প্রাচ্যকলার চিত্রকর

নেচার–৪, শিল্পী: নাজমুল হক
নেচার–৪, শিল্পী: নাজমুল হক

ছবি অনেক কিছুই ধারণ করে—সময়, মনোজগৎ, সমাজ, প্রকৃতি, অঞ্চল প্রভৃতি উপাদান। তবে এসব ছাপিয়ে ছবি রচনায় যে জিনিসটি প্রধান হয়ে ওঠে, তা হলো, সময় ও সমাজের মনোজাগতিক গঠন।
নাজমুল হক, বাপ্পি নামেই যিনি পরিচিত, এই তরুণ শিল্পী সম্প্রতি পাস করেছেন চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগ থেকে। প্রাচ্যকলা বিভাগের উদ্ভবের পেছনে কী ধরনের উপনিবেশিক মনোভঙ্গির উত্তরাধিকার কাজ করেছে, তা নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ঠিক কোন ধরনের চিত্রকলাকে আমাদের দেশে আমরা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ‘প্রাচ্যকলা’ নামে অভিহিত করছি, তা একবার বলে নিতে চাই (কারণ এটি বিশ্বের যেকোনো দেশের একাডেমিক বা সাধারণ ধারণা থেকে আলাদা)। প্রাচ্যকলার অন্তর্গত চিত্রকর্ম বলতে মোগল রাজপুত-ঘরানার সঙ্গে জাপানি প্রথাগত জলরঙের মিশ্রণে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বেঙ্গল স্কুলের করণকৌশল এবং ভারতীয় নন্দনতত্ত্বের কিছু প্রয়োগকেই আমরা প্রধানত বুঝে থাকি।
আলোচ্য শিল্পী নাজমুল হকের শিল্প ও বর্তমান কাজের ধারায় ওই বিভাগের ছাপ আছে। তাঁর নিজের ভাষায় বললে বলতে হবে, ‘আমি ওরিয়েন্টাল পেইন্টিংয়ের স্টাইলকে মডার্ন করতে চেয়েছি অ্যাক্রেলিকে ও ক্যানভাসে কাজ করে।’
শিল্পীর এই বক্তব্য থেকে বুঝতে পারি, তিনি আমাদের প্রচলিত প্রাচ্যকলা-ধারায় কিছু নতুন করণকৌশল সংযুক্ত করতে চান, যা তাঁর কারিগরি চাহিদাকে সন্তুষ্ট করতে ভূমিকা রাখবে। এই বিবেচনায় প্রদর্শনীটির গুরুত্ব আছে। আর কাজটি করতে গিয়ে তিনি ক্যানভাসে পাতলা ওয়াশ প্রয়োগ করে চিত্র রচনার চেষ্টা করেছেন। কৌশলগতভাবে জলরঙের মতো হয়ে ওঠার চেষ্টা আছে। তবে অ্যাক্রেলিক দ্রুত শুকিয়ে যাওয়ায় গভীরতার ঘাটতিও আছে। মনে হয়, ছবির ভাষা রচনায় নাজমুল হক এখনো দ্বিধায় আছেন। এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তাঁর ‘কবিগুরু’ ও ‘নেচার-১’ শিরোনামের ছবি দুটি দেখার পর। ‘নেচার-১’-এর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিময় ‘কবিগুরু’ ছবির তুলনা করলেই আমরা দুটি জিনিস দেখব। এক. করণকৌশলে তাঁর ব্যক্তিগত দক্ষতা, যা দুটি ছবিতেই বেশ স্পষ্ট। দুই. দৃশ্যভাষা নির্মাণের দিক থেকে ছবি দুটি প্রাই দুই মেরুর।
তবে ‘বিউটি অব নেচার’, ‘লাস্ট ইন নেচার’ বা ‘মিস্ট্রি অব নাইট’ শিরোনামের কাজগুলোয় একধরনের দৃশ্যভাষা তৈরির প্রতিশ্রুতি লক্ষ করা যায়। পাশাপাশি ‘বিউটি অব দ্য রিভার-১ ও ২’ এবং ‘নেচার-৩ ও ৫’ শিরোনামের কাজগুলো বলে ভিন্ন সম্ভাবনার কথা। বোঝা যায়, শিল্পী এখনো অনুশীলনরত; কিন্তু বেড়ে উঠছেন নানা সম্ভাবনা নিয়ে।
৪৪টি চিত্রকর্ম নিয়ে প্রগতি সরণির অ্যাথেনা গ্যালারি অব ফাইন আর্টসে ৭ জুন শুরু হওয়া প্রদর্শনীটি চলবে ৩০ জুন পর্যন্ত।