নারীদের শেষ না হওয়া যুদ্ধ

মাশরুক আহমেদের ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে দর্শক

ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে ২১ থেকে ২৬ জুন হয়ে গেল তরুণ আলোকচিত্রী মাশরুক আহমেদের ‘যুদ্ধ এখনো শেষ হয়নি’ শিরোনামের আলোকচিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শিত বিষয়বস্তু নিয়ে মাশরুকের বহুদিনের গবেষণা।

প্রদর্শনীর বিষয় আলোকচিত্র, ভিডিওগ্রাফি, ঐতিহাসিক দলিল প্রভৃতির সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের ৩০ জন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং ‘বীরাঙ্গনা’দের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার অনন্য প্রয়াস। সব ছবি মিলিয়ে প্রদর্শনীটিকে স্থাপনাশিল্পের আকার দেওয়া হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অধিকাংশ আয়োজন সাধারণত হয়ে থাকে স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস ঘিরে। এটি সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। সংগঠকদের এ জন্য সাধুবাদ জানাতে হয়। কঠিন একটি বিষয় নিয়ে দারুণ অধ্যবসায় ও শৃঙ্খলা নিয়ে কাজের সাহস করার জন্য মাশরুকও সাধুবাদের দাবিদার।

এ এস এম রেজাউর রহমান ছিলেন প্রদর্শনীর কিউরেটর। গ্যালারিতে প্রথমেই দেখা যায় ছাদ থেকে ঝুলতে থাকা সাদা পর্দার ওপর নারী মুক্তিযোদ্ধা ও ‘বীরাঙ্গনা’দের নীলচে সায়ানোটাইপে করা অবয়ব। পটভূমির কারণে পর্দাগুলো বিধবার শাড়ি বা কাফনের ইশারা দেয়। সেসব অর্ধস্বচ্ছ পর্দার বিষণ্ন আলো-আঁধারির ফাঁকে ফাঁকে দেখা যায় এই নারীদের সম্পর্কে নীল রঙের বোর্ডে বিভিন্ন আকারের তথ্যের সারি; তাঁদের বক্তব্য, উদ্ধৃতি বা বিলাপ। সংগত কারণেই কাউকে কাউকে ছদ্মনামে উপস্থাপন করা হয়েছে।

অপেক্ষাকৃত বড় আকারের আলোকচিত্রগুলো ছিল যুদ্ধকালীন বাস্তবতার কাব্যময় উপস্থাপন। উপস্থিত ছিল অডিও-ভিডিওসংবলিত বুথ। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও এর প্রপস, রং ও উপাদান এবং সার্বিক সজ্জা প্রদর্শনীর মূল বিষয়কে লঘুতায় পর্যবসিত করে ফেলার ঝুঁকিসংক্রান্ত পুরোনো বিতর্ককে আবার জাগিয়ে তুলেছে। অজস্রবার দেখা ছবির ক্রমহ্রাসমান সংবেদনশীলতাকে অঙ্কুশের আঘাতে জাগিয়ে তোলার জন্যই কি এ রকম রোমান্টিসিজমের আশ্রয় নেন কিউরেটর? কিন্তু রোমান্টিসিজমের আতিশয্যে সংবেদনশীলতাই উল্টো মার খাচ্ছে না তো? এই রোমান্টিসিজম এবং কাব্যময় আড়াল বীর নারীদের ‘এজেন্সি’কে শেষমেশ কোথায় নিয়ে দাঁড় করায়? তাঁদের প্রাপ্য মর্যাদাকে করুণাযোগ্য ‘শিকার’-এর চেহারা দেয় নাকি? এসব প্রশ্নের সরল জবাব পাওয়াও মুশকিল।

এই গুরুত্বপূর্ণ প্রদর্শনীটি আরও বড় কলেবরে, সাধারণের নাগালে কোথাও হলে আরও ভালো হতো। আশা করি, অদূর ভবিষ্যতে প্রদর্শনীটি সেভাবেই অনুষ্ঠিত হবে, জেলা শহরগুলোয়ও।

সৈয়দ লতিফ হোসাইন