অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের ভুলোমনা স্বভাবের কথা সর্বজনবিদিত। প্রখ্যাত এই পণ্ডিত জ্ঞানসাধনায় যতটা একনিষ্ঠ ছিলেন, বৈষয়িক ব্যাপারে ছিলেন ততটাই বেখেয়াল। ঘরের বাজার আনতে গিয়ে এক বেলা দাবা খেলে খালি হাতে ফেরার ঘটনাটার মতো তাঁর বেখেয়ালি বহু আচানক কাণ্ডের কথা লিখেছেন তাঁরই মেয়ে মাহমুদা খাতুন। 

 কাজী মোতাহার হোসেন একবার এক সভায় আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে যাবেন। শেষমেশ পায়ে এক মোজা পরেই রওনা হয়ে গেলেন। তো ওই সভায় গিয়ে আগে নাশতা সারলেন তিনি। নাশতা শেষে মুখ মুছতে পকেট থেকে বের করলেন রুমাল। কিন্তু হাতে নিয়ে দেখেন, এটা তো রুমাল নয়, পায়ের মোজা। আসলে এক মোজা পায়ে পরে অন্য মোজা মনের ভুলে পকেটে ঢুকিয়ে ফেলেছিলেন বিখ্যাত এই সাহিত্যিক। আর সেভাবেই হাজির হয়েছিলেন অনুষ্ঠানে।

কাজী মোতাহার হোসেনের কেবল যে মোজা নিয়ে ঝামেলা হতো এমন নয়, প্রায়ই ভুল করে লুঙ্গি আর পায়জামা একসঙ্গে পরে ফেলতেন তিনি। ঘরের কেউ খেয়াল না করলে এমন কাণ্ড অহরহই ঘটাতেন। 

তখন কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে মাহমুদা খাতুন থাকতেন করাচিতে, ওইখানেই চাকরি করতেন। সেখানে বেড়াতে গিয়েছিলেন কাজী মোতাহার হোসেন। বেড়াতে গিয়ে কি সব সময় ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে! তাই চারপাশটা ঘুরে দেখার জন্য হাঁটতে বের হলেন তিনি। ঘোরাঘুরি শেষে মেয়ের বাসায় ফিরবেন, এমন সময় পড়লেন মহাবিপদে। দেখা গেল, বাড়ি ফেরার পথ তো তিনি হারিয়ে ফেলেছেন! এ কারণে বাসার কাছাকাছি এসেও সঠিক বাসাটা আর কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছেন না। একে ওকে জিজ্ঞাসা করছেন, কেউই ঠিকভাবে কিছু বলতে পারছে না।

বিকেলে অফিস ছুটি হলে মাহমুদা খাতুন বাসায় ফিরছিলেন। রাস্তায়ই পেলেন পথভোলা বাবাকে, এগিয়ে গেলেন তাঁর কাছে। কাজী মোতাহার হোসেন সালাম দিয়ে তাঁকেও জিজ্ঞাসা করলেন, ‘মাহমুদার বাড়িটা কোথায়, বলতে পারেন?’

বাবার এমন কাণ্ডে মেয়ে হাসবেন না কাঁদবেন, বুঝতে পারছিলেন না। 

পরে বাবাকে নিয়ে যখন ঘরে ফিরলেন, তখন অধ্যাপক সাহেব নিজের বোকামিতে নিজেই রসিকতা করে বললেন, ‘চেনা চেনা লাগছিল রে! তাই তো তোর কাছে বাড়ির ঠিকানা জিজ্ঞাসা করলাম।’

সূত্র: সন্​জীদা খাতুন সম্পাদিত কাজী মোতাহার হোসেন: আপনজনদের স্মৃতিকথা

● গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন