কেন দেনাদারকে রাস্তায় পিটিয়ে ছিলেন সিকান্​দার আবু জাফর

সিকান্‌দার আবু জাফর (১৯ মার্চ ১৯১৮— ৫ আগস্ট ১৯৭৫)।
প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

সিকান্​দার আবু জাফর ছিলেন খুব স্বাধীনচেতা মানুষ। নিজের ইচ্ছা আর অনিচ্ছাকে সর্বাগ্রে স্থান দিতেন। কারও মতের সঙ্গে না মিললে সরাসরি বলে ফেলতেন, পছন্দ না হলে বিনা নোটিশে হুটহাট চাকরিও দিতেন ছেড়ে। এই কবি ও বিখ্যাত সম্পাদকের জীবনের ঘটনাগুলো খুবই চমকপ্রদ।

২২ বছর বয়সে লেখাপড়ার ইতি টেনে ১৯৪১ সালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সিকান্​দার আবু জাফর। তবে স্বভাবের কারণেই তাঁর পক্ষে একটা চাকরির মধ্যে বেশি দিন আটকে থাকা সম্ভব হয়নি। ১৯৪২ সালে চাকরি ছেড়ে দৈনিক নবযুগ পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। এর কিছুদিন পর এক বন্ধুর সঙ্গে মিলে যোগ দিলেন সুগন্ধি নারকেল তেলের ব্যবসায়। এতে কিছুটা লাভের মুখ দেখলেন তিনি। সে সময় লাভের টাকায় একটা পুরোনো বেবি অস্টিন গাড়িও কিনলেন ৪০০ টাকায়।

গাড়ি কেনার কিছুদিনের মধ্যেই দেখা দিল নানাবিধ সমস্যা। চলতে চলতে থেমে যায় গাড়ি। শিয়ালদহের কাছে একবার তাঁর এই বেবি অস্টিন থেমে গেলে, কিছুতেই তা আর স্টার্ট দিতে পারছিলেন না। অবশেষে গরুর গাড়ি ভাড়া করে আনলেন। গরুর গাড়ির সঙ্গে দড়ি বেঁধে টেনে আনলেন সেই গাড়ি। দৃশ্যটি ছিল দেখার মতো। অনেক দিন পর্যন্ত বিভিন্ন সভা আর আড্ডায় কলকাতার কবি–সাহিত্যিকেরা ঘটনাটি রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা করতেন।

আরেকবার তিতিবিরক্ত হয়ে নিজেই পুরো গাড়ির যন্ত্রাংশ আর নাটবল্টু খুলে ঠিক করতে বসেছিলেন। পরে আর গাড়িটি ঠিকঠাক করতে না পেরে ওভাবেই ফেলে রাখেন।

সিকান্​দার আবু জাফর কিছুদিন পর সেই নারকেল তেলের ব্যবসাও ছাড়লেন। ১৯৫০ সালে ঢাকায় রেডিও পাকিস্তানে চাকরি নিলেন স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে। সেখানেও তিনি থিতু হতে পারেননি। বছর চারেক যেতে না যেতেই দৈনিক ইত্তেফাক-এর সহযোগী সম্পাদক হয়ে আবার সাংবাদিকতা শুরু করলেন।

সাহিত্য সমালোচক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ আলী আহসানের লেখায় সিকান্​দার আবু জাফর সম্পর্কে পাওয়া যায় দারুণ মজার গল্প। তিনি লিখেছেন, সিকান্​দার আবু জাফর কারও কাছে টাকা পেলে তাঁর নিস্তার ছিল না। সময়মতো শোধ না করলে তিনি ছদ্মবেশে গিয়ে তাঁকে ধরে আনতেন। এমনকি মুখে গামছা পেঁচিয়ে রিকশাচালক সেজে এক লোককে ধরে নিয়ে এসেছিলেন একবার। তাঁর দেনাদারকে রাস্তায় পেটানোর ঘটনাও উল্লেখ করেছেন সৈয়দ আলী আহসান।

সাধারণত কবি–লেখকদের কাছেই অন্যরা টাকা পান। কিন্তু কোনো কবি–সম্পাদক দেনাদারকে ধরে এনে রাস্তায় পেটাচ্ছেন, এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না।

খ্যাপাটে ও স্বাধীনচেতা সিকান্​দার আবু জাফরের জীবনে সেটাই ঘটেছিল। অনুমান করি, ত্যক্তবিরক্ত হয়েই ওই ব্যক্তির সঙ্গে এমন করেছিলেন সমকাল সাহিত্য পত্রিকার এই খ্যাতিমান সম্পাদক।

সূত্র: সৈয়দ আলী আহসানের জীবনের শিলান্যাস

গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন