বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকছড়া

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে বর্ণিল লোকছড়া। লোকছড়ায় অঞ্চলগত পার্থক্যের কারণে স্থানীয় উপাদানগত এবং আঞ্চলিক ভাষাগত বদল দেখা যায়। আদতে লোকছড়া লোকসাহিত্যের অন্য সব উপকরণের মতোই লোকমুখে প্রচারিত হয়। ঠিক কবে, কীভাবে, কার দ্বারা এগুলো রচিত হয়েছে, প্রায় কোনো ক্ষেত্রেই তা জানা যায় না। এখানে সংকলিত ছড়াগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নেওয়া হয়েছে। লোকবাংলার আঞ্চলিক ছড়া হিসেবে এগুলো ওই সব অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

ময়মনসিংহ

আবু আমার পক্ষীটি গো

কোন না বিলে চরে,

আবু কইরা ডাক দিলে

উড়্যা আইয়া পড়ে।

আয় চান্দ লইড়া,

ভাত দিবাম বাইড়া।

সোনার কপালে আমার

টুক দিয়ে যা রে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া 

উত্তরে ধমধম, দক্ষিণে বিয়া

ধরছে নারকেল ঝরকি দিয়া।

ভাঙব নারকেল মুরা দিয়া

খাইমু নারকেল চিড়া দিয়া।

পাবনা

আকাশেতে তিন তারা

আমার নাম শুকতারা।

আমি কি কিছু জানি?

ঠান্ডা লেবুর পানি।

পানির ভিতর পোকা

মণ্ডলবাবু বোকা।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ

আম ধরে থোকা থোকা

কলা ধরে কাঁদি,

গয়না বেচে বাগান লাগায়

খেদির বড়ো দাদি।

পোতা আসে লাতিন আসে

আসে বেটির ব্যাটা,

কলা বেচে রাঁধে বুড়ি

তিলভরা পিঠা।

টাঙ্গাইল

আমগাছ তলে ক্যারা গো

আমি এডা বেডি গো।

হাতে কী?

আম চুক্কা।

খাও না ক্যা?

দাঁত চুক্কে।

হাসো না ক্যা?

হি হি হি।

নেত্রকোনা

ইছোন বিছোন দরগা পড়ে

মায়ে–ঝিয়ে চাই কাঁড়ে।

চাউল কাঁড়োনির ঝি গো

কার চাউল কাঁড়ো গো।

জামাই আইছে ঘামাইয়া

ছাতি ধর লামাইয়া।

ছাতির উপরে সাপটা

বুইড়া বেডির বাপটা। 

লালমনিরহাট

ঢ্যাঙ্গা ঢ্যাঙ্গা গুয়ার গাছ

তারো আগাল সরু,

কয়জন আছেন বরের বংনাই

আগা হালের গোরু।

হালোত না নুটুরে পুটুর

মাইয়াতে না শোতে,

ভ্যাকরা নাটির গুতা খেয়া

তরতর করি ওঠে।

শেরপুর

হলদি গাছের জলদি ফুল

মামাগো বাড়ি কত দূর?

মামা আইল ঘাইমে

ছাতি ধরলাম টাইনে।

ছাতির মধ্যে গামছা

তিনও মামির তামশা।

ছোট মামি রান্দে–বাড়ে

বড় মামি খায়,

মাইজ্​লে মামি গাল ফুলিয়ে

বাপের বাড়ি যায়।

বাপ করে দূর দূর

মা কয় থাইক,

আমার বেটি বাঁইচ্যা থাইকা

ভিক্ষে করি খাইক।

চাঁদপুর

আয় আয় ওরে হাঁস

থই থই থই,

মোড়া দিব, মুড়ি দিব

আরও দিব খই।


সংগ্রহ: তারিক মনজুর