‘আমার শরীরটা বোধ হয় মজবুতই ছিল, সে জন্য আর্মির হাত থেকে ফিরতে পেরেছিলাম’

১৫ নভেম্বর ছিল বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৪ সালে জীবনানন্দ মেলা উপলক্ষে রাজশাহীতে এসেছিলেন দুই বাংলার লেখকেরা। কলকাতা থেকে এসেছিলেন কবি মৃণাল বসুচৌধুরী, শ্যামল কান্তি দাস ও কথাসাহিত্যিক শচীন দাশ। ২০১৪ সালের ১৬ মার্চ হাসান আজিজুল হকের সঙ্গে তাঁর বাসায় এক অন্তরঙ্গ আড্ডায় মেতে ওঠেন তাঁরা। অপ্রকাশিত সেই আলাপের একটি অংশে উঠে এসেছে এই কথাকারের বর্ণিল শৈশব–কৈশোর ও তারুণ্যের গল্প। আড্ডাটি ধারণ করেছিলেন আবুল কালাম মুহম্মদ আজাদ

হাসান আজিজুল হক (২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯–১৫ নভেম্বর ২০২১)
ছবি: নাসির আলী মামুন.ফটোজিয়াম

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমানের জবগ্রামে হাসান আজিজুল হকের শৈশব কেটেছে। আড্ডার শুরুতেই এল সেই গ্রামের কথা। হাসান আজিজুল হক কথা বলেন। সেই কথার সূত্র ধরে ছোট ছোট প্রশ্নে তাঁকে উসকে দেন অন্যরা। ফলে আড্ডায় ঘুরেফিরে এল এই শক্তিমান কথাসাহিত্যেকের অতীত দিনের কথা। আলাপ প্রথমে শুরু করলেন হাসান আজিজুল হকই। বললেন, আমাদের গ্রামের স্কুলটা কিন্তু এলাকায় বিখ্যাত ছিল।

তার কারণ হচ্ছে, কাশিমবাজারের মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর স্ত্রীর নামে স্কুলটা—মহারানি কাশীশ্বরী দেবী স্কুল। তাঁর নামে বহরমপুরে কলেজ আছে। 

: কাশীশ্বরী স্কুল আছে!

: হ্যঁা, স্কুল আছে, কলেজেও আছে। কাশীশ্বরী আমাদের গ্রামের মেয়ে। যতদূর জানি, তাঁরা কাস্টের দিক দিয়ে নিম্ন ছিলেন। ওই কাস্টের যোগ্য পাত্রী জোগাড় করা খুব মুশকিল ছিল। কাশীশ্বরী নাকি খুব সুন্দরী ছিলেন। খুব গরিব। কুঁড়েঘরে থাকতেন। সেই মেয়েকে পছন্দ হলে মহারাজা তাঁকে বিয়ে করেন। এরপর আমাদের গ্রামে অনেক কিছু খুলে যায়। মহারাজার ভাগনে আমাদের গ্রামে এসে থাকতে শুরু করেন। তাঁদের দানে গোটা বাংলাদেশ গড়া। দৌলতপুর কলেজেও মহারাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দীর নামে একটি কোয়ার্টার আছে শিক্ষকদের। এদিকে এসে দেখলাম, তানোরের দিকেও তাঁদের অনেক কিছু ছিল। তাঁরা ছিলেন খুব দানশীল। তাঁর ছেলে ছিলেন শ্রীশচন্দ্র নন্দী। তাঁর ছেলে সৌমেনচন্দ্র নন্দী। আছেন এখনো কলকাতায়। 

: হ্যাঁ, শিয়ালদা স্টেশনের গায়ে সেই রাজবাড়িটা এখনো রয়েছে। 

: হ্যাঁ, স্বর্ণপুরী। আমি একবার সোমেনবাবুর সঙ্গে দেখা করতে চাই। তাঁর সঙ্গে আমার স্মৃতিটা হচ্ছে, যখন আমি ক্লাস নাইনে পড়ি, তখন তিনি আমাদের স্কুল পরিদর্শনে এসেছিলেন। সে সময় আমাকে তাঁর স্তুতি রচনা করার ভার দেওয়া হলো। আমি সেই প্রথম গদ্য লিখি আরকি। ক্লাস নাইনে। যত কঠিন কঠিন শব্দ খুঁজে পাওয়া যায়, সব শব্দ একখানে করে...

: সেই গদ্য কি আপনার এখনো আছে?

: কই? নেই বোধ হয়, দেখি না তো আর। তো তিনি স্কুলে এলেন। অসম্ভব সুপুরুষ বুঝলে। ফিনফিনে ধুতি, পাঞ্জাবি পরা। আসলে শৈশবের চোখ দিয়ে দেখা তো। বহু লোকের মধ্যে দাঁড়িয়ে স্তুতিপত্রটা পাঠ করলাম। আমাকে ধরে রাখার জন্য দুজন লোক লাগল। কারণ পড়ার সময় আমার ঠ্যাং এমন কাঁপতে লাগল,  ছেড়ে দেয় তো পড়ে যাই আরকি। হা হা হা। দুজন দুপাশে ধরে আছে। আর আমি কাঁপা কাঁপা গলায়...। 

: তখনো কোনো গল্প লেখেননি?

 : কোথায়! 

: স্কুল ম্যাগাজিনে?

: স্কুল ম্যাগাজিন–ট্যাগাজিন তখন ছিলও না। এটাই আমার প্রথম লেখা। 

: গল্প কখন লিখলেন? 

: সে অনেক পরে। 

: সাহিত্যের সঙ্গে যোগাযোগ নিশ্চয় ছিল। তা না হলে এই যে কঠিন কঠিন শব্দ, এটা পেলেন কোথায়? প্রস্তুতিটা ছিল মনে হয়।

: আমার দিদি জাহানারা নওশিনকে বাবা একটা মেঘনাদবধ কাব্য এনে দিয়েছিলেন। কাব্যটি যখন পড়া হতো, তখন আমিও মাঝেমধ্যে থাকতাম। কঠিন কঠিন শব্দ মেঘনাদবধ কাব্যে তো প্রচুর। দিদি যখন কাব্যটি পড়তেন, বাবা মাঝেমধ্যে দু–একটা শব্দের অর্থ খুঁজে বের করে দিতেন। কাজেই সেখান থেকে আমার কিছু কঠিন কঠিন শব্দ শেখা হয়েছিল। আর সাহিত্যে আমার আগ্রহ জন্মানোর কারণ হলো শিবরাম চৌধুরী নামের একজন শিক্ষক। শিবরাম চৌধুরী আমাদের ক্লাস সেভেন পর্যন্তু পড়াতেন। তাঁর পড়ানোর মধ্যে একটা অসম্ভব রকমের ক্ষমতা ছিল। যাকে বলা যায়, অপরের কানের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া আরকি। শিবরাম বাবু কাঁপা কাঁপা গলায় বলতেন, ‘দোহাই প্রাণ তুমি যেয়ো না। দোহাই প্রাণ তুমি যেয়ো না। তুমি গেলে একদণ্ডও আমরা বাঁচব না।’  

: এই যে সম্মাননাপত্র বা অভিভাষণ যেটা পড়লেন। তার কী প্রতিক্রিয়া হলো? 

: মাস্টার মশাইয়েরা বললেন, আমাদের এই ছেলেটা বাংলায় খুব ভালো। আর অঙ্কে বরাবরই ফেল। তাই ফার্স্ট হলেও ওকে তো ফার্স্ট দেওয়া যায় না। ওকে বিবেচনায় পাস করাতে হয়। অথচ যে ফার্স্ট হয়েছে, তার চেয়ে সে অন্তত ২০ নম্বর বেশি পেয়েছে। কিন্তু অঙ্কে চব্বিশ–পঁচিশের বেশি পায়নি। কাজেই এই ছেলেই হলো আমাদের রত্ন। সংস্কৃতিতেও সে ভালো, এক শর ভেতরে এক শ পায়। সবই ভালো। অঙ্ক ছাড়া ওর সবই ভালো।

: খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন বোঝা যাচ্ছে। 

 : মোটামুটি মেধাবী ছিলাম আর সবার কাছে গ্রহণযোগ্যও ছিলাম। আমাদের এলাকাটা ছিল হিন্দুপ্রধান। টেন পারসেন্ট মাত্র মুসলমান আর নাইনটি পারসেন্ট হিন্দু। সামাজিক মেশামিশিটা একরকম ছিলই না 

: তারপরেও এই যে মেঘনাদবধ কাব্য আপনার দিদি পড়ছেন। আর পড়ার মধ্যে অনেক কঠিন কঠিন শব্দ বাবা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আপনারও তো খানিকটা আগ্রহ ছিল, নাকি? 

: আগ্রহ মানে স্কুলের লাইব্রেরিটা শেষ করেছি আমি আর দিদি মিলে।

: আপনার সাক্ষাৎকারে এবং লেখার মধ্যে পুরোনো গান সম্পর্কে নানা কথা আছে। পুরোনো গান নিয়ে আপনার জানাশোনা অনেক। এগুলো কি ওই সময়ে...

: হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই সময় আমাদের বাড়িতে গ্রামোফোন ছিল। বাবা একটা চমৎকার গ্রামোফোন কিনেছিলেন। 

: চোঙ লাগানো। দেখে মনে হতো কলের গান! 

: এটা আরও সুন্দর। চোঙটোঙ কিছু ছিল না। ওটা এখনো দিদির কাছে আছে। 

: ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শোনা হতো, দুই পাশে ছবি থাকত। 

: হ্যাঁ, হিজ মাস্টার ভয়েস, মেগাফোন। বাবা প্রথম দিকে হাত দিতে নিষেধ করতেন। যখন একটু বয়স হলো, বাবা আর বারণ করতেন না। তখন শিশির ভাদুড়ীর অভিনয়সমৃদ্ধ চন্দ্রগুপ্তের পালা শোনা হতো। 

: আর থিয়েটারের গানগুলো?

: ডিএল রায়ের ‘আয়রে বসন্ত পাখা মেলে’, ‘ওই মহাসিন্ধুর ওপার থেকে’—এসব শুনতাম। পরে তো মান্না দে গেয়েছেন। রবীন মজুমদার কিন্তু তখন ওই রেকর্ডে গানটা গেয়েছিলেন। শিশির ভাদুড়ী সেখানে চাণক্যের অভিনয় করেছেন। 

: আপনার বাড়িতে সে সময় গানের একটা আবহ ছিল। কাজী নজরুল ইসলাম তখন খ্যাতির চূড়ান্তে। তাঁর গান ব্যাপক জনপ্রিয়। নজরুলের গান শুনতেন না?

: সে গান তো শুনতামই। আমার বাড়িতেই প্রচুর ছিল। লম্বা রাস্তা পার হতে রাস্তার মাঝখানে ভূতটুতের ভয় পেলে আমি চিৎকার করে গান গাইতাম। গান করতে করতে চলে যেতাম। 

: আমরাও নির্জন জায়গা পার হওয়ার সময় তারস্বরে গান গাইতাম। তাতে আত্মবিশ্বাসটা বাড়ত।

: তখন ‘সাহারাতে ফুটল রে ফুল, রঙিন ফুলে লালা’, ‘দেখ আমিনা মায়ের কোলে’—এগুলো শুনতাম। নজরুলের গানগুলো তখন আমার ঠোঁটস্থ। মুখস্থ বলতে পারি এবং গাইতেও পারি। এ রকম অবস্থায় হেমন্তের একটি রেকর্ড  আর পেলাম না। একদিন বললাম, হেমন্তের যা কিছু পাওয়া যায়, আমাকে দাও তো। তার মধ্যে শুনেছিলাম, ‘আকাশ মাঠে ওই ঘুমায় রাতের তারা’। তারপরে ‘লিখিনি লিপিখানি প্রিয় তোমারে’। স্বরলিপি ছবির গান।

: এ রকম একটা অবস্থা চলতে চলতে হঠাৎ গল্প লেখার কথা মাথায় এল কী করে?

: কোথায় গল্প। তখন তো আমি গল্প পড়ি। পড়তে আমার এত ভালো লাগত! 

: সে সময় আর গান গাইতেন না?

: প্রথমেই বুঝতে পেরেছিলাম, কাকের কণ্ঠ আমার। ওই কণ্ঠে গান হবে না। 

: তারপরে গল্প লিখতে আরম্ভ করলেন?

: সে কবে গো? সে তো অনেক পরে। তার পেছনে বিরাট এক ইতিহাস আছে। 

: আপনি বলছেন স্কুলেই লাইব্রেরির বইপত্র পড়ে শেষ করে ফেলেছেন। মেঘনাদবধ কাব্যের সেই কঠিন কঠিন শব্দ—এগুলোর মাধ্যমে একটা ভিত তো আপনার তৈরি হয়েছিল।

: হ্যাঁ, স্কুলেই দস্তয়ভস্কি পড়েছি, তলস্তয় পড়েছি—এত ভালো ভলো বই তখন ছিল! 

: অনেকেই গল্প লেখার আগে কবিতা লিখে থাকেন...।

: এই অন্যায় কাজটা ক্লাস ফোরেই আমি করে ফেলেছি।

: মনে আছে আপনার লেখা কোনো কবিতার পঙ্‌ক্তি?

: যাচ্ছেতাই সব। 

: সে সময় ছড়া লিখেছিলেন?

: সেসব ওই মৃত্যুটিত্যু—এমন মিল দিয়ে। এখন তো মৃত্যু চেপে বসেছে। তখন মৃত্যুর কোনো ব্যাপার ছিল না। কবিতাগুলো সব মৃত্যু নিয়ে। এটা ছাড়া কোনো কবিতাই লিখিনি। বিলাসিতা, মরণ বিলাসিতা। জীবনের প্রথম পড়েছিলাম ধ্রুব নামে একটা বই।

ক্লাস থ্রিতে। লেখকের নাম আর মনে নেই। পরে তো নজরুল ইসলামের অভিনয়ে ধ্রুব সিনেমাও হয়েছে। তখন ওই সব বই পড়তাম। আরাকানের বিভীষিকা নামে একটা বই সে সময় পড়েছিলাম। পরে বইখানা কেউ আমাকে আর জোগাড় করে দিতে পারল না।

আমার ওই বইটা দরকার এ জন্য যে আমি যে বইটা পড়েছিলাম, তার মাঝামাঝি থেকে বাকিটা আর ছিল না। মাঝখানে মমতা বলে ওই মেয়েটা যে দুই পাহাড়ের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল, তার ভাগ্যে যে কী ঘটল তা আর জানতে পারলাম না। খুব পড়তাম ওই সময়ে। ...দেবী সরস্বতী, হেমেন্দ্রকুমার রায়, সব্যসাচী, পাঁচকড়ি দে—এসব পড়েছি। তখনকার রহস্যগল্পে ডিটেকটিভদের ধারাই ছিল আলাদা। কোনো অস্ত্রপাতি নেই।

তখনো আমার গল্প লেখার ইচ্ছা হয়নি; বরং বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী—এই বই এত মুগ্ধ করেছিল যে ওইটার মতো করে গদ্য লেখার চেষ্টা করেছি। সে–ও একটা হতাশাজনক কাহিনি। আমার জামাইবাবুর এক বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমার খুবই ইচ্ছা আমার ওই গদ্য লেখার খানিকটা অংশ আমি পড়ে শোনাই জামাইবাবুর বন্ধুকে। তো একদিন বড় আশা করে তাঁকে গদ্যটা শোনাতে গেলাম। তখন দেখি, তাঁর হাতে একটা নতুন চকচকে বই। নাম হলো দেশে–বিদেশে

তিনি তখন পড়তে শুরু করেছেন। পড়ছেন আর মজা পাচ্ছেন। আমি আমারটা একটু শোনাতে চাইলাম। বললেন, ‘আরে ধ্যাৎ, আমি এখন দেশে–বিদেশে পড়ছি। কী অদ্ভুত! নতুন একটা বই মাত্র হাতে পেলাম। যাও যাও।’ শুনলেনই না তিনি। অগত্যা কী করব, আমি ব্যর্থ হয়ে চলে এলাম। 

: কবে প্রথম ছোটগল্প লিখেছেন?

: আমি তখন একটু একটু কবিতা লিখছি। সদ্য মধুসূদন পড়েছি। মিলটিল ছাড়া গদ্য কবিতাও লিখছি। এরই মধ্যে পাস করে আমাকে চলে আসতে হলো। খুলনার দৌলতপুর কলেজে যখন তৃতীয় বর্ষে উঠেছি, সাতান্ন সালে আমাকে আর্মি একটা অজুহাতে তাদের কাস্টডিতে নিয়ে যায়। দৌলতপুর কলেজের ছেলেদের ‘দুর্দান্ত’ বলে দুর্নাম ছিল।

ট্রেনে টিকিট কাটত না। চেকারদের মারধর করত। আমি ছাত্রনেতা ছিলাম। কলেজ সংসদের  সাধারণ সম্পাদক। কাজেই আমি আজেবাজে কাজ কখনো করতাম না। তো ট্রেনে চেপে খুলনায় যাচ্ছি। আমার সঙ্গে এক পাঞ্জাবি ছিল। লোকটার সঙ্গে আমার ভালোই সম্পর্ক ছিল। সেই হারামজাদা আমাকে ‘ইয়ে হ্যায় ইয়ে হ্যায়’ বলে দেখিয়ে দিল। আর্মি আমাকে নিয়ে গেল। তাদের  যে নির্যাতন, আমার শরীরটা বোধ হয় মজবুতই ছিল, সে জন্য আর্মির হাত থেকে ফিরতে পেরেছিলাম। 

: বর্ধমানে তখনো যাতায়াত করছেন? 

: আরে বর্ধমানে তো যাতায়াত করছিই। একষট্টিতে চলে এলাম। আমার পাসপোর্ট তো আমি রেখে দিয়েছি। ইন্ডিয়ান পাসপোর্ট। এখনো রেখে দিয়েছি। আমি এখনো দাবি করতে পারি যে আমি ইন্ডিয়ান... হা হা হা।

: তারপর কী হলো?

: ছাত্র আন্দোলনের ফলে রাতের বেলা ছাত্ররা তিন–চারটে বাস নিয়ে গিয়ে আর্মিদের অফিস ঘেরাও করল। তখন ওরা আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হলো। কলেজের প্রিন্সিপাল লোকদেখানো একটা ইনভেস্টিগেশন করে রিপোর্ট দিল যে ফার্স্ট ক্লাসে উইদাউট টিকিট চলাচল, এটা ভয়ংকর ব্যাপার। এরপর প্রিন্সিপাল বললেন, ‘হয় চলে যাও, না হলে আমরা বের করে দিতে বাধ্য হব। তুমি নবাব পরিবারের ছেলে। কোয়ার্টারটা ছেড়ে দাও। তোমার জামাইবাবুর মেসে ওঠো। তারপর পলিটিকস করো।’ আমার দিদি তখন ছিলেন না। তারা আমার স্কলারশিপটাও বন্ধ করে দিল। স্কলারশিপের চিঠিটা গায়েব করে তখন আমি দৌলতপুর কলেজ ছাড়লাম। ছাড়তে বাধ্য হলাম আরকি। ভর্তি হলাম রাজশাহী সরকারি কলেজে। আমার হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট ছিলেন দৌলতপুর কলেজের প্রিন্সিপালের বন্ধু। তিনি বললেন, ‘সাঈদ (ওই প্রিন্সিপালের নাম) এটা কী করেছে!’ তিনিই লিখেটিখে কাগজপত্র সব আনালেন। আমি বললাম, ‘স্যার ওখানে যে বারো মাসের বেতন দিয়ে এসেছি ১০ টাকা করে, আমি তো এটা ছাড়ব না।’ তখন আমার রাগটাগ বেশি ছিল। গিয়ে ওই প্রিন্সিপালকে বললাম, ‘আপনি তো আমার স্কলারশিপ আটকে দিতে চেয়েছিলেন। পারেননি। আমি সব পেয়েছি। এখন আমি এসেছি আমার ১২ মাসের যে ১২০ টাকা বেতন দিয়েছিলাম, ওটা ফেরত নিতে। ওটা ফেরত দিন।’ তখন তিনি গাঁইগুঁই করে ১২০ টাকা ফেরত দিলেন। তারপর ওই লোক যত দিন ছিলেন, সে সময় সুযোগ পেয়েও আমি ওই কলেজে চাকরি করিনি।