রসভরা রসময় রসের কাঁঠাল

কাঁঠাল। কত যে গুণ তার, স্মৃতিচারণার মধ্য দিয়ে কাঁঠালের কড়চা আছে এই লেখায়।

কিছু ফল আছে দেখতে–শুনতে বেশ। সে হিসাবে কাঁঠাল কিন্তু দেখতে আনস্মার্ট। উদর ছড়িয়ে, গা ছেড়ে, পশ্চাৎ গেঁড়ে যেখানে–সেখানে বসে থাকে। ওকে দেখলেই রাজ্যের আলসেমি জেগে ওঠে। কিন্তু কাঁঠাল যে কী মজার, মারাত্মক ও মাথা খারাপ করা ফল, তা তাকে ভালোবেসে না খেলে বোঝা যায় না। কাঁঠাল তার অনন্য রূপ-রস–গন্ধ-স্পর্শ মিলিয়ে এক অত্যাশ্চর্য যৌনাবেদনময় ফল হয়ে আছে। এর পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে তীব্রতা থাকতে পারে, যা অনেকটা ইংলিশ মার্মাইট পছন্দ হওয়া না হওয়ার মতো। ইউ উইল লাভ অর হেট ইট। মাঝখানে কিছু নেই। যে ভালোবাসে, সে এর জন্য দিওয়ানা। আর যে না বাসে, সে তার গন্ধে উদ্গার করতে ছোটে। আমার মা ছিলেন প্রথম ক্যাটাগরির আর আমার পুত্র সজীব দ্বিতীয়।

আমি সিলেটি কন্যা। আমার নানিবাড়ি মৌলভীবাজারের নলদাড়িয়ায়। সেখানে বিস্তর জায়গাজুড়ে ছিল কাঁঠালবাগান। ছোটবেলা সোনা মামা বা ছোট মামার হাত ধরে ওই বাগানের নিচে যখন যেতাম, ঘ্রাণে মাথা না ঘুরিয়ে উপায় থাকত না। ওপরে তাকিয়ে দেখতাম সুপক্ব খয়েরি কাঁঠালের খোঁচা খোঁচা গা ফুটো হয়ে আছে। সে ফুটো দিয়ে দেখা যাচ্ছে ভেতরের সোনা রং। কোন পাখি তাকে খুঁচিয়ে খেয়ে গেছে আর সেখান থেকে গড়িয়ে পড়া সিরাপ ধারা শুকিয়ে চকচক করছে।

ছোটবেলা থেকেই আমার কন্যা ঈশিতা তার নানির কাঁঠাল ভক্ষণ সহোচরী। কাটা কাঁঠাল দেখলে ওর চোখ হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনের ইলাস্ট্রেশনের গল্পের বাচ্চাগুলোর মতো গোল গোল হয়ে যেত। মনে পড়ে, আম্মা রান্নাঘরে কাঁঠাল ভাঙছেন আর সে সুবাসেই ওই অত্তটুকু ঈশিতা খেলা রেখে ফ্রক গুছিয়ে গাছিয়ে পা ছড়িয়ে বসে অপেক্ষা করত। আম্মা কাঁঠাল ভাঙতেন দুপুরের রান্না শেষ করে। ঈশিতা ততক্ষণে একপ্রস্থ রান্নাবাটি খেলা শেষ করেছে। কাঁঠাল খাওয়ার পর তার গায়ে অলিভ ওয়েল মাখিয়ে স্নান দেবে মালেকের মা। জ্যৈষ্ঠের দুপুরে দড়িতে শুকোতে দেওয়া কাপড় সাবানের গন্ধ বাতাসে ভাসিয়ে দিলে আম্মা তার টকটকে লাল কপালের ঘাম মুছে রান্নাঘর থেকে কাঁঠাল হাতে বেরিয়ে আসতেন। হাতের বাটিতে নরম লেইস্যা, লুতলুতা কাঁঠালের কোষ। সঙ্গে ঘরে তৈরি মচমচে মুড়ি। একেকটি কোষ নিয়ে বুড়ো আঙুলে সন্তর্পণে তার বিচি বের করে মুড়িতে ফেলে দিতেন। তারপর সেই রসাল আঠা আঠা ল্যাতল্যাতা কোষটি মুড়ির সাগরে ফেলে গায়ে মুড়ির কোট পরিয়ে ঈশিতার মুখে পুরে দিতেন। ঈশিতা তৃপ্ত মুখে কৌতূহলী চোখে নিজেরটা খেতে খেতে নানিরটা বানানো দেখত। তারপর মুখ হাঁ করে আ আ করে রেডি হয়ে যেত পরের কোষের জন্য। সারা ফ্ল্যাট সুগন্ধে ম–ম করত। সে বড় মনোরম দৃশ্য! যেদিন ওরা কাঁঠাল খেত আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস সেরে ঈশিতাকে গুলশানে নিতে এলে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করেই সে ঘ্রাণ পেতাম।

কাঁঠাল যে কী একটা বহুপ্রজ, বহুমুখী তৃপ্তিদায়ী ফল, তা বলে শেষ করা যাবে না। সাধে একে বাংলাদেশের জাতীয় ফল করা হয়নি। এর একটি ফলে তিন প্রজন্মের আহার হয়। এর প্রক্রিয়া ও প্রস্তুতিই বাড়িতে উৎসব লেগে যায়। খাবার সময় আড্ডা গালগপ্প হয়। কাঁঠাল ধরার কাল থেকে স্তরে স্তরে স্তবকে স্তবকে রূপান্তরিত হতে হতে নানা ভূমিকা রেখে যায়।

কৈশোরে জামালপুরে লীলাদের কাঁঠালগাছের মুচি খেতাম আমি আর লীলা। মুচি সেটাই, যেটা কাঁঠাল না হয়ে অচিরেই ঝরে পড়বে। এমনি খেলে একটু টকটক আর একটু কশটা। মুচি কুচি কুচি করে কেটে পাটায় সামান্য থেঁতলে লবণ, তেঁতুল, তাজা ধনেপাতা, পোড়া মরিচ, ছেঁচা রসুন ও এক চিমটি চিনি দিয়ে আচ্ছা করে মেখে হাতে নিয়ে বেলগাছে হেলান দিয়ে জিহ্বায় টকাস টকাস ধ্বনি তুলে খেতাম। ধনেপাতা না পেলে পড়ার ঘরের পেছনের বাগান থেকে কচি বেলপাতা বা লেবুপাতা কচলে নিতাম। মনেও হতো সঙ্গে ঘ্রাণ খাচ্ছি, তীব্র তিমির ঘ্রাণ!

তারুণ্যে এলে মুচির নাম পালটে হয়ে যায় এঁচড়। তত দিনে তার অপক্ব কচি বিচি ঘিরে মাখন রঙের পরত গড়ছে। তারা কোষের আশপাশে জন্ম নিয়েছে কোষকে গার্ড দেওয়ার জন্য। খোসা কেটে ওই এঁচড় আম্মা রান্না করতেন। সম্ভবত লাল মরিচ ও গোটা সর্ষের ফোড়ন দিয়ে সর্ষের তেলেই হয়তোবা আগে একটু ভাপানো এঁচড় সাঁতলে নিতেন। কাঠের চুলার লাল আগুনে কড়াই থেকে চিরচির কিটকিট শব্দ শুরু হলে তাতে দিতেন বাটা ধনে ও হলুদ, কাঁচা লঙ্কা ও ধনেপাতা। স্কুল থেকে ফিরে গরম ভাতের সঙ্গে মেখে খেতে গিয়ে আমার কাছে লাগত একটু লাছধরা যেন আলুও দিয়েছেন।

ছোটবেলা থেকেই আমার কন্যা ঈশিতা তার নানির কাঁঠাল ভক্ষণ সহোচরী। কাটা কাঁঠাল দেখলে ওর চোখ হ্যান্স ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসনের ইলাস্ট্রেশনের গল্পের বাচ্চাগুলোর মতো গোল গোল হয়ে যেত। মনে পড়ে, আম্মা রান্নাঘরে কাঁঠাল ভাঙছেন আর সে সুবাসেই ওই অত্তটুকু ঈশিতা খেলা রেখে ফ্রক গুছিয়ে গাছিয়ে পা ছড়িয়ে বসে অপেক্ষা করত।

কোনো দিন মন্টির বাসা থেকে নাচের রিহার্সেল দিয়ে এসে দেখতাম হিমসাগর আমগাছের নিচে পাটিতে কাঁঠালপাতার গায়ে লেপটে দেওয়া লেইয়ের মতো একটা আস্তর দিয়ে রোদে পেতে রাখা হয়েছে। এক দিনের রোদেই সে আস্তর পাতা থেকে খুলে নেওয়া যেত। সে কাজটা করতাম আমি আর আমার বিদেশিদের মতো ফরসা চাচাতো বোন রাকু। আব্বা টেনিস খেলে ফিরে এলে সেই পাতলা চিপসের মতো টুকরোগুলো তেলে ভেজে চায়ের সঙ্গে দিলে আমরা বলতাম পাঁপড় খাই। ওই লেইটা সাবুদানা দিয়েও করতেন আম্মা। সে পাঁপড়ে একটা টেক্সচার হতো।

কাঁঠাল কিনে আনার পর কদিন খাটের নিচে রাখা হতো। নানিভাই কাঁঠাল পাকতে সময় নিলে কিলিয়ে না, তার ভেতরে গুল না কী যেন ভেতরে ঠেসে দিতেন। আম্মা তা করতেন না। সুগন্ধ বেরোলে মনা ভাই বা মজিদকে তা বের করে নিতে বলতেন। ওরা হাতে সর্ষের তেল মেখে একটি ধারালো দায়ের মাথা দিয়ে চৌকোণ করে বাইরে থেকে ধরার একটা প্রবেশপথ করত। চৌকোণ চাক তুলে নিলে গোল হয়ে বসা আমি ভাইয়া শোয়েব মাথা নুইয়ে সেই জানালা দিয়ে খুলে দেখতাম খুলে গেছে গেছে সোনার দরজা।

তারপর ওরা অনুরূপভাবেই ঘ্যাচঘ্যাচ করে দাগ দিয়ে পুরু বাকল নিপুণভাবে টেনে টেনে সোনার মটকার মতো কোষ বের করে দিত। কাঁঠালের কোষের আশপাশের পুরু পরতকে কেন কে জানে বলতাম চাবি।

আমাদের ফ্রিজ ছিল না। বীজগুলো রোদে শুকিয়ে পটে তুলে রাখা হতো। জামালপুরে আমাদের মূল ঘর থেকে বিচ্ছিন্ন বৈঠকখানাটা বিচ্ছিন্ন ছিল। তার একভাগে পড়ার নাম করে আমরা সারা দিন এটা-সেটা করার জায়গা। এখানে আম্মার দৃষ্টি এড়িয়ে দু–একটা অবাঞ্ছিত কাজ করার সুবিধাও ছিল। টিনের চালে বৃষ্টি পরার শব্দ শোনার সঙ্গেই আমাদের ভাজা বুট বা তিলের খাজা খেতে ইচ্ছে হতো। আর তখনই কী করে যেন আম্মা অন্তর্যামীর মতো রান্নাঘর থেকে মনা ভাইয়ের হাতে এক থালি কাঁঠাল বিচি, কাটা পেঁয়াজ ও চালভাজি পাঠিয়ে দিতেন।

রাতে খাবার সময় চ্যাপা দিইয়ে তৈরি ঝাল হুটকি সুরুতে (শুটকিঝোল) পেতাম ফালি করা মিষ্টি কাঁঠাল বিচি। লন্ডনে বাংলা দোকানে এই শুকনো কাঁঠাল বিচি তো পাওয়া যায়ই, আরও পাওয়া যায় একই প্যাকেটে কাটা লত্তি, চিংড়ি ও কাটা কাঁঠাল বিচি। একেবারে তৈরি। বাড়িতে নিয়ে মসলা মাখে তেল দিইয়ে বসিয়ে দিলেই হয়। আম্মা ‘বেগম’ পত্রিকার রেসিপি পড়ে কাঁঠাল বিচির সুস্বাদু হালুয়াও করতেন। তবে রসের সত্ত্ব করেননি। শুনেছি সেটারও নাকি তুলনা হয় না। কাঁঠালের রস চিপে আঠা আঠা লাল বিরুন চালের ভাতের সঙ্গে সরপড়া দুধ খেয়েছি। এখনো তা খেতে ইচ্ছে করে। এবার খেলে রবীন্দ্রনাথের রেসিপি অনুযায়ী তাতে একখানা সন্দেশ ফেলে দেব তাতে আর হাপুস–হুপুস করে খাব। পিপীলিকা মন খারাপ করে কাঁদিয়া যাবে।

দেশে থাকার সময় দেখতাম কোরবানির ঈদের সময় লোকে হাঁট থেকে এক হাতে খাসি অন্য হাতে চকচকে পাতার কাঁঠাল ডাল নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ি ফিরছে। অর্থাৎ এ ফলের পাতাও কাজে লাগছে। তো বাকি রইল এর কাঠ? একদিন দেখলাম আব্বার ডিজাইনে আমাদের জন্য কটি হালকা চেয়ার বানাচ্ছে কাঠমিস্ত্রি। শুনলাম, এর কাঠ কাঁঠালগাছের।

একবার কুইন ম্যারি কলেজে রাইটিং ওয়ার্কশপ চলছে। এক মিনিট চোখ বন্ধ করে ভেবে চার মিনিটে লিখতে হবে, আমি যদি গাছ হতে পারতাম, তবে কোন গাছ হতাম? লন্ডন শহরে থাকি, আমার চারপাশে অবিশ্বাস্য মাপের ওক, চমৎকার চেরি, পথে পথে লন্ডন প্লেইনের সারি। এরা আমি যে বিদেশি মানুষ, তার কোনো বাছবিচার করে না, আমার পাসপোর্ট চেক করে না, অ্যাংলো সেক্সানদের মতো ইংরেজি পারি কি না, তা টেস্ট করে না। প্রতিনিয়ত আমার বায়ু শুদ্ধ করছে। কিন্তু কী আশ্চর্য, চোখ বোজা মাত্র তাদের কাউকেই দেখতে পেলাম না। দেখলাম ছোটবেলার সেই আশ্চর্য মিঠা আমড়া, পুকুরপাড়ে থমকে যাওয়া গুচ্ছের কলা, স্থির দাঁড়ানো হিমসাগর আম, আর সারি সারি কাঁঠালগাছ। মনের জিভ জারক রসে ভরে গেল আমড়ার জন্য, নয়ন জুড়িয়ে গেল চম্পা কলার সোনা রঙে। নাকে ভেসে এল হিমসাগরের সুগন্ধ। আর কাঁঠালের কথা মনে হতেই মনে হলো এর অবিস্মরণীয় গুণাগুণের কথা। লিখলাম পরজন্মে আমি সর্বগুণে গুণান্বিত বহুপ্রজ ওই কাঁঠালগাছই হতে চাই। আমার সারা দেহে এমনকি কোমরে, হাতে, পায়েও ঝুলে থাকবে খোঁচা খোঁচা গাওলা সবুজ বাচ্চারা। লেখাটা শেষ করব দেশে গিয়ে কাঁঠাল খাওয়ার এবং একদিন ব্রিকলেন থেকে কাঁঠাল কেনার গল্প দিয়ে।

আমি দেশে, ঈশিতার বনানীর বাসায়। বাইরে আসমানি ধারা। হাওয়া নেই। বজ্রের শব্দও নেই। শুধু গুনগুন গানের মতো বৃষ্টি। কাঁঠালটি অনুজ শোয়েবের নেছারাবাদের নৈসর্গিক বাড়ি থেকে এসেছে। এ কাঁঠাল বড় হয়েছে দোয়েল ও শালিকের মৈথুনতৃপ্ত কাকলিতে। এর নির্যাস তার গুণগত মান বৃদ্ধি করেছে অদূরের আভঙ্গীর পীরের জিকিরের শব্দে। এর সবুজাভ ত্বকের সভ্যতা শাণিত হয়েছে চা–বাগানের ঝরনার সুমিষ্ট শব্দে। এ কাঁঠাল অপেক্ষায় ছিল আমি বিলেত থেকে এলে আমার দাঁতের সঙ্গে রসকথা করবে বলে। ঈশিতার বাসায় দরজা দিয়ে প্রবেশের সময় দেখেই বুঝি, তিনি পুরাই দশ মাস। আমি তাই আয়োজন করে, কানে দুল পরে এসে সুমিষ্ট ও ক্রাঞ্চি কাঁঠাল খেতে বসেছি। ফাটা ধরে থাবা দিয়ে টান মেরে অবাক হয়ে যাই। দেয়ালের গা থেকে উন্মুখ হয়ে আছে যূথবদ্ধ স্বর্ণালি রসের ছোট ছোট মটকা। তেল মাখিয়ে ধরতেই তারা হাতের মুঠোয় শুয়ে যায়। চোখ বন্ধ করে পুরোটা কোয়া মুখে পুড়ে মনে হচ্ছিল চকচক রসটাই মুখে মেখে আমিও সোনালি হয়ে যাই। এর অরগানিক ট্রিটমেন্ট নিই। একেকটি কোয়া মুখে পুরেছি আর কী সর্বনাশ, দাঁতের ফাঁকে ফাঁকে লেগে যাচ্ছে রসের তুফান। কোয়া থেকে রস গলিয়ে জিভটা এপাশ-ওপাশ করে দাঁড়িয়াবান্দা খেলার পর তীব্র ফুর্তিতে তুরুৎ তুরুৎ করে গুলাইল মারার মতো ফেলে দিচ্ছে পিচ্ছিল বীজ। লিপস্টিক লাগানো ছিল না বলে ঠোঁটজোড়া এখন আঠাময় সুধা হয়ে গেল। বুঝলাম, আজ আর আমি মির্জাপুর চা খাব না। এখন বালিশ চাই, বালিশ! এখন এর সঙ্গে না ঘুমালে আর বাঁচব না। তাই খেয়ে হাত না ধুয়ে শুয়ে পড়েছি। ঠিক শিবরাম যেমন পদ্মার ইলিশ খেয়ে হাত না ধুয়ে ফ্লোরে শুয়ে থাকতেন। আমিও তার মতো একটু পরপর হাত শুঁকেছি। হাত শুকে শুকে একা একা হেসেছি।

এখন কোভিডকাল। জানি, বাইরে বেরোতে পারব না। বিমানে চড়ে কি দেশের কাঁঠাল ব্রিকলেন বাংলা টাউনে এসেছে? সেবার দেশ থেকে এসেই ছাতা মাথায় চলে গিয়েছিলাম। দেখি কাঁঠালের পাশে ফড়ফড়ে সাদা কাগজের মোড়কে খোপে খোপে বাক্সে শুয়ে আছে জাফরানরঙা আম। তাদের ম–ম গন্ধ চেপে দিয়েছে গ্রোসারির তাজা ভেরিমাংসের গন্ধ। কলপ দেওয়া দাড়িতে হাত বুলিয়ে এক ভদ্রলোক কুঁতিয়ে কাঁতিয়ে একেকটা কাঁঠাল কাউন্টারে এনে ওজন যাচাই করছেন আর বাংলা টাকায় তা আড়াই থেকে তিন হাজার হয়ে যাচ্ছে দেখেই নামিয়ে নিচ্ছেন। আরও জিজ্ঞেস করছেন,

: বাইছাব ই কাটোল কচকচা না ল্যাটল্যাটা?

: আফনে কুনটা বালা ফাইন?

: ল্যাটল্যাটা।

: জি ইটা ল্যাটলেটা। ভদ্রলোক একটা ভ্যাটভ্যাটা হাসি দিয়ে ক্রেডিট কার্ড বের করেছিলেন! তিনি চলে গেলে দোকানি বলেন, আফা, আফনে কুনটা বালা পাইন।

: কচকচাটা। তিনি অদূরে পুঁইশাকের পাশে শোয়া একটি কাঁঠালের দিকে নির্দেশিকা তুলে বললেন, হটা কচকচা। কিন্তু অত ঢাউস কাঁঠাল তুলে গাড়ি অবধি বহন করা বা খাওয়ার সাধ্য আমার নেই। আমি বললাম, অ!

অন্য আলোতে লেখা পাঠানোর ঠিকানা: [email protected]