তাঁর আবৃত্তি শুনলে মুগ্ধতার ভেতর থমকে যাই

লুভা নাহিদ চৌধুরী
লুভা নাহিদ চৌধুরী

লুভা নাহিদ চৌধুরী। স্থপতি ও সংগীত অনুরাগী। দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতামূলক প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক তিনি। বলেছেন নিজের প্রিয় ৫ নিয়ে।

১. প্রিয় বই
বইটি পড়ে খুব উদ্দীপ্ত বোধ করেছিলাম
আমি অনেক বই-ই পড়েছি। কিন্তু সমস্যা হলো, এ বয়সে এসে পছন্দের বইয়ের কথা মনে করা খুব কঠিন কাজ। প্রথম দিকে পড়া যে বইগুলো মনে দাগ কেটেছিল, সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল রিজিয়া রহমানের বং থেকে বাংলা। বইটি পড়ে নিজেদের ইতিহাসের প্রতি একধরনের আগ্রহ তৈরি হয় আমার। নিজেদের অতীতটা কেমন, আমরা কোথা থেকে এসেছি—এসব জানার প্রতি একধরনের আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। তখন ছিল আমার এসএসসি পরীক্ষার সময়। তো, কী বলব, বইটি পড়ে খুব উদ্দীপ্ত বোধ করেছিলাম।

২. প্রিয় চলচ্চিত্র
সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ও ‘অপুর সংসার’
এখন তো সিনেমা খুবই কম দেখা হয়। তবে যখন নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখতাম, তখনকার কথা বললে সত্যজিৎ রায়ের পথের পাঁচালী ও অপুর সংসার—এগুলোর কথায় প্রথমে বলতে হবে। এ ছবিগুলোতে যে মানবিক ব্যাপার-স্যাপার বিদ্যমান, তা সহজেই হৃদয়কে স্পর্শ করে। এখানে চলচ্চিত্রের পাশাপাশি আমি মঞ্চনাটকের কথাও বলতে চাই, যখন বুয়েটে পড়তাম, সেই সময়ে ভালো কিছু মঞ্চনাটক দেখেছিলাম। তার মধ্যে অন্যতম হলো থিয়েটারের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় ও কোকিলারা।

৩. প্রিয় শিল্পী
প্রিয় শিল্পীর তালিকা সুদীর্ঘ
আমি বিচিত্র রকমের গান শুনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অতুলপ্রসাদ সেন, কাজী নজরুল ইসলামের গান শোনা হয় প্রচুর। উচ্চাঙ্গসংগীতে সরোদ শুনতে বেশি পছন্দ করি। আলী আকবর খাঁর সরোদ খুব ভালো লাগে। কেননা, তিনি রাগের ভেতরে প্রবেশ করার পথ খোঁজেন, রাগের আবেগকে খুঁজে বের করে আনেন। আবার আমার সেতার শুনতেও ভালো লাগে। বাংলাদেশে কলিম শরাফীর গাওয়া রবীন্দ্রনাথের গান পছন্দ করি। এ ছাড়া দেবব্রত বিশ্বাস, সুবিনয় রায়দের গানও আমার পছন্দের। অতুলপ্রসাদ সেনের গানের কথা যদি বলি, কৃষ্ণা চট্টোপাধ্যায়ের শুরুর দিকের এবং মঞ্জু দত্তের গাওয়া অতুলের গানগুলোই যেন আমাকে বেশি টানে। আর নজরুলসংগীতের ক্ষেত্রে আমার বেশি পছন্দ পুরোনো রেকর্ডগুলো। এই শিল্পীদের গান ভালো লাগার প্রধান কারণ গানের আবেদন ও শৈলী। পাশাপাশি গানের প্রতি তাঁদের নিবেদনের দিকটাও মনে পড়ে। আমার প্রিয় শিল্পীর তালিকা তাই সুদীর্ঘ।

৪. প্রিয় চিত্রকলা
খুব বেশি মনে আছে সুলতানের কাজগুলো
আমার মনে হয়, আমাদের শিল্পীরা এ অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের শিল্পভাষাটি ধরতে পেরেছিলেন। ফলে চিত্রকলায় বাংলাদেশের সমৃদ্ধ একটি জায়গাও তৈরি হয়েছে। তবে আমার প্রিয় চিত্রকলা প্রসঙ্গে বলতে হলে বলব, এস এম সুলতান ও কামরুল হাসান আমার ভীষণ পছন্দের শিল্পী। তাঁদের কাজগুলোই বিশেষভাবে মনে দাগ কেটে আছে। আদতে খুব বেশি মনে আছে সুলতানের কাজগুলো। যে শিল্প আপনাকে ভাবাবে, আপনার মনে দাগ কাটবে, সেটাই আপনার মনের ভেতরে থেকে যাবে। যে শিল্পের মধ্য দিয়ে নিজেকে চিনতে পারি, সেটাই ভাবায়, সেটাই আমার ভালো লাগে।

৫. প্রিয় অভিনয়শিল্পী
ফেরদৌসী মজুমদার আর আলী যাকের
প্রিয় অভিনয়শিল্পীর কথা এলে প্রথমেই বলতে চাই ফেরদৌসী মজুমদার আর আলী যাকেরের কথা। কী অনন্য অভিনয়শিল্পী তাঁরা! তাঁদের অভিনয় আমি মুগ্ধ হয়ে দেখি। ভালো লাগে আসাদুজ্জামান নূরের অভিনয়ও। আর তাঁর আবৃত্তি শুনলে এখনো আমি যা করি, তা হলো—থেমে যাই, মুগ্ধতার রেশের ভেতর থমকে যাই। অনুলিখন: রাসেল মাহ্‌মুদ