়াতের বহিষ্কৃত নেতা আবুল কালাম আজাদকে ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ড দেন। এ নিয়ে হইচই হয়নি। তিনি নিরাপদেই দেশত্যাগ করলেন।
বিপত্তি বাধল পরবর্তী রায় নিয়ে। কাদের মোল্লা জামায়াতের সক্রিয় নেতা। আদালতে ৫ ফেব্রুয়ারিতে দেওয়া রায়ে তাঁর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হলো। অনলাইন অ্যাকটিভিস্টদের ছোট একটা দল প্রতিবাদে পথে নামল। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা গণমানুষকে তাঁদের হতাশা ও আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্ম করতে সমর্থ হলেন। শাহবাগ চত্বরে বাংলাদেশের পুনর্জাগরণ হলো। দাবি একটাই, ‘কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।’ তাঁর আজীবন কারাবাসের ‘লঘুদণ্ডে’ জামায়াতের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের আঁতাতের গন্ধ পেলেন অনেকেই।
শাহবাগ ২০১৩ নিয়ে শাহাদুজ্জামানের একটি প্রবন্ধ সংকলন আছে। সেখানে ‘শাহবাগের ঢেউ’ শিরোনামে তিনি লিখলেন, ‘যুদ্ধাপরাধ বিষয়টা বাংলাদেশের মানুষের যৌথ চেতনায় গোপনে তুষের আগুনের মতো জ্বলছে অবিরাম। এ প্রসঙ্গটাকে নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনীতির হিসাব কষে নানা সময় টালবাহানা করে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু শাহবাগ বার্তা দিচ্ছে যে, এ বিষয়ে আর কোনো চালাকির সুযোগ নেই।’
৪.
শুরুর দিকে গণজাগরণ মঞ্চের চরিত্র ছিল ‘অদলীয়’। জনপ্রিয়তা পেয়ে যাওয়ায় গণমাধ্যম বিষয়টাকে লুফে নিল। অনেকগুলো টিভি চ্যানেল এখানে-সেখানে টেবিল পেতে লাইভ ব্রডকাস্ট শুরু করল। কয়েকজন মন্ত্রী শাহবাগে উপস্থিত হয়ে শীতল
অভ্যর্থনা পেলেন। ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ মঞ্চে উঠে উঁকিঝুঁকি দিতে গেলে উদ্যোক্তারা তাঁদের কথা বলার সুযোগ দেননি। তাঁদের ভয় ছিল, আন্দোলনটি ছিনতাই হয়ে যেতে পারে। মঞ্চের অদলীয় চরিত্রটা শেষমেশ বজায় থাকেনি। রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আর বিএনপিকে নিয়ে যে মেরুকরণ, তার হাওয়া লাগল শাহবাগকে ঘিরে। বিএনপি নেতারা বললেন, শাহবাগ একটা সাজানো নাটক। বিএনপি ঘরানার সুশীলেরাও তাতে সুর মেলালেন। তাঁদের প্রচারের ফলে গণজাগরণ মঞ্চের আওয়ামী পরিচিতি দাঁড়িয়ে গেল। প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বললেন, ইচ্ছে হয়, শাহবাগে ছুটে যাই। কাদের মোল্লার রায়ে যে ‘ভুলটা’ হয়েছিল, সেটা ‘শোধরাতে’ গিয়ে পরবর্তী রায়ে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির দণ্ড হলো। জামায়াত সরকার ও গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করল। সেই যুদ্ধে জামায়াতের সহগামী হলো বিএনপি। মঞ্চে আবির্ভূত হলো নতুন এক উপদ্রব, হেফাজতে ইসলাম। দেশটা দুই ভাগ হয়ে গেল।
কাদের মোল্লা ও সাঈদীর রায়ের বিরুদ্ধে উভয় পক্ষ থেকেই আপিল হলো। নতুন করে ‘ভুল সংশোধনের’ চেষ্টা হলো। কাদের মোল্লা পেলেন ফাঁসির দণ্ড। রায় কার্যকর হলো। সাঈদীকে দেওয়া হলো আজীবন কারাবাস।
আদালত আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলেন। এ রকম আশঙ্কা ছিল বরাবরই। পারভেজ আলমের বই শাহবাগের রাষ্ট্রপ্রকল্প এই ইঙ্গিত দেয়। একটি অধ্যায়ে তিনি লিখলেন, ‘শাহবাগ আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন আন্দোলনে আওয়ামী লীগের যে সংগঠন ও ব্যক্তিরা ছিলেন, তাঁদের মাধ্যমে আন্দোলনটাকে আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের জন্য স্বস্তিদায়ক পর্যায়ে রাখতে সক্ষম হন। পাশাপাশি আন্দোলনটিকে কীভাবে নিজেদের নির্বাচনী রাজনীতিতে ব্যবহার করা যায় সেই ছক তাঁরা বানান। আন্দোলনটি যখন মারমুখী হতে গেছে, সরকারকে চাপে ফেলতে চেয়েছে, তখন সরকারদলীয় ক্যাডাররা তাতে বাধা দিয়েছে। জামায়াতের নাস্তিক প্রোপাগান্ডা যখন শক্তিশালী হয়ে উঠল, হেফাজত যখন মাঠে নামল, তখন আওয়ামী লীগ শাহবাগ থেকে সমর্থন তুলে নিল। শাহবাগের প্রতি আক্রমণাত্মক হলো। হেফাজতের মতিঝিল-কাণ্ডের রাতে শাহবাগ আন্দোলনের স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দিল সরকারের পুলিশ বাহিনী।...শাহবাগে প্রবল রাজনীতি হয়েছে, এখনো হচ্ছে। এখানে নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয়েছে, সমঝোতা হয়েছে। শাহবাগে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির ভবিষ্যৎ মঞ্চায়িত হয়েছে, হচ্ছে।’
৫.
২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দিনলিপির একটা লাল তারিখ। শাহবাগ যেন সব পথের মিলনকেন্দ্র। অনেকেই বললেন, ‘আরব বসন্ত’-এর হাওয়া লেগেছে বাংলাদেশের পালে। শাহবাগ হয়ে উঠেছে ‘তাহরির স্কয়ার’।
আরব বসন্ত উত্তর আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির মানচিত্র লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। শুরুটা তিউনিসিয়া থেকে। মোহাম্মদ বুয়াজিজি ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে রাজনৈতিক স্বেচ্ছাতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। তিউনিসিয়ার মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। রাষ্ট্রপতি বেন আলী ১৪ জানুয়ারি ক্ষমতা ছেড়ে সৌদি আরবে পালিয়ে গেলেন। এর পরম্পরায় মিসরের একনায়ক হোসনি মুবারকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে কায়রোর তাহরির স্কয়ারে সমবেত হলো লাখ লাখ মানুষ। ১৮ দিনের লাগাতার বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করলেন মুবারক। এরপর ১৩ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হলেন লিবিয়ার লৌহমানব মুয়াম্মার গাদ্দাফি। বসন্তের বাতাসের ঝাপটায় ইয়েমেনের রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহ ২৭ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন।
আরব বসন্তের সঙ্গে শাহবাগের কিছু মিল আছে। উদ্যোক্তারা রাজনীতির বাইরের তরুণ সম্প্রদায়। সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করে তাঁরা গণসম্পৃক্তি ঘটান। আগে এমনটি দেখা যায়নি। মূল পার্থক্যটা ছিল লক্ষ্যে। আরব বসন্তের প্রধান স্লোগান ছিল ‘আশ-শাব ইউরিদ ইসক্বাত আন-নিজাম’ (‘জনগণ ক্ষমতাসীনদের উৎখাত চায়’)। বাংলাদেশের আন্দোলন ছিল, সরকারের সমর্থনে বা প্রশ্রয়ে, অন্তত বিরোধিতায় নয়। আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়। সারা পৃথিবীতে মৃত্যুদণ্ডবিরোধী নাগরিক আন্দোলন জোরদার হচ্ছে এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলোও যখন এই বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ, সেখানে শাহবাগে দাবি উঠেছে, ‘ফাঁসি চাই।’ ফলে এই আন্দোলনের পক্ষে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সহমর্মিতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিষয়টা আমাদের কাছে আবেগের, পশ্চিমের মনস্তত্ত্বে এটা নীতির প্রশ্ন। বিদেশে অনেক শহরে শাহবাগের প্রতি সংহতি জানিয়ে সমাবেশ হয়েছে। সেসব সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মূলত প্রবাসী বাংলাদেশিরাই।
৬.
প্রতিবাদের ভাষা যে কত অহিংস হতে পারে, ৫ ফেব্রুয়ারির আগে এ দেশে আমরা দেখিনি। ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে যে রকম ঝগড়া-ফ্যাসাদ, মারামারি ও খুনখারাবি নিত্যদিনের ঘটনা, শাহবাগে তার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি ২০১৩ সালের বসন্তে।
আন্দোলনের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটেছিল ১৪ ফেব্রুয়ারি, যেদিন দেশের সর্বত্র মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন সর্বস্তরের মানুষ। তারপর যুদ্ধাপরাধ আইনের পরিবর্তন হলো। এর পরও রাস্তা আটকে বসে থাকা এবং জনদুর্ভোগ বাড়ানোর বিষয়টি মানুষ ভালোভাবে দেখেনি। আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না, কখন থামতে হবে।
৭.
এ দেশে যাঁরা ইতিহাস তৈরি করেন, ইতিহাসবিদেরা তাঁদের কথা মনে রাখেন না। এই অনন্য যাত্রায় জাফর মুন্সি, রাজীব হায়দার, জগৎ জ্যোতি, জাকারিয়া বাবুর আত্মবলিদান কেউ মনে রাখবে কি?
আপিল আদালতে সাঈদীর রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আমরা দেখলাম, শাহবাগ তিন টুকরো হলো। আশা জাগানিয়া গণজাগরণ মঞ্চের কী মর্মান্তিক পরিণতি! তাই বলে এখানেই কি সবকিছুর শেষ? নাকি শেষের শুরু?