
প্ররতিদিন আতিফের ফোন পেয়ে ঘুম ভাঙে লামিয়ার। আজ অনেক দেরিতে ঘুম ভাঙল। সকাল সাড়ে ১০টা বাজে। ১১টায় জরুরি মিটিং আছে। লামিয়া অস্থির হয়ে ওঠেন। হাতের কাছে যে জামাটা পান, গায়ে চাপিয়ে নেন। অফিস কাছেই। ১৫ মিনিট হাঁটলেই হয়। লামিয়ে দৌড়ে রাস্তায় নামলেন। দৌড়াতে দৌড়াতে ল্যাপটপ-ব্যাগ ঘাড়ে ঝোলালেন। জামার বোতাম ঠিক করলেন। রাস্তায় বাস-গাড়ি-মাইক্রো-অটো-টেম্পো-রিকশা-মোটরসাইকেল-বাইসাইকেল—একটার পেছনে আরেকটা মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে। শত শত হর্ন বিরামহীন চিৎকার করে চলেছে। বিচিত্র যানবাহনের ফাঁক গলে নিশ্বাস বন্ধ করে দৌড়াতে থাকেন লামিয়া। নিশ্বাস নিতে গেলেই বুক জ্বলে যায়। ঘন ধুলা জমাট বেঁধে বুকের গর্তে জমে থাকে। বুকের ভেতরে ধাক্কা দেয় সহস্র হর্নের গর্জন। মিটিংয়ে ওপেনিং প্রেজেন্টেশন লামিয়াকে দিতে হবে।
অফিসে পৌঁছে মেজাজ খিঁচড়ে গেল। পার্টিসিপেন্ট একজনও আসেনি। আতিফকে ফোন দিলেন। আতিফ ফোন ধরলেন না। লামিয়ার চোখ-ভ্রু-কপাল—পুরো মুখমণ্ডল কুঁচকে গেল। আতিফ কি রাস্তায়? জ্যামের মধ্যে বাইক নিয়ে আটকে আছে বলে রিংটোন শুনতে পাচ্ছে না? তাহলে ফোন ধরছে না কেন? তিন মিনিট বিরতি দিয়ে আবার আতিফের নম্বরে ডায়াল করলেন লামিয়া। নাহ্। লামিয়ার মাথা গরম হয়ে গেল। আতিফের বাচ্চা, এভয়েড করতেছ আমাকে? সকালে ফোন না দেওয়া, এখন ফোন না ধরা। আমি কিছুই বুঝি না!আবার তিন মিনিট বিরতি দিয়ে আতিফকে ডায়াল করলেন। রিং হচ্ছে। রিং হচ্ছে। আতিফ ধরছেন না। এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। লামিয়া একটা শর্ট মেসেজ লিখলেন: ‘এর পরিণাম তোমাকে ভোগ করতে হবে, মনে থাকবে অবশ্যই।’
মিটিং যখন শেষ পর্যায়ে। প্রধান নির্বাহীর বক্তব্য ডকুমেন্ট করছিলেন লামিয়া। টেবিলের ওপর পড়ে থাকা ফোনটা কেঁপে উঠল। আতিফ। নির্বাহীর দিকে একপলক দেখে নিলেন লামিয়া। নির্বাহীর দুই ভ্রুর মাঝখানে স্পষ্ট ভাঁজ। লামিয়া চোখ নামিয়ে আনলেন নোটবুকে। নির্বাহীর শেষ কথাগুলো ডকুমেন্ট করা সম্ভব হলো না। টেবিলের ওপর ফোনটা আবার কেঁপে কেঁপে উঠছে। শেষে, ওটাকে সুইস অফ করার আগে তিনি টেক্সট করলেন আতিফকে: ‘আর কখনো ফোন দেওয়ার চেষ্টা কইরো না। ব্লক করে দিব।’ লামিয়ার পাশ দিয়ে চলে যাওয়ার সময় প্রধান নির্বাহী সরাসরি একবার তার চোখের দিকে তাকালেন।
সারা গাভর্তি ক্লান্তি, বিরক্তি ও স্নায়ুচাপ। অফিস থেকে বেরোবার মুখেই লামিয়ার চোখের সামনে আতিফের কাঠ কাঠ করুণ মুখ আবির্ভূত হলো। রাস্তার পাশে তিনি বাইক কাত করে রেখে সোজা হয়ে লামিয়ার চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছেন।
: এইটা তুমি ক্যান করলা, লামি? ফোন অফ ক্যান? আমি তো ভয়ে অস্থির? আর ইউ ওকে?
: ফাইজলামি করিস, সকালবেলা সাথে কে ছিল তোমার?
: মানে?
: এই হারামজাদা, রাইতে কার সাথে ফুর্তি করছিস?
: মানে?
: আমি তোরে চিনি না? তোর চরিত্র কেমন জানি না আমি? অন্য কেউ থাকলে তুমি আমার ফোন রিসিভ করো না, যেমনটা আমার সামনে রিসিভ কর না অন্য কারও ফোন, জানি না আমি এই সব?
: কী বলতে চাও?
: কয়টা বান্ধবী লাগে তোর? আমারে দিয়া হয় না? হাইড অ্যান্ড সিক খেলতে খেলতে তুমি কতটা ভণ্ড হইছ, তুমি নিজেও জানো না, আতিফ!
: লামিয়া! আমি টেন্সড! পাজল্ড!
: আমার অফিসে আসছিস কোন সাহসে, পাজল্ডের বাচ্চা। যা, সকালে যার জন্য ফোন ধরতে পারিস নাই, তার কাছে যা। এইখানে সিনক্রিয়েট করতে আসছিস, না? তুই একটা ফালতু লোক। কোনো দিন আর আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করিস না। তোরে আমি ফোন থিকা, ফেবু থিকা, টুইটার থিকা, ভাইবার থিকা ডিলিট করে দিব। তোরে আমি ব্লক মারব। নো মোর এন্ট্রি ইনটু মাই লাইফ।
হনহন করে সরে গিয়ে মানুষের ভিড়ের আড়ালে অদৃশ্য হয়ে গেলেন লামিয়া। আতিফ হেলমেটের গর্তে মাথা ঢুকিয়ে বুকে হাত বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকলেন। লামিয়ার অফিসের প্রহরী রাস্তার ওপর থেকে বাইক সরিয়ে নিতে বলেন।
ঝড়ের বেগে লামিয়ার বাসার নিচে গিয়ে একটার পর একটা সিগারেট জ্বালালেন আতিফ। পকেট থেকে কয়েকবার বের করলেন ফোন। আবার পকেটে পুরলেন। পুনরায় ফোনটা হাতে নিয়ে ডায়াল করলেন লামিয়াকে।
: তোর তো আক্কেল নাই রে দেখতেছি! তোর মান-অপমান বোধ তো একেবারেই নাই।
: না, নাই।
: মান-অপমান বোধ নাই?
: আররি! কী তুই! সকালে ফোন ধরতে পারি নাই বইলা এই সব কী বলতেছিস! আর ইউ ওকে? তুই এইরম করলে আমি মরে যাব। আমার হার্টবিট ইরেগুলার হইতেছে। তুই একটু বোঝার চেষ্টা কর।
: আপনারে ফেরেশতাও বুঝবে না। আপনে কই এখন?
: তোর বাসার নিচে।
: জানতাম।
: চলে যাব?
: অবশ্যই যাবি। যা, বাইকটা রাইখা আয়। তোরে বলি নাই বাইক নিয়ে আমার বিল্ডিংয়ের সামনে আসবি না? এইখানে গেস্ট পার্ক নিষেধ! তাড়াতাড়ি যা, আটটার মধ্যে আসবি। হারামি! আমি অসুস্থ হয়ে যাইতেছি তোর কারণে।
চুলায় ঝটপট ভাত উঠিয়ে দেন লামিয়া। ভাতের মধ্যে আলু ছিলে দেন কয়েকটা। আতিফের সবচেয়ে পছন্দের ডিশ আলুভর্তা। সঙ্গে আমের টক আচার আর মুরগিভাজা। তারপর অনেকক্ষণ ধরে শাওয়ার নিয়ে লাউড স্পিকারে বুদ্ধিস্ট শ্যান্ট ছেড়ে দিয়ে শবাসনে যান তিনি।
সাড়ে নয়টায় হন্তদন্ত হয়ে লামিয়ার ফ্ল্যাটের নিচে পৌঁছান আতিফ। দারোয়ান হেসে সালাম দিয়ে ফটক খুলে দেন। পাঁচতলার ফ্ল্যাটের দরজায় কান পেতে আতিফ শুনতে পান শ্যান্ট। ঠোঁটে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে কলবেল চাপেন। ৩০ সেকেন্ড পর আবার চাপেন। লামিয়া কি ওর দেরি দেখে ধ্যানে বইসা গেছে? আতিফ আরও এক মিনিট অপেক্ষা করেন। পুনরায় বেল চাপেন। দরজায় টোকা মারেন। অনেক শব্দ করে দরজায় ধাক্কা দিতে থাকেন। পাশের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে যায়। একজন হাফপ্যান্ট পরা খালিগায়ের বৃদ্ধ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে অপলক তাকিয়ে থাকেন তার দিকে। আতিফ বৃদ্ধের চোখের দিকে একপলক তাকিয়েই নামিয়ে নেন চোখ। পকেট থেকে ফোন বের করে লামিয়াকে ডায়াল করেন। দেরি করে ফেলায় লামিয়া কি রাগ করেছে? এত রিঅ্যাকটিভ না মেয়েটা? বালিকাদের মতো আচরণ করার কি আছে? আতিফ আবার ডায়াল করেন। শ্যান্ট ছাপিয়ে লামিয়ার ফোনের রিংটোন দরজার এ পাশে স্পষ্ট শোনা যায়। পুরো ৩০ মিনিট অপেক্ষা করেন আতিফ। নিচে নামেন। দারোয়ানের কাছে নিশ্চিত হতে চান লামিয়া কোনো কারণে বাইরে গেলেন কি না। দারোয়ান পরপর তিনবার ইন্টারকম করেন। ওপাশ থেকে কোনো সাড়া মেলে না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটল কি? ওর তো আবার একটুতেই রক্তচাপ বাড়ে। নাকি অন্য কোনো ব্যাপার? কয়েক দিন আগে ওর মোবাইলে হুমকিমূলক বার্তা এসেছে!—‘ধুর!’—শুকনো হাসি হাসেন আতিফ। বজায় রাখেন সহজ ভাব। আবার ফোন দেন লামিয়াকে। কলবেল চাপেন। তারপর নেমে আসেন নিচে। ক্লান্ত বোধ করেন।
সন্ধ্যার আগে আগে লামিয়াকে ফ্ল্যাটে ঢুকতে দেখেছে দারোয়ান এবং এক প্রতিবেশী কিশোর। তারপর তাকে আর বাইরে যেতে দেখা যায়নি। সন্ধ্যার পর বাইরে থাকলে দারোয়ানকে বলে যাওয়াই লামিয়ার সাধারণ অভ্যাস। বাইরে থেকে ফোন করেও জানিয়ে দেন অনেক সময়, ‘দেরি হবে।’ কেননা, বিল্ডিংয়ের কলাপসিবল গেট বন্ধ হয়ে যায় রাত ১০টায়। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির কড়াকড়ি সিদ্ধান্ত। যত বড় ক্ষমতাশালী ভাড়াটেই হোক, এই নিয়ম মানতে হয়। তবু লামিয়া একটা বন্দোবস্ত করে নিয়েছেন দারোয়ানের সঙ্গে। সন্ধ্যার আগে ফ্ল্যাটে ঢুকেছেন লামিয়া। ফ্ল্যাটের নিচে দাঁড়িয়ে থেকে ফোনে কথা বলেছেন আতিফ। লামিয়া ওকে বাইক রেখে আসতে বলেন, যেহেতু বিল্ডিংয়ের গ্যারেজে লেখা আছে ‘অতিথিদের পার্কিং সম্পূর্ণ নিষেধ’। পরিকল্পনায় কোনো ব্যতিক্রম ঘটলে লামিয়া অবশ্যই জানাতেন। এ রকমই আচরণ অনুসরণ করে চলেন তিনি। লামিয়া কি ফ্ল্যাটে খুন হয়ে পড়ে আছে? আতিফ ঘেমে ওঠেন।
ফ্ল্যাটের ভেতরে শ্যান্ট বেজে যাচ্ছে। লামিয়ার নম্বরে ফোন করলে দরজার বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে রিংটোন। লামিয়া ফোন কাছ-ছাড়া করেন না একবারেই। ঘুমালেও মাথার কাছে ফোন রেখে দেন। ফেসবুকে ঘন ঘন স্ট্যাটাস আপডেট করেন। লামিয়া অবশ্যই ফ্ল্যাটে আছেন। এত শব্দে ঘুমিয়ে থাকাটা অস্বাভাবিক। লামিয়ার পক্ষে এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়াও অস্বাভাবিক। লামিয়া কি আসলেই ভেতরে মরে পড়ে আছে? উদ্ভ্রান্ত হয়ে ওঠেন আতিফ। মেয়েটা যা-তা স্ট্যাটাস দেয় আজকাল! তাহলে কি খুন?আজ পর্যন্ত কোনো নারীর গলা কাটার খবর পাওয়া যায় নাই অবশ্য। আতিফের চোখ লাল হয়ে ওঠে। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতির আদেশে অবশেষে পুলিশকে ফোন দিলেন দারোয়ান। আধা ঘণ্টার মধ্যেই পেট্রোল পুলিশের গাড়ি এসে থামল বিল্ডিংয়ের সামনে। আতিফ আতঙ্ক-আক্রান্ত হলেও ধরে রাখেন স্বাভাবিক ভঙ্গি। ‘বিপদ হয়া গেইছে ছার, কী যে ঝামেলা হইল’ বলতে বলতে ঝনঝন শব্দে কলাপসিবল গেট খোলেন দারোয়ান।
সরাসরি আতিফের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করেন পুলিশ, ‘আপনি ভিকটিমের কে হন?’ আতিফ ঢোঁক গিলে নেন দুবার। তারপর বলেন, ‘বন্ধু।’ পুলিশ তার ফোন চেয়ে নেন। লাস্ট কল চেক করেন, ‘কী কথা হইছিল আপনের সাথে?’ জানতে চান পুলিশ। ‘বিশেষ কিছু না, সাধারণ কথাবার্তা।’ পুলিশ এবার খানিকক্ষণ চুপ। লিফটের কাছে গিয়ে ফিরে আসেন আবার। সহকর্মীকে নির্দেশ দেন কল রেকর্ড চেক করতে। ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতির দিকে চেয়ে হাসেন, টিপ্পনী কাটেন, ‘বন্ধু! বয়স্ক এক পুরুষ, আর সিঙ্গেল এক নারী। কী বুঝলেন, ভাই সাহেব। ফ্ল্যাটে ম্যাডাম একাই থাকতেন। আর উনি আসছেন রাত্রি যাপন করতে। ভাই সাহেব, দেখি ওনারা ফোনে কী আলাপ করছিলেন। তাহলেই সব পরিষ্কার হবে। সবই অবশ্য বুঝতেছি। তবু, বোঝেনই তো, সরকারের চাকরি করি, নিয়ম মানতে হয়। মানবাধিকারের কর্মশালায় যেতে হয়। কিন্তু এইটা তো একটা বড় আলামত, তাই না? চিন্তা কইরেন না, কী হইছে তা মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই জানা যাবে।’
পাঁচ মিনিট পর, ‘স্যার, গুটি তো ফিট। আজেবাজে ভাষায় ফোনে কথা বলে। বুতু, স্লাইড পিস, থট—এই সব শুনলেই তো কান গরম হইয়া ওঠে! তারপর হাসে। তারপর কয়, আটটার মধ্যে আসিস। বুচ্ছেন? এদের মধ্যে স্যার অবৈধ সম্পর্ক স্যার। স্যার, স্যার, এইগুলা এই দ্যাশে স্যার চলে? এইটা তো আমিরিকা না, তাই না স্যার? এইখানে কেউ যদি এই রকম ব্যভিচারী মহিলাকে স্যার খুন করে স্যার, এর বিচার স্যার দেশবাসী স্যার পছন্দ করবে না স্যার...’ বলতে বলতে কনস্টেবল কলাপসিবল গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকেন। তারপর বলেন, ‘আবার মানবাধিকারও তো কম না! দেখেন, কী করবেন।’
আতিফের হার্টবিট ইরেগুলার হয়ে ওঠে। ‘কী সাহেব, চলেন, দেখি, তালাটা ভাঙি, কীভাবে কাজটা করলেন, একটু বোঝার চেষ্টা করি। আপনাদের তো আবার ফরেন টেনিং!’—বলতে বলতে পুলিশ ওপরে উঠতে থাকেন। পেছনে ঘাড় খাড়া করে পুলিশকে অনুসরণ করেন আতিফ। পাশের দুই ফ্ল্যাটের দরজা বন্ধই। লামিয়ার দরজায় বিকট শব্দ হতেই ভেতর থেকে লামিয়ার চিৎকার শোনা যায়। তারপর পুলিশ ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতির দিকে চেয়ে কলবেলে চাপ দেন। আতিফকে ইশারা করেন। আতিফ বিভ্রান্ত কণ্ঠে দরজা খুলতে বলেন।
লামিয়া দরজা খোলেন। পরনে ভেজা শেমিজ, ‘দরজা ভাঙতে চাচ্ছিলেন নাকি? কেন? আমি বাথটাবে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
পুলিশ বলেন, ‘বলেন কী? তাইলে তো হইলোই। ঘুম, গোসল একসাথে। এইবার আপনারা দুজনেই একটু রেডি হয়ে নেন। আমাদের সাথে একটু চলেন, কিছু গল্প করি। পুরা ব্যাপারটা একটু নোট রাখতে হবে।’
পরের দিনই বাড়ি ছাড়ার নোটিশ পেয়ে আতিফকে আরেকবার ব্লক করার হুমকি দিলেন লামিয়া।