নির্দেশের সীমানা ডিঙিয়ে

শিল্পী: জয়তু চাকমা

জয়তু চাকমার প্রদর্শনী দেখে প্রাচীন মিসরের ছবি মনে এল। তাদেরও মুখোশ ছিল। দেবতা আনুবিসের ছিল শেয়ালের মাথা। আর সর্বদর্শী দেবতারা ছিলেন বাজপাখির মাথাঅলা। তাদের আরও ছিল পিরামিড। এসব জয়তুর ছবিতেও আছে। তবে মিসরের ছবি ছিল শাসকদের নির্দেশে রচিত। জয়তু নির্দেশ অমান্য করে এঁকেছেন। 

পূর্বতন বহু শিল্পীর আঁকা জলরং, অলৌকিক আভার আলোকচিত্র বা পোস্টার দেখে পাহাড়ের যে রোমাঞ্চগাথা আমাদের মনকে অবশ করে রাখে; গলায় ক্যামেরা ঝুলিয়ে যে মোহময় পর্যটক–দৃষ্টি নিয়ে আমরা পাহাড়ে উড়ে যাই; জয়তু চাকমা সেখান থেকে আমাদের হ্যাঁচকা টানে বের করে আনেন। জয়তুর চিত্র পৃথিবীর সবকিছুই ঊর্ধ্বতন কোনো নির্দেশকে ডিঙিয়ে যাওয়ার সাহস দেখায়। আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি যেমন আনার বাস্তবতা, জয়তুর ছবি তেমনি পাহাড়ি জীবনের বাস্তবতা।

জয়তু বাস্তবতা সেলফ–সেন্সরশিপের চাপে ‘মিনিমাল’ চরিত্র পেয়ে থাকতে পারে। সংকটের বয়ানের চেয়ে তিনি চিহ্ন রচনার দিকেই ছুটে গেছেন বেশি। জয়তুর ছবিতে সেসব চিহ্ন কিংবা কখনো কখনো প্রতীক হয়ে ওঠা ইমেজ যথেষ্ট বাঙ্ময়।

জয়তু চাকমার ছবি আমাদের মনে মিশেল ফুকোর ক্ষমতার ভাষ্যটি জাগিয়ে তোলে—আমাদের শিল্পীরাও যেন শিল্পের ইতিহাস নির্মাণ করেছেন ক্ষমতার বলয়ের ভেতর থেকেই। তাঁদের আঁকা পাহাড়ের জীবন অদ্ভুত, আদুরে ও সুন্দর।

বাংলাদেশের শিল্পের ইতিহাসের যে অঙ্গুলিনির্দেশের ছাপ প্রায় সর্বত্র, জয়তু চাকমার ছবি তার বিপরীতে দাঁড়িয়ে। তাই বলে তিনি রাজনৈতিক ছবি রচনা করেননি, নিজেদের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার কথাই বলেছেন। আর্ট ক্যাম্প বা ভ্রমণবিলাসী স্যুভেনিরের শিল্পের সামনে তাঁর ছবি জিজ্ঞাসাচিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

শার্মিলি রহমানের কিউরেশনে ‘রাংঢ়াং পাখি যেভাবে ডাকে’ শিরোনামে জয়তু চাকমার প্রদর্শনী চলছে কলাকেন্দ্রে। চলবে ১৪ মে পর্যন্ত।