এ কী ভানুমতী, এ কী ইন্দ্রজাল!

মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাসের পাশে ঝুলছেন ডায়নামো
মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাঁচকলা দেখিয়ে বাসের পাশে ঝুলছেন ডায়নামো

শেরশাহ ঘোড়ার ডাকের প্রচলন করেন। শিক্ষকের মুখে এই কথা শুনে ছাত্রের সরল জিজ্ঞাসা, ‘স্যার, ঘোড়া কি তাহলে এর আগে ডাকত না?’ একইভাবে স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাথায় আপেল পড়ার পর তিনি আবিষ্কার করলেন পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি। তাহলে কি এর আগে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি ছিল না? অবশ্যই ছিল। না হলে গোলাকার এই পৃথিবীতে আমরা কীভাবে লেপটে আছি? পৃথিবী চুম্বকের মতো তার গায়ে আটকে রেখেছে আমাদের। তবে এই পৃথিবীর কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে কাঁচকলা দেখাতে পারেন, অন্তত আমাদের সাদা চোখে দেখার অভিজ্ঞতায় তেমনটাই মনে হয়। এই সেদিন যেমন লন্ডনের পথচারীদের চোখ কপালে তুলে দিলেন ব্রিটিশ জাদুশিল্পী ডায়নামো।

লন্ডনের বিখ্যাত লালরঙা দোতলা বাস ঘেঁষে দুই হাত দুদিকে ছড়িয়ে দিয়ে শূন্যে ভেসে থাকতে দেখা গেল তাঁকে। চলন্ত বাসটিতে ডান হাতে আলতো ছোঁয়া দিয়ে রেখেছিলেন নিজের স্টিভেন ফ্রেইন নামটি ছাপিয়ে ডায়নামো নামে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই তরুণ। বাসের গতির সঙ্গে সমানতালে এইভাবে ছুটেছেন ডায়নামো। চলতি পথে বেশ ‘রিল্যাক্স মুডে’ দেখা গেল তাঁকে। পকেট থেকে মুঠোফোন বের করে ছবিও তুললেন আশপাশের।

আর সেই ‘আশপাশে’ তখন তুমুল শোরগোল। ছুটন্ত বাসের গা ঘেঁষে এভাবে এক তরুণকে শূন্যে ভেসে ছুটতে দেখে রীতিমতো বিস্ময়ে হতবাক অনেকে। কেউ কেউ আচমকা এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করেও উঠেছেন। ছবি তোলার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল। ২৩ জুন ডায়নামো এই কাণ্ড ঘটানোর দিন থেকেই ব্রিটেনের সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে তাঁকে নিয়ে শোরগোল চলছে। কীভাবে তিনি এই ঘটনা ঘটালেন এ নিয়ে চলছে তর্ক-বিতর্ক। টেলিগ্রাফসহ শীর্ষ ব্রিটিশ দৈনিকগুলোতেও ঠাঁই পেয়েছেন ডায়নামো।

কোমল পানীয় পেপসির পণ্য পেপসি ম্যাক্সের প্রচারণার অংশ হিসেবে এই ‘পাবলিক স্টান্ট’টি করেছেন দুই ডেভিড—ব্লেইন আর কপারফিল্ডের যোগ্য উত্তরসূরি ডায়নামো। ইউটিউবে এর যে দুই মিনিট সাত সেকেন্ডের অফিশিয়াল ভিডিওটি (http://www.youtube.com/watch?v=G06xdAEYcjM) ছাড়া হয়েছে, তাতে দেখা যায়, আমুদে ভঙ্গিতে হেলেদুলে হেঁটে এসে বাসটির পাশে দাঁড়ান ডায়নামো। এরপর একটু ঝুঁকে উড়ে গিয়ে বাসের দোতলার সমান উচ্চতায় পৌঁছে যান। এরপর বাসটি যাত্রা শুরু করে। তিনিও সেই গতিতে শূন্যে ভেসে এগোতে থাকেন। সবশেষে গন্তব্যে পৌঁছানোর পর আলতো করে মাটিতে নেমে আসেন। একটি পেপসি ম্যাক্সের ক্যান খুলে গলা ভিজিয়ে নেন।

সত্যিই কি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতা আছে? এ নিয়ে ব্রিটেনের সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে বেশ বিতর্ক শুরু হয়। অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেন। কিন্তু বিজ্ঞানমনস্করা কিছুতেই মানতে রাজি হননি মাধ্যাকর্ষণ শক্তিতে কিছু যায় আসে না ডায়নামোর। এটা তো সত্যিই জাদুকর, বিশেষ করে ‘ইল্যুশনিস্ট’রা

স্রেফ আমাদের চোখে ধোঁকা দিয়ে

চমকে দেন। যেটা দেখে অলৌকিক কাণ্ড মনে হয়, পরে দেখা যায় এর পেছনে আছে সাধারণ এক কৌশল। ডায়নামোর বেলাতেও তা-ই হয়েছে। তাঁকে নিয়ে কৌতূহল বাড়তে থাকলে অবশেষে হেরাল্ড সান ফাঁস করে দিয়েছে নেপথ্যের কৌশলটি। যে ডান হাত দিয়ে বাসটিতে আলতোভাবে ধরে ছিলেন তিনি, সেটি আসলে ডায়নামোর হাত ছিল না।

এটি নকল একটি হাত, আসল ডান হাতটি লুকানো ছিল জামার নিচে। এই নকল ডান হাতটিই তাঁকে ঝুলিয়ে রেখেছিল বাসের পাশে। বাকিটা স্রেফ ভারসাম্য আর ডায়নামোর নিখুঁত অভিনয়ের খেল। স্রেফ এক ভানুমতী, এক ইন্দ্রজাল!

সূত্র: টেলিগ্রাফ ও হেরাল্ড সান