বংশগতভাবে গান আমার কণ্ঠেও ভর করেছে

>

আসরে গান গাইতে বসলে ‘আমি নেই ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়’ গানটিই বেশি পছন্দ শাহাদুজ্জামানের। ছবি: খালেদ সরকার
আসরে গান গাইতে বসলে ‘আমি নেই ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়’ গানটিই বেশি পছন্দ শাহাদুজ্জামানের। ছবি: খালেদ সরকার

শাহাদুজ্জামান। মূলত কথাসাহিত্যিক হলেও গান, চিত্রকলা ও চলচ্চিত্র নিয়ে রয়েছে তাঁর বিস্তর আগ্রহ। তিনি লিখেছেন তাঁর প্রিয় ৫ নিয়ে

১. প্রিয় বই
‘লেটার টু এলগ্রেকো’র রহস্যময় ঘোর

সারা জীবনে পড়া এত অগুনতি বই থেকে একটা বই বেছে নেওয়া তো অসম্ভব কাজ। আমি বরং চোখ বুজে মনের ভেতর হাতড়াই। একটা বইয়ের নাম খুঁজতে গিয়ে মনে ভেসে ওঠে গ্রিক লেখক কাযান যাকিসের উপন্যাস লেটার টু এলগ্রেকোর নাম। এক তরুণের পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে, মার্ক্স থেকে গৌতম বুদ্ধে হৃদয়নিংড়ানো আত্মিকযাত্রার নিবিড় গল্প। আশির দশকে আমার তারুণ্যে বইটা পড়েছিলাম যখন, আমি নিজেও তখন বিভ্রান্ত হয়ে জীবনের পথ খুঁজে ফিরছি। বইটা পড়তে দিয়েছিলেন অগ্রজ লেখক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। সেই বই পড়ার রহস্যময় ঘোরের কথা এখনো মনে আছে।

২. প্রিয় চলচ্চিত্র
বুঁদ হয়ে আছি ‘আ সেপারেশন’-এ

বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চলচ্চিত্র দিয়ে তাড়িত হয়ে বুঁদ হয়ে থেকেছি অনেকটা সময়। সাম্প্রতিক সময়ে এমন বুঁদ হওয়ার সুযোগ হলো ইরানি চলচ্চিত্রকার আসগার ফারহাদীর আ সেপারেশন ছবিটা দেখে। আব্বাস কিয়োরাস্তামী, মকবুল মাখবালবাফের মাধ্যমে ইরানি চলচ্চিত্রের ভিন্নযাত্রায় মুগ্ধ ছিলাম আগেই। ফারহাদী তাঁর ঘন নাটকীয়তার এ চলচ্চিত্র দিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করলেন। গার্হস্থ্য সম্পর্ক, শ্রেণি, যৌনতার রাজনীতি, ধর্ম–নৈতিকতার টানাপোড়েনের জটিল এক গল্পে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে এই ছবি।

৩. প্রিয় চিত্রকলা
মার্ক শাগালের ‘ওভার দ্য টাউন’

নানা দেশের গ্যালারি ঘুরে বহু চিত্রকলা দেখলেও যে চিত্রকলাটির কথা এ মুহূর্তে মনে পড়ছে সেটি গ্যালারিতে দেখিনি, দেখেছি ছবিতে। চিত্রকলাটি রুশ চিত্রকর মার্ক শাগালের ‘ওভার দ্য টাউন’। শাগাল আমার প্রিয় চিত্রকর, তাঁর অনেক চিত্রকলা সরাসরি ইউরোপের গ্যালারিতে দেখলেও এটি দেখিনি। ১৯১৮ সালে আঁকা এই ছবিতে দেখতে পাই নাজুক নীল এক তরুণ আর তরুণী ভেসে যাচ্ছে এক শহরের ওপর দিয়ে। শাগালের চিত্রকলার চরিত্ররা প্রায়ই এমন মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে গিয়ে ভেসে যেতে চায় শূন্যে, হালকা হয়ে উঠতে চায়। যে তারুণ্যে এই ছবিটা দেখি, তখন নিজের ভেতরও এমন দৈনন্দিন গ্রন্থিমাংসের বন্ধন থেকে ছুটে বেরোবার আকুতি ছিল।

অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের চমৎকার সমন্বয় আছে গংলীর মধ্যে
অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের চমৎকার সমন্বয় আছে গংলীর মধ্যে

৪. প্রিয় নায়িকা
চীনা অভিনেত্রী গংলীর মহাভক্ত

সত্যি বলতে নায়ক-নায়িকার আকর্ষণে চলচ্চিত্র দেখিনি কখনো। দেখেছি চলচ্চিত্র পরিচালকের কথা মাথায় রেখে। ফলে ‘নায়িকা’ শব্দটার চেয়ে নারী অভিনেত্রী কথাটা আমাকে বেশি টানে। একসময় মুগ্ধ হয়ে দেখতাম ভারতীয় অভিনেত্রী স্মিতা পাতিলের অভিনয়। নায়িকার প্রচলিত ধারণার নিটোল, লাস্যময়ী রূপের বদলে স্মিতা হাজির হয়েছিলেন তীক্ষ্ণ-ধারালো এক সৌন্দর্য নিয়ে। অভিনয়ের আটপৌরত্বে চমকে দিয়েছিলেন পার কিংবা সদগতি ছবিতে। আর আমি মহাভক্ত চীনা অভিনেত্রী গংলীর। লাবণ্য, অভিনয় আর ব্যক্তিত্বের এমন চমৎকার সমন্বয় দেখি না বিশেষ। রেইজ দ্য রেডল্যান্টার্ন ছবিতে তাঁকে দেখে একরকম ঘোরের ভেতর পড়ে যাই বলা যেতে পারে।

৫. প্রিয় শিল্পী
কিশোর কুমারকে বেছে নেব

আমার বাবা–মা দুজনেই গান করতেন, ফলে বংশগতভাবে গান আমার কণ্ঠেও ভর করেছে। নানা ঘরোয়া আসরে গান করে থাকি আমি। রবীন্দ্র, নজরুল, আধুনিক পাঁচমিশালি গান। ভেবে দেখলাম, এর ভেতর বিশেষভাবে আমি গাই মান্না দে আর কিশোর কুমারের গান। দুই ধাঁচের শিল্পী দুজন। মান্নার মহাচর্চিত কণ্ঠ আর কিশোরের গানের কোনো তালিমই নেই। বেছে নিতে বললে হয়তো নেব কিশোরকেই। অদ্ভুত উদাত্ত কণ্ঠ তাঁর। সহজাত কণ্ঠে বিচিত্র ধারার গান করে মাতিয়ে রেখেছিলেন বাংলা-হিন্দি গানের জগৎকে। সত্যজিৎ রায় তাঁকে দিয়ে রবীন্দ্রসংগীত গাইয়ে এক নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করেছিলেন আমাদের। আসরে বসলে আমি তাঁর ‘আমি নেই ভাবতেই ব্যথায় ব্যথায় মন ভরে যায়’ গানটা গেয়ে থাকি।