উম্মে শিশিরের মাগুরা, ঢাকা ও আমেরিকার ঈদ

বিশ্ব ক্রিকেটের এক নম্বর অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জীবনসঙ্গিনী উম্মে আহমেদ শিশির। দুই মেয়ে আলায়না আল হাসান ও ইররাম আল হাসান আর ছেলে এইজাহ আল হাসানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে থাকেন শিশির। মাঝেমধ্যেই চলে আসেন ঢাকায়, আবার কখনো যান মাগুরায়। আমেরিকার উইসকনসিন, বাংলাদেশের ঢাকা ও মাগুরা—তিন জায়গায় এই তিন রকম ঈদযাপনের গল্প শোনাচ্ছেন উম্মে আহমেদ শিশির

শশুরবাড়ি মাগুরায় রান্না করছেন শিশির। পাশে সাকিব।
ছবি: শিশিরের ফেসবুক থেকে

আমেরিকার ঈদ

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে ছোটবেলার ঈদের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে। আমরা ছয় ভাইবোন। ঈদের দিন ভোরবেলায় ঘুমাচ্ছি। আব্বা ভোর পাঁচটা থেকে আমাদের ডাকতে শুরু করেছেন। ঘুম থেকে ওঠো। জাগো। ঈদের নামাজ পড়া শুরু হবে এখন।

আমাদের ম্যাডিসন শহরে অনেক বড় ঈদের জামাত হয়। কোনো একটা মিলনায়তন ভাড়া করে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানরা একসঙ্গে জামাত করেন। পরপর দুটো জামাত হয়। নারী–পুরুষ একই সঙ্গে জামাতে নামাজ পড়েন। সেখানে নানা ধরনের খাবারও সাজিয়ে রাখা হয়। নামাজ পড়া শেষে সেসব খাবার খাওয়া যায় ইচ্ছেমতো।

জামাত হবে সকাল ৯টায়। কিন্তু আব্বা জাগাবেন অন্ধকার থাকতেই। আমরাও গড়িমসি করছি। শেষে আব্বার তাগাদায় উঠতেই হয়। গোসল সেরে নতুন কাপড়চোপড় পরে নিলাম। চটপটি বানাচ্ছেন আম্মা। তাঁকে একটুখানি সাহায্য করলাম। একটুখানি চেখে দেখলাম। বাহ্‌। চটপটি ছাড়া ঈদ যেন এ বাড়িতে পূর্ণতা পায় না। এরপর সবাই মিলে গেলাম ঈদের জামাতে।

নামাজের পর দুপুরে হয়তো গেলাম কোনো বন্ধুর বাড়ি। রাতে সবাই এল আমাদের বাড়িতে। এমনিতে কিন্তু ঈদের দিন ছুটি থাকে না। আমরা নিজেরা ছুটি নিই। বড়রাও কাজ থেকে ছুটি নেন এক দিনের জন্য। কেউ হয়তো ছুটি নেন না। নামাজ পড়া শেষ করে কাজে চলে যান।

সাকিবও তো আমেরিকায় ঈদ করেছে। নামাজ পড়তে গেছে যথারীতি। এবার আমার তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমি আমেরিকায়। সাকিব দেশে। সাকিবের সঙ্গে তো রোজই কথা হয়, ঈদেও হবে। ওর কিছু জরুরি কাজ আছে। সেগুলো শেষ হলে ও এখানে চলে আসবে।

আমি আব্বা-আম্মা দুজনকেই হারিয়েছি অল্প কয়েক বছরের মধ্যে। ম্যাডিসনে আমাদের ভাইবোনদের সবার বাড়িই কাছাকাছি। আমার শাশুড়ি আমার সঙ্গেই এখন আমেরিকার বাড়িতে আছেন।

আমার ছেলেমেয়েরা ছোট। এখনো ঈদ কী, বোঝে না। ওদের ঈদের জামাতে নিয়ে যাব। ওরা যাতে আমাদের ধর্ম আর সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে, আমাদের উৎসবগুলোর তাৎপর্য বুঝতে পারে, সে ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই নজর রাখতে হবে। বিয়ের পর একবার আমরা সব ভাইবোন মিলে পরিকল্পনা করলাম, সবাই একত্র হব। সবাই মিলে ঈদ করব। ঈদ মানে তো সবার পুনর্মিলনী, তা-ই না! তো সবাই একসঙ্গে হয়েছিলাম, খুব মজা হয়েছিল সেবার।

ছেলে এইজাহ আল হাসানের প্রথম জন্মদিনে দু্ই মেয়ে আলায়না আল হাসান ও ইররাম আল হাসানসহ সাকিব ও শিশির।
ছবি: উম্মে আহমেদ শিশিরের ফেসবুক থেকে

মাগুরার ঈদ

আমার সবচেয়ে মজা লাগে মাগুরার ঈদ। আমার তো গ্রামে থাকার অভিজ্ঞতা নেই বললেই চলে। মাগুরায় গেলে খুবই ভালো লাগে।

সাকিবদের বাড়ি তো সবার জন্য দুয়ার খোলা একটা বাড়ি। ঈদে অনেকেই আসেন ওই বাড়িতে। এই তো কিছুদিন আগে মাগুরার বাড়িতে খোলা আকাশের নিচে মাটির চুলায় রান্না হলো। আমি একটুখানি হাতা নেড়ে দিলাম। এই কাঠের খড়িতে খোলা চুলার রান্না কিন্তু আমার খুব ভালো লাগে। আমরা পিকনিকের মতো করেছিলাম। তবে সাকিব ঈদের দিন ওর নানিবাড়ি যাবেই।

 

ঢাকার ঈদ

ঢাকায় তো সাকিবের সঙ্গে ঈদ করেছি। ঢাকার ঈদে অনেকেই আমাদের বাসায় বেড়াতে আসেন। আলায়নার জন্মের আগে আগে আমরা ঈদ করেছি ঢাকায়। তাই সে সময় আমাকে খুবই সাবধানে থাকতে হয়েছে। বেশি হইচই করিনি। আবার ঈদে টেলিভিশনগুলোতে বিশেষ অনুষ্ঠানেও সাকিব আর আমি একসঙ্গে যোগ দিয়েছি একাধিকবার।

তিন ঈদের রকমফের

ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ মানে সবার সঙ্গে সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া। ঈদ মানে অন্যের পাশে দাঁড়ানো। ঈদে সবাই সাধ্যমতো উৎসব করে—বিশেষ পোশাক পরা, বিশেষ খাবার খাওয়া—এভাবে উদ্‌যাপন করে ঈদ। আমরাও তা-ই করি। তবে আমেরিকার ঈদ তো বাংলাদেশের মতো এত ব্যাপকভাবে হয় না। স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত—সব খোলা থাকে। তখন ঈদ করতে হয় নিজের মতো করে, নিজেদের মতো করে, পারিবারিকভাবে, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে। ঢাকার ঈদের তো আরেকটা রূপ আছে। যদিও ঢাকায় ঈদ আমি কমই করেছি। আর আগেই বলেছি, আমার বিশেষ রকমের প্রিয় মাগুরার ঈদ। যেখানেই ঈদ করি না কেন, ভালো লাগে। আবার এক জায়গায় ঈদ করলে আরেক জায়গা, সেখানকার স্বজনদের মিস করি। এখন যেমন ঈদের দিন আব্বা-আম্মার কথাই বেশি করে মনে পড়বে। বাচ্চাদের দাদি আমার সঙ্গে আছেন। আব্বা–আম্মা না থাকলেও তাঁর স্নেহ আমাদের জন্য বড় আশীর্বাদ।

ঈদ ভালো হোক

যে যেখানেই ঈদ করুক, সবাই ভালো থাকুক। এটাই চাই। পৃথিবীর সবাই ভালো থাকুক। সবাইকে ঈদ মোবারক।