নারী শিল্পীদের শিল্পযাত্রা

‘আননোন লাভ–৮০’, শিল্পী: রেবেকা সুলতানা
‘আননোন লাভ–৮০’, শিল্পী: রেবেকা সুলতানা

গ্রামবাংলার জীবনগাথা, নিসর্গবেষ্টিত নগর ও মনোজগতের রসায়নের প্রাধান্য আছে ‘কালারস’ শিল্পীদলের প্রদর্শনীতে। আলিয়াস ফ্রঁসেজ দ্য ঢাকার লা গ্যালারিতে নারী শিল্পীদের দলগত এ প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন ৯ জন। তাঁরা কাজ করেছেন চিত্রকলা ও ভাষ্কর্যমাধ্যমে।

সান্ধ্য-বিকেলে কিশোরীর কোলে ছাগলছানা, আনন্দপ্রিয় দুরন্ত বালকের রিং নিয়ে দৌড়ানো, পদ্মভরা জলাশয়ে পা ভিজিয়ে ডিঙিতে কিশোরীর ধ্যানমগ্নতা—এ রকম অনেক শৈশব স্মৃতি মেটাল ভাস্কর্যে অনুগল্পের মতো সহজ ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন মুক্তি ভৌমিক। টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ভাস্কর্যে একই ধাঁচের সহজ ভঙ্গির গ্রামীণ জীবনের গল্প আছে ফারজানা ইসলাম ও রেহেনা ইয়াসমিনের কাজেও।

এসব কাজ এক পাশে রেখে চিত্রকলার দিকে চোখ রাখলে প্রথমেই নজরে আসবে মণিদীপা দাশগুপ্তের ‘ড্রিমস্কেপ’ সিরিজ চিত্র। এখানে নেই কোনো গ্রামের গল্প, কিন্তু রয়েছে নিসর্গ—নৈসর্গিক পরিপাটি স্বপ্নময় নগর–স্থাপত্য। নকশাধর্মী গাছপালাযুক্ত স্থাপত্য, একটি কাঙ্ক্ষিত স্বর্গীয় কল্প-শহরের আবেশ দেয়। লোকশিল্প থেকে অনুপ্রাণিত এই ধারার কাজগুলোকে ‘আর্ট ডেকো’ হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। একই ধারণের রেবেকা সুলতানার চিত্রকলায় আছে অলংকারধর্মিতা; নারীমুখের একঘেয়েমি উপস্থাপন, যা দৃষ্টিনন্দন হলেও নতুনত্বের দাবি মেটায়নি। কারণ, দর্শক দীর্ঘদিন ধরেই তাঁর একই রকম কাজ দেখে আসছেন। পাশাপাশি ফারহানা আফরোজের কাজে আছে নতুনত্বের সম্ভাবনা। ‘আনএক্সপেক্টেড’ সিরিজ চিত্রে তিনি যুক্ত করেছেন মুখাবয়বের অভিব্যক্তি ও প্রতীক, যা আপাতদৃষ্টিতে ছড়ায় বিমূর্তের আভাস।

‘ইন কোয়েস্ট অব লিবার্টি’ সিরিজ চিত্রে নকশিকাঁথার অলংকারধর্মিতা পাশ্চাত্যের আলোছায়ায় বেঁধেছেন রিফাত জাহান। তাঁর কাজে কারু-মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। একইভাবে রেহেনা ইয়াসমিন তাঁর ‘লাভ’ ও ‘ফ্যামিলি’ শিরোনামের দেয়ালে ঝোলানো নতোন্নত ভাস্কর্যের সঙ্গে ‘ফাউন্ড অবজেক্ট’ (অন্বিষ্ট বস্তু) যুক্ত করে চিত্রে একধরনের কারুকলার মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন।

মনিরা সুলতানা ও শায়লা আক্তারের কাজ মূলত অর্ধবিমূর্ত। বিষয় ও নির্মাণে খুব একটা নতুন কিছু পাওয়া যায় না। উপরন্তু শিল্পীদের কোনো কোনো কাজে দীর্ঘদিন শিল্পচর্চায় সংযুক্ত না থাকার বিষয়টি সহজেই ধরা পড়ে। সব মিলিয়ে নারী শিল্পীদের এই কাজগুলোতে মাধ্যমগত ও বিষয়গত বৈচিত্র্যতার যেমন দেখা মেলে, তেমনি মনোজাগতিক রসায়নের বিষয়ও রয়েছে। আয়োজনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, দেয়ালে টাঙানো নতোন্নত ভাস্কর্য আর ছোট আকৃতির মৃৎ ও ধাতব ভাস্কর্যগুলো অনেকটা দৃষ্টিনন্দন শো-পিসের মতো। অর্থাৎ কাজগুলোয় চারু ও কারুকলা—শিল্পকলার এই দুটি বিষয়ের সমন্বয় ঘটেছে।

২৩ আগস্ট শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি শেষ হবে ৩১ আগস্ট।