শামসেত তাবরেজীর একগুচ্ছ কবিতা

খালাম্মা নিজের হাতে রাঁধলেন পায়েস

বললেন, এই ছেলে সবটুকু খাবি।
চিনিতে উছলে’ যদি মনের খায়েশ,
একদিন বৈখরির তলদেশ পাবি।


হেন দুটি চোখ মোর পিট পিট নাচে,
একবার গিয়ে পড়ে খালাম্মার তিলে।
আর-বার ছায়া-ছায়া জানালার কাচে,
যেমনি রেখেছে হাত বারান্দার গ্রিলে।


অধিক মিষ্টি লাগা ওই মুখখানি
আমার রক্তে ঢালে আরও ইনসুলিন।
এদিকে খালাম্মা করে হাত টানাটানি
ইঙ্গড়া পিঙ্গলে বাজে মেনুহিন।


তালতোবা না পেয়ে দিই আমি ছুট
দুটি মুখ একলগে বাঁধিয়া পাঁজরে,
এক লম্ফে পার হয়া হাবিয়া মরুৎ
পড়ে থাকি এক শ চার ডিগ্রি জ্বরে।


খোয়াবেও আসেন তারা ডাইনির রূপে,
জলপট্টি দিয়া করে তাগড়া জোয়ান।
নিক্ষেপ করেন শেষে মরণের কূপে
আড়চোখে দেখেন তা বুড়া দারোয়ান!

সাম্প্রতিক

ইচ্ছা যা ছিল সব দ্রবীভূত
ভোর সকালেই কাজের চাপ,
নিজের রূপেই সে অভিভূত
মোবাইলে আসে কুপ্রস্তাব।

কে কাকে ডাকছে যাচ্ছে না বুঝা
হলুদ হচ্ছে হঠাৎ লাল,
অসুখ সারাতে এসেছে ওঝা
হৃৎপিণ্ড দিচ্ছে জঞ্জাল।

মন্ত্রণালয় তোতলামি করে
নিশান ওড়ায় বোবা সমাজ,
লেখে কারা নাম সাদা অক্ষরে
সাদার উপরে করে বিরাজ।

বন্দীরা করে হাসাহাসি খুব
মাড়ি খুলে রাখে টেবিলের ’পর,
তৃপ্তিদায়ক খানা স্তূপ স্তূপ
ভাড়া করে আনা নারীর ধড়।

জ্বলন্ত বাঘ নিভে গে’ বিড়াল
মাচানের কোণে দিয়েছে ঘুম,
এখন যৌথ হবে খিলাল
রক্তে লাফাবে ভাজা উড়-ম!

রাষ্ট্র পররাষ্ট্রের বক
চঞ্চুতে গাঁথে নাগরিক মাছ,
তাই দেখে কাঁদে অধ্যাপক
মরে যায় কেন জ্ঞানের গাছ!

তাহলে ঘরে শুয়ে-বসে রবে
অভিভূতা যে দেখেছে রূপ?
প্রস্তাব মতো সাড়া দিয়ে হবে
ফড়িয়ার তরে অন্ধকূপ?

শুরু আর শেষ একই পঙ্‌ক্তিতে
প্রগতি কোথায়? সূর্যনাদ?
তিনিও লুকান নিজ আরশিতে
ঘোলে মিটিয়ে দুধের স্বাদ!

বাংলাদেশ

এইটুকু জায়গা আমার। এক চিলতে একটু কবর।
জবা ঝুঁকে রবে অথবা রবে না
খাটাখাটনি শেষে হাই তুলবে কেউ
একবার ভয়ডর ভুলে চুমু খাবে জের ও জবর
প্রমাণ করবে গাল টিপে, না আরবে না
বাংলায়—এই ছোট দেশে বঙ্গোপসাগরের ঢেউ
আছড়ে আছড়ে পড়ে, সেটুকুই আমার কবিতা
আম্মা-আব্বা নাই, ফরজ আদায় করছে যে ও আমারই মিতা!

শিকার

বালুতে বুক ঘষা মস্ত আকাশে
একটা সারস গেঁথে আছে
গুলিটা লেগেছিল সিধা
জবান যেখানে মুখ খোলে

শিকারি শহীদ-পাখিটিকে
ফেলে রেখে চলে যায় আরেক শিকারে

বাকার্ডির বিকারে

কুড়-য়া

কুসুম কৌমার্য নাই, যত আলো ভয়ে নিভে গেছে।
সতত সকাল আসে—এ গল্প অনেক হয়েছে, তাই আর
বিশ্বাস করে না কেউ, এমনকি যারা গঠিবেন ঘর
তাতালের মুখ থেকে আলোর বদলে অন্ধকার ঝরে
ঢেকেছে বসুন্ধরা আর তা অনেকটাই দখলীকৃত
নতুন শহর হয়ে ঝলসে দ্যায় লারেলাপ্পা লাওয়ারিশ চোখ

শোধবোধ হারিয়ে—কানা কবিয়াল হাঁ করে রয়েছে
কখন যে ঢুকে পড়ে ছেঁড়া দৈনিকের আকাশ—
ময়লা, তা সত্ত্বেও তাজা কিছু খুন, গুম ও গুমোট
চাপা কথা প্রমাণবিহীন হয়ে থাকে। কেউ তাকে যদি
রাস্তাটা পার করে দিত? এ আবেগে একজন এসে
দ্যাখে রাস্তাই নাই—পদ্মার ওপর দিয়ে ডানা মেলে
একটি ড্রাগন পুল ছুটে যাচ্ছে নিরুদ্দেশ দেশে
এ নাকি পোষ্য ড্রাগন, পেলেপুষে বড় করতে তাকে
অনেক খরচা, ড্রাম ড্রাম ঘাম জমা হচ্ছে মাঠে

সেই ঘামে ঘুম আসি আসি
রাত—রাত্রিভর ডাইনির কুৎসিত হাসি
সহসা বাতাস বয়ে আনে
জ্ঞানে-অজ্ঞানে

কুরুয়ার কী ডাক গো, হম্বিতম্বি, যেতে হবে এক্ষুনি ঘরের বাইরে
মিরুজিন নদীর ওপাড়ে বোয়ালখালী না ধল্লা বহির-বাইরে
ছেলে না মেয়ে না মোমেনসিং গীতিকা সেলাই আলগা হলো যার
সব পাতা উড়ে যায় মুখস্থ পয়ারে যেথায় দীর্ঘাঙ্গিনী আজ করেন বিহার

ও কুরুয়া ডাকিস না—হেন রাতে বউ
দাবি করে: ঐখেনে আকাশের চাঙ্গে নিয়া থোও
মড়ার এ কাম আমি কেমনে বা করি
কেমনে এ বিরাইতে গলাখানি জাপটিয়া ধরি
নিশ্বাসে তার বিশ্বাস নাই এক ফোঁটা
কেমনে গিলিব জ্ঞান প্রেমের আনাই-গোটা
এখনো যে কাঁচা ভারী, বীজ মোটে মনোসিজ না
শরতে শবরী দুধে ভিজে বিছনা
এ কাত হইতে অন্য কাতে যদি রাখি দেহ
গ্রামসুদ্ধ সন্দেহ, ভারী সন্দেহ!

গোমজানি একদিন—তা’বাদে ময়রা—আকাশ ঊর্ধ্বে ধূলাপথ
রাতে গেছে গ্রীষ্মকালীন সাপ ক্ষত করে অড়হর খেত—বর্ষাগন্ধে
তারাদের ইয়ার্কি ফাজলামি কত রঙ্গ তারা যে করল বঙ্গে
ভাই, তা জন্যি সেদিন নামল বেবাকের ওপর লানত।

গোমজানি একদিন—ময়রা, তা’বাদে বাঁথুলির চর
মেলে না শিথান, পালানের নিচে সবুজ সবুজ আন্ধার
ভ্যাবলার মতন তাকায়ে—এখানেই শোভাদির নির্জন ঘর
ছিল বলে গল্পেগাথায় লেখা, তারপাশে নুরুন্নাহার
সোয়ামি বিহনে থাকে, এ গল্পও বাতাসের মুখ থেকে শোনা
জিবে তার ছিটা লেগে সুগন্ধী ঘামের পবিত্র লোনা
ফিরে এল দিন—

মিসর সভ্যতা গলা মোম

তারপর

হোম! হোমাগ্নি! হোম!
হোম! হোমাগ্নি! হোম!