এই তো বইমেলা!
এবারের বইমেলায় গেট দিয়ে ঢোকার সময় আমার এক করপোরেট হাই অফিশিয়াল বন্ধুকে আটকাল পুলিশ। প্যান্টের পকেট, জামার পকেট হাতড়ে বলল, বিড়ি–সিগারেট খান?
বন্ধু রেগে গেল। আমাকে দেখলে মনে হয় বিড়ি খাই?
ব্যস লেগে গেল তর্ক। পুলিশের সঙ্গে তর্ক কি সোজা ব্যাপার! যাহোক বড় অফিসার এসে ব্যাপারটা সামাল দিলেন। এ তো গেল এক দিন। আরেক দিন আরেকজনকে আটকাল পুলিশ (না, পুলিশ নয়, আনসার বাহিনী হবে, ড্রেসটা অন্য রকম ছিল), যাকে আটকাল সে অবশ্য আমার বন্ধু নয়।
মামা বিড়ি–সিগারেট খাওয়ার অভ্যেস আছে?
হোয়াট? মামা বললেন কেন?
ক্যান, মামা বললে সমস্যা কী?
সমস্যা আছে। আপনি আমাকে মামা ডাকতে পারেন না। নেভার। আমার চৌদ্দ গোষ্ঠীর মধ্যে কোনো বোন নাই...ভাগনে–ভাগনি নাই...কাজেই আমাকে মামা ডাকার কেউ নাই। মামা ডাকে আমি অভ্যস্ত নই। মামা ডাক আপনি ইমিডিয়েট উইথড্র করুন...
লেগে গেল তর্ক, কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান। এর মধ্যে গেটে দুই দল হয়ে গেছে। একদল মামা ডাকার পক্ষে, একদল মামা না ডাকার পক্ষে।
এ তো গেল মেলার গেটের হালচাল। মেলার ভেতরে ঢোকা যাক। ভেতরে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন হাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন নাম না জানা চ্যানেলের অল্পবয়স্ক ডিজিটাল সাংবাদিকেরা। কোনো লেখককে পেলেই ‘বাইট’ (তাদের ভাষায়)!
আচ্ছা, এবারের মেলায় মানসম্মত বই আদৌ কি বের হয়েছে?
অথবা
মেলার পরিসর বড় হয়েছে, কিন্তু পাঠক কি সব স্টলে পৌঁছাতে পারছে?
মেলার দর্শনার্থীরা বই কিনছে না, কারও হাতে বই নেই...এ ব্যপারটা কীভাবে দেখছেন?
কিংবা
শিশু চত্বর কি আদৌ শিশুদের উপযোগী হয়েছে বলে মনে করেন?
শিশুদের বইয়ের অলংকরণ কি আদৌ মানসম্মত হচ্ছে?
অর্থাৎ তারা কোনোভাবেই কোনো পজিটিভ আনসার শুনতে রাজি নয়। আমি এর কারণ জানতে চেয়েছিলাম একজনের কাছে। তিনি জানালেন, পজিটিভ নিউজ কেউ নাকি খায় না। নিউজ আগে আমরা শুনতাম, এখন খাই...কী জ্বালা!
তবে সব মেলাতেই কিছু ট্রাজিক ঘটনা থাকে। কিছু তরুণের বই শেষ পর্যন্ত আর বের হয় না, প্রকাশকেরা কথা রাখে না। সেই সব তরুণেরা বিষণ্ন বদনে মেলায় ঘুরে বেড়ায়। এমন একজনকে আমিও পেয়েছিলাম। সে জানাল, প্রকাশক কথা দিয়েছিল, শেষ দিন হলেও বই তারা বের করবে। কিন্তু প্রকাশক কথা রাখেনি।
এক দিক দিয়ে কিন্তু ভালোই হয়েছে। সান্ত্বনার সুরে আমি তাকে বলি।
কেন?
তোমার প্রথম বই বের হওয়ার দিনটি নিশ্চয়ই সেলিব্রেট করতে প্রতিবছর?
তা হয়তো করতাম।
এ বছর শেষ দিনে তোমার প্রথম বই বের হলে সেটা হতো ২৯ ফেব্রুয়ারি!
তরুণের ঠোঁটে সূক্ষ্ম হাসির রেখা দেখা যায় যেন। বলল, ‘চলেন, আপনার সঙ্গে একটা সেলফি তুলি।’
তোলো।
সেলফিশের মতো মেলার এক কোনায় বই বের হওয়া আর বই না–বের হওয়া আমরা দুই লেখক সেলফি তুলি! এই তো আমাদের চলে যাওয়া বইমেলা!