আচারের জীবন

বুড়িটা মারা গেছে। লোকটা তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় কিপটেমি করেনি। যা যা দরকার, তার সব আয়োজনই ছিল। মৃতের সব বন্ধুবান্ধব এসেছিল। মাথায় বিরাট বারান্দাওয়ালা হ্যাট আর তুলতুলে লোমের হাইকলারওয়ালা উইন্টার কোট গায়ে চড়িয়ে বিশ্রীদর্শন একপাল বুড়োবুড়ি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এসেছিল। কফিনটা কবরে নামানোর সময় তারা যথেষ্ট নাকি কান্না করছিল। কবর হয়ে গেলে তারা আস্তে আস্তে ছোট ছোট জটলায় ভাগ হয়ে ফিরে যেতে লাগল। তখন ঝমঝম বৃষ্টি হচ্ছিল। জটলাবদ্ধ মাথাগুলোর ওপর মেলে ধরা অনেকগুলো ঘন সন্নিবিষ্ট ছাতায় সৃষ্ট একেকটি চলমান গম্বুজ বাসস্টপের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলল।

ওই দিনই সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে লোকটা বুড়িটার ঘরে ঢুকে তার জিনিসপত্র রাখার কেবিনেট খুলল। সব ড্রয়ার খুলে ফেলল। ভেতরে কী কী আছে, তালাশ করতে লাগল। ভেতরে কী আছে, তা সে জানে না। কী থাকতে পারে—এই কৌতূহল তাকে খোঁচাচ্ছিল। টাকা, লুকিয়ে রাখা শেয়ারবাজারের কাগজ, বৃদ্ধ বয়সে মহাসুখে দিন কাটানোর উপায় নিয়ে টেলিভিশন বিজ্ঞাপনে দেখানো বন্ডের কাগজপত্র—এই রকমের কত কী থাকতে পারে!

কিন্তু তেমন কিছুই মিলল না। আঁতিপাঁতি করে খুঁজে যা যা পাওয়া গেল তা হলো: ১৯৫০ ও ১৯৬০-এর দশকের ইনস্যুরেন্সের কিছু বুকলেট, একটি রাজনৈতিক দলের মেম্বারশিপ কার্ড (কার্ডটি লোকটির বাবার, যে কিনা সমাজতন্ত্রই একমাত্র শাশ্বত ও চিরসত্য মতাদর্শ—এই বিশ্বাসে অবিচল থেকে ১৯৮০ সালে দুম করে মরে গিয়েছিল) ও কার্ডবোর্ড ফোল্ডারে রাবার ব্যান্ডে যত্নে পেঁচিয়ে রাখা তার
নিজের হাতে আঁকা নার্সারি স্কুলজীবনের কিছু ছবি। ছবিগুলোর দিকে চেয়ে বুকের মধ্যে হু হু করে উঠল। এতকাল ধরে তার শৈশবে আঁকা ছবিগুলো যে বুড়িটা পরম মমতায় গুছিয়ে রাখতে পারে, তা তার কল্পনায়
ছিল না।

এগুলোর সঙ্গে একটা নোটবুকও পাওয়া গেল। গোটা নোটবুক আচার, চাটনি আর জ্যাম তৈরির রেসিপিতে ভরা। প্রতিটা রেসিপি আলাদা আলাদা পৃষ্ঠায় শুরু হয়েছে। প্রতিটি রেসিপির জিবে জল আনার মতো একেকটা শিরোনাম। ‘শর্ষে মাখা আচার’, ‘ডায়ানাপছন্দ কুমড়োর আচার’, ‘এভিগনোন সালাদ’, ‘আপেলের খোসার জেলি’—এই রকমের হরেক পদের আচারের রেসিপি।

এত এত রন্ধনপ্রণালির বিশদ বিবরণ লোকটাকে ভূগর্ভস্থ সেলারে (ভাঁড়ার ঘর, বিশেষত মদ সংরক্ষণের কুঠরি) ঢুকতে খোঁচাচ্ছিল। বহু বছর সেলারে তার যাওয়া হয়নি। অথচ এই ছোট্ট সেলারেই প্রয়াত বৃদ্ধাটা অধিকাংশ সময় কাটিয়ে গেছে এবং তা দেখে এই লোকটার কখনো ভাবান্তর হয়নি।

যখন বুড়িটা দেখত লোকটা ভয়ানক সাউন্ড দিয়ে টেলিভিশনে খেলা দেখছে এবং তার দুর্বল স্বরের বিড়বিড় করা খ্যাঁচখ্যাঁচানি সেই উচ্চ শব্দ কমাতে কোনো কাজই করছে না, তখন বুড়ির চাবির গোছা বিরক্তিসূচক ঝনঝন আওয়াজ করে উঠত। দড়াম করে সেলারের দরজা ভেতর থেকে আটকে যেত। তার দীর্ঘ সময়ের অন্তর্ধানকে লোকটা অবলীলায় উৎপাতমুক্ত আশীর্বাদধন্য সময় বলে মনে করত। তখন সে মনের আনন্দে তার সবচেয়ে পছন্দের কাজটি মন দিয়ে করত। মানে, টেলিভিশনের পর্দায় দুই রঙের জামা পরা দুটি গ্রুপের মাঠভরে দৌড়াদৌড়ি দেখতে দেখতে সে ক্যানের পর ক্যান বিয়ার সাবাড় করত।

সেলারটা অসম্ভব পরিপাটি। ঢুকতেই উল উঠে যাওয়া অতি পুরোনো একটা ছোট্ট পাপোশ চোখে পড়ল। তার মনে পড়ল, ও হ্যাঁ, তাই তো! ছোটবেলা থেকেই তো সে এই পাপোশটা দেখে আসছে। পাশেই মখমলযুক্ত হাতলওয়ালা একটা চেয়ার। পরিচ্ছন্ন একটা কম্বল ভাঁজ করে চেয়ারের ওপর রাখা রয়েছে। একটা নাইট ল্যাম্প রাখা আছে। তার পাশেই পড়তে পড়তে ন্যাকড়ার মতো ফ্যাতফ্যাতা করে ফেলা কয়েকটা বই। কিন্তু যেটি দেখে যে কারোর একেবারে যাকে বলে টাস্কি লেগে যাবে, সেটি হলো পলিশ করা আচারের বয়াম ভরা তাক। প্রতিটি বয়ামের গায়ে লেবেল আঁটা। নোটবুকে লেখা নামগুলো এই বয়ামের গায়ে সাঁটা। ‘ঘেরকিনস ইন সাটিসিয়াস মারিয়ানেড, ১৯৯৯ ’, ‘রেড পেপার অ্যাপেটাইজার, ২০০৩ ’, ‘মিসেস জে’স ড্রিপিং’—এই রকমের নানা ধরনের নাম লেবেলে লেখা। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা নাম তার কাছে খুব রহস্যময় ঠেকল। যেমন একটির নাম, ‘অ্যাপার্টাইজড স্ট্রিং বিনস’। বয়ামের মধ্যে মসলা মাখানো বরবটি, মলিন মাশরুম আর রক্তের মতো লাল মরিচ। সে সব বয়াম তাক থেকে নামাল। বয়ামের নিচে কোথাও কোনো অর্থকরী কাগজ কিংবা ভাঁজ করে লুকিয়ে রাখা টাকা আছে কি না, সতর্কভাবে দেখল। কিছু মিলল না। মনে হচ্ছে বুড়ি তার জন্য টাকাপয়সা বলতে কিছু রেখে যায়নি।

লোকটা আগে অন্য রুমে ঘুমাত। এখন সে বুড়ির শোবার ঘরে চলে এল। তার নোংরা জামাকাপড় এই ঘরটাতে ছুড়ে মারল। বিয়ারের কার্টনগুলো এ ঘরে এনে জড়ো করল। খানিকক্ষণ পরপর সে সেলার থেকে আচারের বয়ামগুলো নিয়ে আসতে লাগল। হাতের এক মোচড়ে বয়ামের মুখ খুলে চামচ দিয়ে খেতে লাগল। বিয়ার আর বাদামের সঙ্গে মসলা মাখানো মরিচ অথবা ছোট শসার আচার ভালোই জমে।

সে টেলিভিশনের সামনে বসে তার জীবনের নতুন পরিস্থিতি নিয়ে, জীবনে হঠাৎ করে আসা নতুন স্বাধীনতা নিয়ে চিন্তা করছিল। এখন তাকে টেলিভিশন দেখতে কেউ বাধা দিচ্ছে না, কেউ এসে কানের কাছে গজর গজর করছে না। স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করার পর যে রকম নিজেকে স্বাধীন লাগে, সে রকম লাগছে। সারা দুনিয়া এখন তার কাছে অবারিত মনে হচ্ছে।

মনে হচ্ছে, একটা নতুন জীবন শুরু হলো। গত বছর তার বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে। কিন্তু তার নিজেকে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েট পাস করা তরুণ বলে মনে হচ্ছে। বুড়ির রেখে যাওয়া শেষ পেনশনের টাকাটা প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। তবে বাকি জীবন কীভাবে চলবে, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে যে কদিন লাগবে, সেই কদিন চলার মতো টাকা এখনো আছে। ঘরে যে খাবার আছে, তা দিয়ে আরও কয়েক দিন চলে যাবে। যে টাকা আছে, তা দিয়ে কিছু রুটি, মাখন ও বিয়ার কেনা যাবে। সেগুলো খেতে খেতে কোথায় কাজ খুঁজতে যাওয়া যেতে পারে, তা ভেবে বের করা যাবে।

২০ বছর ধরে বুড়ি তাকে কিছু একটা করার জন্য লাগাতার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছিল। সেসব তার কানে ঢোকেনি। এখন সেটি নিয়ে তার ভাবতে হচ্ছে। সে হয়তো লেবার-এক্সচেঞ্জ অফিসে গিয়ে তার সার্টিফিকেটগুলো জমা দিয়ে আসতে পারে। বুড়ি তার জন্য যে ড্রেসটা ধুয়ে ইস্তিরি করে রেখে মারা গেছে, সেটা পরে শহরের দিকে যাওয়া যেতে পারে। টিভিতে যতক্ষণ না নতুন কোনো ফুটবল ম্যাচ দেখানো হচ্ছে, ততক্ষণ অন্তত সে কাজের সন্ধান করতেই পারে।

এই মুক্তির আনন্দের মধ্যেও সে এক জোড়া বুড়িয়ে যাওয়া পায়ের খসখস আওয়াজের অভাব বোধ করছিল। কত দিন ধরে রোজ তার কানের কাছে উৎপাতের মতো বকর বকর আওয়াজ আসত: ‘টেলিভিশনটাকে একটু জিরোতে দিতে পারিস না? বাইরে গিয়ে একটু হাঁটাচলাও তো করতে পারিস, মানুষজনের সঙ্গে একটু মিশতে তো পারিস! অন্তত কোনো একটা মেয়ের পেছনে ঘুরঘুরও তো করতে পারিস? অকর্মার ঢেঁকি কোথাকার! তুই কি ভাবিস এভাবেই তোর বাকি জীবন যাবে? তোর এখন নিজের বাসায় ওঠা উচিত। এইটুকুন বাসায় আমাদের দুজনের থাকার জায়গা হয় না। তুই বুঝিস না? তোর বয়সী ছেলের এত দিনে বিয়ে করে ছেলেমেয়ে পয়দা করে ছুটির দিনে বউ-বাচ্চা নিয়ে বারবিকিউ নিয়ে মেতে থাকার কথা। তার বদলে একটা বুড়ির ঘাড়ে চেপে বসে খাচ্ছিস, তোর লজ্জা লাগে না? আগে তোর বাপ আমার হাড়-মাংস চিবিয়ে খেয়েছে। এখন খাচ্ছিস তুই। তোর খাবার তৈরি করা, তোর জামাকাপড় ধোয়ামোছা করা, দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনে আনা—সব আমার একার করা লাগছে। তোর এই টেলিভিশনের শব্দ আমাকে ত্যক্ত বিরক্ত করে তুলেছে। তুই সারা রাত ফুল সাউন্ডে টেলিভিশন দেখিস। আর আমি তার শব্দে ঘুমাতে পারি না। রাত ভরে কী ছাইভস্ম দেখিস? তোর এক ঘেয়ে লাগে না?’

তার সেই খ্যাঁচখ্যাঁচ করা কথাগুলো কানে বাজছে।

টেলিভিশনের শব্দ থেকে বুড়িকে আসান দিতে লোকটা একটা ইয়ারফোন কিনে নিয়েছিল। এতে সেই খ্যাঁচখ্যাঁচ করা সাময়িক সময়ের জন্য হলেও বন্ধ হয়েছিল।

দুই দিনেই বুড়ির রেখে যাওয়া চকচকে-তকতকে ঘর নোংরা হয়ে উঠেছে। এখানে-সেখানে ময়লার স্তূপ জমতে শুরু করেছে। বাসি-পচা গন্ধ ধীরে ধীরে গুলিয়ে উঠছে।

একদিন লোকটা দেখল ওয়ার্ডরোবের নিচের তাকে বিছানা-বালিশের একেবারে নিচে আরেকটা আচারের বয়ামের সারি। সে এক এক করে বয়ামগুলো বের করতে লাগল। এখানেও প্রতিটা বয়ামের গায়ে লেবেল আঁটা। লেবেলে আচারের নাম লেখা। কখন বানানো হয়েছে, তার সন-তারিখ লেখা। এই লেবেলগুলো মলিন হয়ে গেছে। অনেকগুলো ১৯৯১ থেকে ১৯৯২ সালে বানানো আচার। কোনোটির গায়ে ১৯৮৩ সাল লেখা। সবচেয়ে পুরোনো যেটি, সেটি ১৯৭৮ সালে বানানো। একটার গায়ে লেখা ‘পাম্পকিন ইন কারান্ট পুরি’, একটার গায়ে লেখা, ‘কারান্টস ইন পাম্পকিন পুরি’—এই রকমের উদ্ভট সব নাম। বয়ামের মধ্যে মমি করা লাশের মতো মসলা মাখানো শসার আচারও আছে। কোনো কোনো বোতলে এমন সব জিনিস আছে, যা তার পক্ষে চেনা সম্ভব হলো না। মাশরুমের আচার দীর্ঘদিন বোতলবন্দী থেকে একেবারে চিমসে গেছে। জ্যাম-জেলি জমে কালো পাথরের মতো হয়ে আছে। বাথরুমের কোনায় রাখা কাপবোর্ডের পেছনে আরও কতকগুলো বয়াম পাওয়া গেল। বুড়ির বিস্ময়কর সব কালেকশন। সব কটিতে আচারজাতীয় খাবার।

লোকটা ভাবতে লাগল, বুড়িটা এসব কেন লুকিয়ে রেখেছিল? সে কি তার হাড়হাভাতে ছেলের ভয়ে লুকিয়ে রেখেছিল? এগুলো কি নিজের জন্য, নাকি ছেলের জন্যই রেখেছিল? মা-বাবা ছেলের ভবিষ্যতের জন্য টাকাপয়সা রেখে যায়। সে কি তার ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এসব রেখে গেছে? ছেলেটা বিয়ার খেতে পছন্দ করে, বিয়ারের সঙ্গে এসব আচার খুব যায়। এই চিন্তা থেকেই কি সে আচারের গোডাউন রেখে গেছে?

লোকটা মেঝের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে বয়ামগুলো রাখছিল আর এসব ভাবছিল। তার মনে পড়ল, সে যখন ইয়ারফোনটা কান থেকে খসিয়ে বাথরুমের দিকে যেত, তখন বুড়ি রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে তার পথ আগলে দাঁড়াত। তারপর গড়গড় করে বলত, ‘পাখির ছানাপোনারাও তো বড় হলে বাসা ছেড়ে উড়ে যায়। সব মা-বাবা শেষ বয়সে একটু বিশ্রাম চায়। কিন্তু তুই যাস না কেন? কেন কাজকর্ম কিছু করিস না?’ তার কথা সে গায়ে মাখত না। পাশ কাটিয়ে বাথরুমে ঢুকে যেত। বাথরুম থেকেই সে শুনতে পেত, ‘আমি বুড়ো মানুষ। এবার আমাকে মাফ কর। যা, কিছু একটা কর। আমি বিশ্রাম চাই।’ গজর গজর করতে করতে বুড়ি ঘুমাতে যেত। পরদিন খুব ভোরে উঠে এমনভাবে থালাবাসন ঝনঝন আওয়াজ তুলে কাজ করত, যাতে সে ঘুমাতে না পারে।

লোকটা ভাবত জগতের সব মা এমনই। ছেলেদের সঙ্গে সব মা-ই খ্যাটরম্যাটর করে, কিন্তু ভালোবাসে। সেই ভাবনায় সে অটল ছিল।

মেঝেতে ছড়ানো একটা বয়ামে তার চোখ আটকে গেল। লেবেলের গায়ে লেখা, ‘স্পঞ্জ ইন টমেটো সস, ২০০১ ’। টমেটো সস তার প্রিয়। সে এক মোচড়ে মুখটা খুলে ফেলল। বাজে একটা গন্ধ ভক করে নাকে বাড়ি দিল। সে বয়ামটা বিনের মধ্যে ফেলে দিল। কিন্তু এগুলোর মধ্যে দারুণ কয়েকটা বয়াম পাওয়া গেল। জিবে জল আনার মতো গন্ধ। জিহ্বায় ছোঁয়ানোর পর কী যে স্বাদ! সে আঙুল দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খেতে লাগল।

আজ পোল্যান্ড আর ইংল্যান্ড ম্যাচ শুরু হয়েছে। খেলার বদৌলতে ঘর ভরে গেছে বিয়ারের ক্যানে। টেলিভিশনের সামনে অনেকগুলো আচারের বয়াম নিয়ে বসেছে সে। একটু পরপর আনমনে বয়ামের মধ্যে হাত দিয়ে আচার তুলে তুলে খাচ্ছে। খেতে খেতে তার পেট ফুলে উঠছে। সেদিকে তার খেয়াল নেই। খেলার উত্তেজনায় এর মধ্যে কতখানি সে খেয়ে ফেলেছে, সেদিকেও সে খেয়াল করতে পারছে না। খেলা শেষে তার মনে হলো মাথাটা কেমন ঘুরছে। তার বমি পাচ্ছে। সে বাথরুমের দিকে এগিয়ে গেল। তার মনে হলো, বাথরুমের সামনে দাঁড়িয়ে বুড়িটা গজর গজর করছে। হঠাৎ সেই গজর গজর গোঙানির মতো মনে হলো। তার মনে পড়ল, সে তো বেঁচে নেই। সে তো তাকে মুক্ত করে দিয়ে চলে গেছে।

ভোর পর্যন্ত বমি হতে লাগল। এত বমির পরও শরীরটা হালকা লাগছিল না। হাসপাতালে ভর্তির পর চিকিৎসক জানাল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। কিন্তু লিভার দেবে, এমন কোনো ডোনার পাওয়া গেল না। অবশেষে অচেতন অবস্থায় লোকটা মারা গেল।

মারা যাওয়ার পর একটু সমস্যা হলো। মর্গ থেকে লাশ নিতে আসার মতো কাউকে পাওয়া গেল না। কেউ যে তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করবে, তেমন কেউ জুটলও না। শেষ পর্যন্ত সেই বুড়ির সেই বুড়ি বান্ধবীরা এল। আবার তারা বিরাট বারান্দাওয়ালা হ্যাট মাথায় দিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে তাকে কবরস্থানে নিয়ে গেল। কফিনটা কবরে নেমে গেলে ছাতামাথায় দিয়ে তারা ধীরে ধীরে স্টেশনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।

অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ