সংস্কৃতির শিকড় সন্ধান ও বিস্তার

শিল্পী: আব্দুস শাকুর শাহ
শিল্পী: আব্দুস শাকুর শাহ

যেসব চর্চার মধ্য রসোপলব্ধি ও সুকুমারবোধের বিকাশ ঘটে, মানুষ মানবিক হয়ে ওঠে, তার মধ্যে সংগীত বোধ হয় খুব অল্প সময়ে শরীর ও মনকে প্রভাবিত করতে পারে। মোহাম্মদ ইউনুসের  বিমূর্তধারার চিত্রে মোহনীয় রং সেই সংগীতের সুর তোলে উচ্চারিত মন্ত্র কাব্যের মতো। ঘন অরণ্যের গাছের ডালে কণ্ঠে সুর মেলায় আব্দুস শাকুর শাহের কালো কোকিল ও হলুদ রঙের পাখি। জাহাঙ্গীর আলমের কল্পিত রাধার মন বুঝি ব্যাকুল হয় কোকিলের ডাকে। এমন একটি গল্পছবি ভেসে উঠেছিল অবিন্তা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে প্রদর্শিত ছবিগুলো দেখে। 

‘সুন্দর পরিবেশ: শিল্পিত জীবন’ মূল প্রতিপাদ্যে চারুকলা উৎসবে স্টুডিওর বাইরে সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে প্রকৃতি প্রত্যক্ষণ, প্রান্তিক মানুষের সঙ্গে আনন্দ–আড্ডায়  ছবিগুলো এঁকেছেন বরেণ্য শিল্পীরা। গাজীপুরের লাল মাটিতে বেড়ে ওঠা সবুজ ঘাস, গুল্মলতা, জলাধার নান্দনিক কম্পোজিশন ধরা পড়েছে নাসরীন বেগমের চিত্রে। বিমূর্ত আঙ্গিকে ভূমিরূপের এই দৃশ্য পাঠ করা যায় ফরিদা জামান ও আবুল বার্​ক আলভীর কাজে। তবে রফি হকের কাজ একটু আলাদা। সম্পূর্ণ নির্বস্তুক চিত্রে তিনি যেন গাজীপুরের লাল মাটির মায়াকে তুলে ধরেছেন রঙের নির্যাসে। সরাসরি গাজীপুরের শালবন কিংবা গজারি বন নিসর্গের সৌন্দর্য যাঁরা এঁকেছেন তাঁদের মধ্যে এম. মুনিরুজ্জামান ও  আহমেদ শামসুদ্দোহার কাজ অন্যতম। নিসার হোসেনের কাজে আছে মানবিক বিপন্নতা কিংবা প্রকৃতি বিপন্নের অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রতীকী আবহ। এবং এরই মধ্যে যেন আশা জাগানো আলোর একটু ছোঁয়া। এই আশা আরও স্পষ্ট হয়েছে শেখ আফজালের মা ও শিশুর স্নেহ বন্ধনেযুক্ত ছবিতে এবং শিশির ভট্টাচার্য্যের ফুল, পাখি, রমণীর অঙ্কিত রেখাচিত্রে। হামিদুজ্জামান খান, মোস্তাফিজুল হক, আফজাল হোসেন, মোহাম্মদ নাজিব, ফারিহা জেবা, মোহাম্মদ ইকবাল, বিশ্বজিৎ গোস্বামী প্রমুখ শিল্পীর চিত্রের বিষয়শৈলীতে অপেক্ষাকৃত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাছে নিজেদের সংস্কৃতির শিকড় সন্ধানে অনুসন্ধিৎসু করতে, মানবিক হতে দায়বদ্ধতার পরিচয় দিয়েছেন। 

বিভিন্ন প্রজন্মের তরুণ চারুশিল্পী, বিভিন্ন স্কুলের ২০০ শিক্ষার্থী এই উৎসবে একসঙ্গে থেকেছেন, খেয়েছেন, লোকশিল্পীদের নির্মাণ দেখেছেন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেছেন এবং ছবি এঁকেছেন। ফলে এই উৎসব শিকড়ের সন্ধান, সুন্দরকে গ্রাহ্য ও অসুন্দরকে বর্জন করার সামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয়েছে। মোহাম্মদ ইউনুসের আহ্বানে গেল বছর গাজীপুরের ভাওয়াল মির্জাপুর হাজী জমিরউদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজে চার দিনব্যাপী দ্বিতীয় চারুকলা উৎসব হয়েছিল। চারুকলা উৎসব উদ্​যাপন কমিটি কর্তৃক বাৎসরিক এ আয়োজনের ৩য়  উৎসব ফেব্রুয়ারি মাসে হবে নীলফামারীতে। অবিন্তা গ্যালারির প্রদর্শনীটি ১৮ জানুয়ারি শুরু হয়েছে শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি।