লেখকদের নিয়ে কেন আমরা গালগল্প করতে ভালবাসি

টল-টেল বলে একটা ব্যাপার পৃথিবীর মানুষেরা চর্চা করে এসেছে প্রাচীন যুগ থেকেই। প্রথম যুগের নাবিকেরা তিমি মাছ দেখে কল্পনা করেছে সমুদ্রদানোর। মাঝরাতে সরাইখানা থেকে বাসায় ফিরতে গিয়ে কোনো পুরনো কবরে পড়েছে এক মাতাল। তারপর উঠে দাঁড়িয়েছে টলতে টলতে। দৃশ্যটা কেউ দেখে ভেবেছে কবর থেকে মরা মানুষ উঠে এল।

ধরেন, কেউ নিজ গ্রাম থেকে বহুদূরের এক বাজারে গিয়েছে। সেখানে কোনো দোকানদার ইঁদুরে খাওয়া জিনিসপত্র আগুনে পোড়াচ্ছে, এই দৃশ্যটি আরও অনেকের সঙ্গে সে দেখল। ঘরে ফিরে রাতের অন্ধকারে বউ-বাচ্চাদের বলল, 'কী আর কব, পুবপাড়া বাজারে তো আজ আগুন লাইগে গিছিল। পাশের পুকুরেত্থে পানি আইনে সেই আগুন নিভাতি জান বাইর হয়ে গিছিল সবার।'

পরদিন সকালে পুকুরঘাটে গোসলের সময় লোকটার বউ অন্য বউঝিদের এই ঘটনাটা না বলে পারল না। সে কণ্ঠে রহস্য আনল, 'শোন কী হইছে, পুবপাড়া বাজারে আগুন লাগিছিল। সেই আগুন কি এমনিতে নেভে? এক পুকুর পানি শেষ করা লাগিছে।' তখন কেউ প্রশ্ন করল, 'পুকুরের পানি শেষ হয়ে গিলি মাইনষে খাওয়ার পানি কনেত্তে পাবে?' বউটি তখন জবাব দিল, 'এইটে কেউ কতি পারে না। পানি যেই শেষ হয়, অমনি নাকি পুকুর আবার ভইরে ওঠে।' কদিন পর সারা গ্রামে কথাটা ছড়িয়ে পড়ল, পুবপাড়ায় এক পুকুর আছে, যার পানি কখনো শেষ হয় না।

কেউ আর তলিয়ে দেখল না যে পানি আসলে কোনো পুকুরেই শেষ হয় না, একান্ত খরার মৌসুম বা এঁদো হয়ে ওঠা ছাড়া। ধীরে ধীরে আরও যোগ হল, পুবপাড়ায় এক পুকুর আছে, যার পানি খেলে সমস্ত অসুখ সারে, পারিবারিক অশান্তি দূর হয়, শত্রু হয়ে যায় মিত্র। দলে দলে লোক সেই পুকুরের পানি আনতে ভিড় জমাল। পুবপাড়াবাসী প্রথমে আমলে না নিলেও অনেকে একসময় বিশ্বাস করতে শুরু করল, এত লোক আসছে, ব্যাপারটা কি মিথ্যে হবে? কান কথায় যোগ হলো লৌকিক বিশ্বাস। মানে ব্যাপারটা লোকায়ত হয়ে গেল ধীরে ধীরে।

এভাবে অনেক ঘটনাই মানুষের মুখে মুখে যুগ পাড়ি দেয়। যা একসময় নিতান্তই কেচ্ছা ও অনুমানের সমষ্টি থাকে, মুখে মুখে চর্চার ফলে একটা পর্যায়ে সেসব মিলেই তৈরি হয় নতুন একধরনের সত্য। এই ব্যাপারটা মানবসভ্যতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা শুধু নিজেদের চারপাশের ঘটনাকেই এভাবে গালগল্পে রূপান্তর করে ক্ষান্ত হই না। দূরবর্তী বিখ্যাত মানুষদের নিয়ে আলাপ করতেও আমাদের ভাল লাগে। যাঁদের নামই কেবল আমরা শুনেছি, খ্যাতির বিবরণ আমাদের কাছে পৌঁছেছে, তাঁদের রহস্যময় জীবন আমাদের নিত্য যাপনে বেস রসাল এক বিষয় হয়ে ওঠে।

এই রসের পরিণতি সব সময় যে ভালো হয়, তা-ও নয়। যেমন নিচের গল্পটা। আমরা বড় হয়েছিলাম এটা শুনতে শুনতে। হেমন্ত বা শীতের আরামদায়ক বিকেল ছিল সেসব। উঠোনে বা কাঠের চেয়ারে বসে পান মুখে পুরে আমাদের কোনো কোনো কাকু বা মামারা এই গল্প করতেন। জড়ানো কণ্ঠ, চাপা চাপা কৌতুকি শব্দ।

'এই যে তুমরা এত রবি রবি করো, আসল কাহিনি জানলে লজ্জাই পাইতে।'
'বলেন কী কাকু?'
'ঠিকই কচ্ছি। নোবেল প্রাইজখান না পালি কুথাকার কোন রবীন্দ্রনাথরে মাইনষে গোনত? এই প্রাইজ তো পাওয়ার কথা ছিল কাজী নজরুলির।'
নোবেল প্রাইজটা নিশ্চিত পাবে কাজী নজরুল। বিরাট কবি। জনপ্রিয়তায় আর কাব্যে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে কম কিছু নন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পড়ে গেলেন চিন্তায়। যেভাবেই হোক নজরুলকে ঠেকাতে হবে। তখন মাথায় এল বুদ্ধি। কৌশলে নিজের সৎ মেয়ের সঙ্গে নজরুলের বিয়ে দিলেন। ব্যাস, আর যায় কোথায়। সেই বউ নজরুলকে গোপনে ধুতুরার বিষ খাওয়াতে লাগল। দিনে দিনে পাগল হয়ে গেলেন নজরুল। আর নোবেলটা নিয়ে নিলেন রবীন্দ্রনাথ।

বাংলা ভাষার দুই বড় সাহিত্যিককে নিয়ে এটিই সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় গালগল্প। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পান, নজরুল ১৪ বছরের কিশোর, হিসাবমতো আসানসোলে রুটির দোকানে কাজ করছেন। এই তথ্য আমি জানি একটু বড় হয়ে উঠবার পর।

যা রটে কিছু তো বটে সূত্রটি যে ক্ষেত্রবিশেষে অকেজো, সেটি প্রথম বুঝতে পেরেছিলাম এ গুজবটি থেকে। মুরব্বিদের দেখতাম, এটা বলে তাঁরা বেশ শান্তি পাচ্ছেন, নজরুলের নোবেল না পাওয়া মানে যেন মুসলিমদের নোবেল না পাওয়া। গল্পটায় ছিল সেই ক্ষতের কিছু উপশমের ব্যবস্থা। নজরুলকে অনেকে অভিশপ্তও ভাবতেন। মুসলিম হয়ে সে দাড়ি রাখে নাই, রেখেছে চুল, এটিও তার দুর্ভাগ্যের কারণ।
এ মুহূর্তে মনে পড়ছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মৃত্যু নিয়ে প্রচলিত এক ভয়ানক সন্ধ্যার কথা।

বিভূতি তখন একাকী বসবাস করছেন ঘাটশিলার এক জঙ্গলাকীর্ণ বাড়িতে। প্রতি বিকেলে ঘুরতে বের হন। রোজকার মতো সেদিনও ঘুরছেন। পথে সন্ধ্যা নেমে গেল। ফাঁকা গ্রাম্য রাস্তা। দুদিকে গাছপালা, আর যত দূর চোখ যায় বিরান জমি। সূর্যের আলো কমে আসছে প্রতি মুহূর্তে। ওসবের মাঝখান দিয়ে একদল লোক 'রাম রাম' বলতে বলতে এগিয়ে আসছে। তাদের কাঁধে সাদা কাপড়ে ঢাকা মড়া।

কাছাকাছি হতে বিভূতি জিজ্ঞেস করলেন, 'প্রণাম জানাই। কাকে নিয়ে চলেছ দাদারা?' লোকগুলো দাঁড়িয়ে পড়ল, এরপর কাঁধ থেকে খাটিয়া নামিয়ে লাশের মুখ থেকে কাপড় সরাল। মড়ার মুখ দেখে বিভূতি আতঙ্কে অস্থির হলেন। কারণ মুখটি তাঁর নিজেরই।

এ ঘটনার কিছুদিন পরই বিভূতিভূষণ মারা যান। লেখকের বয়স তখন ৫৫।

মানুষটিকে নিয়ে এমন আধিভৌতিক গল্প তৈরি হবার কারণ হয়তো তার সাহিত্যেই লুকিয়ে আছে। প্রথমত মাথায় আসে তারানাথ তান্ত্রিকের কথা। উত্তমপুরুষে বলা এই গল্পকে অনেকে লেখকের সত্য অভিজ্ঞতা বলে বিশ্বাস করতেন। এ ছাড়া আছে ততোধিক বিখ্যাত 'দেবযান', যে অদ্ভুত অবস্মরণীয় উপন্যাসে জীবন ও মৃত্যুর দেয়াল প্রায় ভেঙে দেখতে চেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের এই মহান কথাশিল্পী।

মৃত্যুর ব্যাপার যখন চলেই এল, মার্ক টোয়েনের এই ঘটনাটা বলার লোভ সামলানো কঠিন। সে সময়ের নামকরা মার্কিন পত্রিকা 'দ্য হেরাল্ড'-এ একবার লেখা হলো, 'জনপ্রিয় বই “হাকলবেরি ফিন”-এর লেখক স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লেমেন্স ওরফে টোয়েন মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি এতই অসুস্থ ছিলেন যে মানসিক বৈকল্য দেখা দিয়েছিল। ভীষণ অর্থকষ্টেও ছিলেন।'

যদিও বড় গুজব হয়ে ওঠার তুলনায় ব্যাপারটা অনেকের কাছে কৌতুকের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কেননা, টোয়েন তখন বহাল তবিয়তে জীবিত। সংবাদটা যখন প্রকাশিত হয়, তিনি লন্ডনে রাণী ভিক্টোরিয়ার ৬০তম জন্মদিনের অনুষ্ঠান কভার করছেন সাংবাদিক হিসেবে। নিজের মৃত্যু সংবাদের বিষয়ে পরবর্তীকালে দারুণ রসিক এই লেখক বলেছিলেন, 'আমার মরার খবরটা একটু বাড়িয়ে-চড়িয়ে লিখেছে ওরা, এমন বিশেষ কোনো ঘটনা ছিল না ওটা।'

এসব তো গেল টুকরো ব্যাপার। এমন লেখকও আছেন, যাঁদের পুরো জীবনটাই চাপা পড়ে গিয়েছে গুজবের আড়ালে। যেমন এডগার অ্যালান পো। নিজের বোনকে বিয়ে করে সংসার করেছেন, এমন দুর্নাম ছিল তাঁকে নিয়ে। আসল ঘটনা ছিল এই: পো তাঁর কাজিন ভার্জিনিয়া ক্লেমকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। আমেরিকায় তখন এটা নিন্দনীয় কাজ ছিল। সুতরাং পো স্থানীয় প্রশাসনে আবেদন করে এই বিশেষ বিয়ের জন্য লাইসেন্স নিয়েছিলেন।

জীবদ্দশায় পো তেমন বিখ্যাত লেখক ছিলেন না। তাঁকে খ্যাতি এনে দেয় রহস্যময় মৃত্যু। ১৮৪৯ সালের কোনো অক্টোবরের সকালে বাল্টিমোরের এক রাস্তায় তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। বিধ্বস্ত অবস্থা, মৃতপ্রায়, এমনকি গায়ের পোশাকটিও তাঁর নিজের নয়। এ ঘটনার চার দিন পর হাসপাতালের বিছানায় তাঁর মৃত্যু হলে পত্রিকাগুলো নানান ধরনের গল্প ফেঁদে বসে। কেউ বলে এই রহস্যলেখক মারা গেছেন সিফিলিসে, কেউ বলেন অতিরিক্ত মদ্যপানই কারণ। উঠে আসে জলাতঙ্ক, কলেরা বা মৃগীরোগে দীর্ঘদিন আক্রান্ত ছিলেন পো—এমন সব ঘটনা।

সবচেয়ে মর্মান্তিক যে কাহিনিটা আছে, সেটা হল পো শিকার হয়েছিলেন কুপিংয়ের। যে রাতের ঘটনা, পো হয়তো কোনো বারে ছিলেন। সেখানে তিনি পড়েন কোনো কুপিং গ্যাংয়ের পাল্লায়। এই গ্যাং তৈরি হতো কোনো কারখানার শ্রমিক বা রাজনৈতিক দলের সন্ত্রাসীদের হাতে। এরা কোনো বিষয়ে জনমত তৈরি করার জন্য আশপাশের পথচারীদের বাধ্য করত ভোট দিতে। ভোট দিতে রাজি না হলে ওই লোককে তারা মারধর এমনকি হত্যাও করত। ডাবল ভোট দেওয়ানোর জন্য বদলে দিত পোশাক।

তবে পোর বিষয়ে সবচেয়ে বড় গুজবগুলো চালু করে দেন তার সাহিত্যিক প্রতিদ্বন্দ্বী রোফাস গ্রিসওল্ড। তাঁর মৃত্যুর অবিচুয়েরি হিসেবে ছদ্মনামে রোফাস লেখেন, 'পো ছিলেন এক মদ্যপ, নেশাড়ু ও উন্মাদ লোক।' এই লেখাটি আমেরিকার অনেক পত্রিকা একসঙ্গে প্রকাশ করে। আজ এত দিন পরও রহস্যসাহিত্যের এই সম্রাটের মৃত্যুবিষয়ক গুজব একবিন্দু জনপ্রিয়তা হারায়নি।

আজ সময় বদলে গেছে। মানুষে মানুষে তথ্যের দূরত্ব গিয়েছে মুছে। কোনো একটা ঘটনার উৎস চাইলেই আপনি খুঁজে বের করতে পারেন। ইন্টারনেট আছে, মেসেঞ্জারে পৃথিবীর নানান প্রান্তের মানুষের সঙ্গে গড়ে উঠেছে আপনার ভার্চ্যুয়াল সমাজ। আছে ই-বই, রেফারেন্স ঘেঁটে দেখা এমন কঠিন ব্যাপার তো নয়। তবু দেখেন, গুজব থেমে নেই। আগে যে গুজব ছড়াত মানুষের পা, গাড়ির চাকা, জলযান আর ডাকে ভর করে, এখন তা ছড়ায় বাতাসের মাধ্যমে।

মানুষ গুজব ছড়াতে কেন ভালবাসে? আমরা কি ইচ্ছে করে কাজটা করি? এর উত্তর স্পষ্ট করে দেওয়া কঠিন। তবে মানবসমাজ একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমের মধ্যে ঘুরপাক খায়। এখানে আমি কী করি, এরচেয়ে আমাকে বেশি ভাবতে হয় লোকে আমাকে কী ভাবছে, তা নিয়ে। সুতরাং যখনই কোনো ঘটনা আমরা কাউকে বলি, আমাদের লক্ষ্য থাকে তা যেন আকর্ষণীয় হয়, ঘটনাটিকে আমরা মূলত ব্যবহার করি নিজের বিশ্বস্ততা ও তথ্য প্রকাশের এক টুলস হিসেবে। সুতরাং আমরা নিজের অজান্তেই একটু একটু করে রং চড়াতে থাকি। কেননা, মানুষ হিসেবে আমাদের অধিক কথা বলার সহজাত প্রকৃতি সব সময়ই আমাদের অবচেতন মনকে নির্দেশ দেয়: বিষয়টি বাড়িয়ে বলো।

আরেকটি কারণ, গুজব ক্ষমতাবানদের অস্ত্র হিসেবেও প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুলবিষয়ক কাহিনিটি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ থেকেই জন্ম নিয়ে থাকবে। ইলেকশনের আগে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে যদি কোনো গালগল্প ছড়িয়ে দেওয়া যায়, সেটি অনেক সময় এক পক্ষের জন্য বুস্টারের কাজ করে। এ ছাড়া মনে পড়ছে সাম্প্রতিক এক বাণিজ্যিক ঘটনা। আমদানি বন্ধ থাকার কারণ দেখিয়ে অকস্মাৎ দেশি বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় হঠাৎ শোনা গেল যে লবণ দুষ্প্রাপ্য হয়েছে। দেশের অনেক জায়গায় তখন লবণের দামও আগুন হয়ে উঠল, যদিও লবণের কোনো রকম সংকট ছিল না। এই গুজবটা ছড়িয়েছিল ব্যবসায়ীরা।

অনেক কথাই বলা হলো। তবে, এই লেখাটি তো এত দূর এসেছে বিশেষ করে সাহিত্যিক গুজবকে কেন্দ্র করে। লেখকদের নিয়ে কেন আমরা গালগল্প করতে ভালবাসি? একটা কারণ হতে পারে খ্যাতির প্রতি সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ ও বিদ্বেষ।

যেমন মিকেলেঞ্জেলো সমকামী ছিলেন, এটা বলে তৎকালীন ইতালিয়ান লোকজন বোঝাতে চাইত, তারা এঞ্জেলোর চেয়ে উন্নত প্রাণী। আবার ফ্রানৎস কাফকা প্রফেটিক ছিলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আলামত বলে গিয়েছিলেন, এই সব অনুমান দিয়ে কি আমরা তার মহত্ত্ব প্রকাশ করতে চাই? নাকি এটা বলে আমরা বুঝিয়ে দিতে চাই যে, 'দেখো, আমি কেমন গভীর বিশ্লেষী পাঠক?' এ সমস্ত আচরণের পেছনেই থাকতে পারে মানব স্বভাবের সেই চিরন্তন প্রবণতা, 'আমি যখন কাউকে উদ্ভট বলে দাবি করি, এটা মূলত প্রমাণ করতে চাই যে আমি নিজে খুব স্বাভাবিক একজন মানুষ অথবা আমিও একজন উদ্ভট মানুষ।'
আরেকটি মজার গল্প বলে এই রচনার সমাপ্তি টানব।

সাল ১৮৬২। দস্তয়ভস্কি তখন এক স্বল্পপরিচিত লেখক। ইউরোপ ভ্রমণে বের হয়েছেন। চার্লস ডিকেন্স সে সময় খ্যাতির তুঙ্গে। লন্ডনে এসে দস্তয়ভস্কি দেখা করলেন ডিকেন্সের সঙ্গে। তাঁদের মাঝে দারুণ বন্ধুত্বপূর্ণ আড্ডা হলো। এই আড্ডার অনেক দিন পর দস্তয়ভস্কি এক চিঠিতে তাঁর বন্ধুকে লিখেছিলেন: ডিকেন্সের কিছু কিছু বই তো আমি পড়েছি। আমাদের সেই মধুর আড্ডায় তিনি বলেছিলেন, 'নিজের উপন্যাসের যত সব ভালমানুষী চরিত্র যেমন লিটল নেল, বার্নবি রুজ—আমি ঠিক এদের মতোই হতে চাই, জানো? আর উপন্যাসের যত ভিলেন আর বদ লোকজন, মানুষ হিসেবে আমি ছিলাম এদেরই মতো—রাগী, নিষ্ঠুর, স্বার্থপর, হিংসুটে।' চিঠিতে দস্তয়ভস্কি আরও লেখেন, 'ডিকেন্স এমনভাবে নিজেকে বর্ণনা করছিলেন, যেন তার দ্বৈত সত্তা আছে।'

অথচ এই চমকপ্রদ সাক্ষাৎটি কোনো দিন ঘটেনি। দুই পক্ষের ঐতিহাসিক ও গবেষকবৃন্দই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন।