আফগানিস্তানের অমর বার্তা
সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশে বিদেশে পড়ে অভিভূত হননি, এমন বাঙালি গ্রন্থপ্রেমিক কি আদৌ মিলবে? বিশ্ব-রাজনীতির সাম্প্রতিক পটে আফগানিস্তান যখন এক আলোচিত নাম, তখনই বেরোল এর ইংরেজি অনুবাদ ইন অা ল্যান্ড ফার ফ্রম হোম। নাজেস আফরোজ অনূদিত এ বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন আফগান ইতিহাসের একনিষ্ঠ গবেষক ন্যান্সি হ্যাচ ডুপ্রি। এখানে রইল তার বাংলা অনুবাদ
দেশে বিদেশে বইটিতে ১৯২০-এর দশকের আফগানিস্তানের বর্ণনা এক বাঙালি তরুণের জীবনীশক্তিতে টগবগ করছে। তরুণটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ কলকাতার অনতিদূরে শান্তিনিকেতনের মতো উচ্চশিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। সেখানে পড়াশোনার সময় সৈয়দ মুজতবা আলী বিশ্বের বহু পণ্ডিত ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের সংগ্রামীর সঙ্গে আলোচনার সুযোগ পান। সেটি তাঁর চরিত্র গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেসব গুরুগম্ভীর আলোচনার ভার লাঘব করতে তিনি শান্তিনিকেতনের ঘাস-লতা-পাতাপূর্ণ বাগানের সবুজে ডুব মারতেন। এভাবে তিনি প্রকৃতির অকৃপণ দানকে ভালোবাসতে শেখেন। শান্তিনিকেতন ছিল তাঁর কাছে মিলনক্ষেত্র। সেখানে তাঁর মধ্যে সাধারণ মানুষের চিন্তা ও অনুভূতি চিত্রণের আগ্রহ গড়ে ওঠে।
১৯২৭ সালে মুজতবা আলী কাবুলে শিক্ষকতার চাকরি নেন। সময়টি ছিল চাঞ্চল্যকর। কারণ, আফগানিস্তান সে সময় তার তপস্বী জাতির ভাবমূর্তি ঝেড়ে ফেলতে সংকল্পবদ্ধ। তিনি সেখানে দুই বছর অবস্থানের যে স্মৃতি রোমন্থন করেছেন, তা অতীতের আফগানিস্তান-বিষয়ক রচনারীতিতেই গড়ে উঠেছে। সেসব লেখকের মধ্যে অনেকেই আছেন: চীনা তীর্থযাত্রী, ইতালীয় বণিক, মধ্য এশিয়ার বিজয়ী, ব্রিটিশ, ফরাসি ও মার্কিন প্রত্নতাত্ত্বিক, প্রকৌশলী, সৈন্য, সীমানা আঁকিয়ে, কূটনীতিক, গোয়েন্দা, নারী-পুরুষ চিকিৎসক ও বুটনির্মাতা। এঁদের অধিকাংশের লেখাই সুনির্দিষ্ট স্বার্থে রচিত হয়েছে। তবে মুজতবা আলীর বিবরণ ভিন্ন। কারণ, তিনি আফগানিস্তানের আমজনতার সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনার ভিত্তিতে তাদের মূল্যবোধ, মনোভাব, সংস্কার প্রভৃতি নিয়ে লিখেছেন—যার ওপর ভিত্তি করে তাদের বাস্তবতা নির্ধারিত হয়।
ট্রেনের জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বহু পথ পেরিয়ে যায়। পাশাপাশি বদলে যায় ভূচিত্রাবলিও। মুজতবা আলী মরুভূমির শূন্যতার দিকে তাকিয়ে নিমগ্ন হয়ে পড়েন। নিজ দেশের সবুজ শ্যামলিমা তিনি দেখেছেন। মরুভূমির এই শূন্যতাও তাঁর চোখে অবাক বিস্ময় নিয়ে ধরা দেয়। মরুভূমির নিষ্ফলা জমিকে অগ্রাহ্য করে ফুলের গাছে কেমন নাছোড়বান্দার মতো ফুল ফুটেছে—সে দৃশ্য দেখে তিনি বিস্মিত হন। ভূচিত্রাবলির সঙ্গে তাঁর সঙ্গীরাও বদলে যান। তাঁদের শিষ্টতা যেন অফুরান। তাঁরা খুব আনন্দোচ্ছ্বাসে পশতুনদের শৌর্য-বীর্য, সম্মান, আতিথেয়তা ও স্বাধীনতাস্পৃহা নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেন। পেশোয়ারে পৌঁছানোর পর তিনি আফগানদের স্বভাবজাত উচ্ছ্বাসময় সম্ভাষণরীতি দেখার এবং এক প্রসিদ্ধ পাঠান পুলিশ কর্মকর্তার বাড়িতে প্রকৃত আফগানি মেহমানদারির স্বাদ নেওয়ার সুযোগ পান। সেই কর্মকর্তার বাড়িতে হররোজ মেহমানদের আগমন ঘটে।
তবে এসব আনন্দময় আতিথেয়তা সত্ত্বেও সময়ের ব্যাপারে আফগানদের গা-ছাড়া মনোভাবে মুজতবা আলী ক্রমেই বিরক্ত হয়ে পড়েন। কাবুলের বাস কবে ছাড়বে, সে খবর জানতেই দিনের পর দিন চলে যায়। এমনকি বাস ছাড়ার পরও বাস দাঁড় করিয়ে রেখেই যাত্রীরা বাস থেকে নেমে কেনাকাটা করেন এবং বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে যান। কেউই তাতে কিছু মনে করেন না। কাবুলে যাওয়ার পর তাঁর কলেজের ফরাসি অধ্যক্ষ ও শান্তিনিকেতনের এক রুশি সহকর্মীর সহায়তায় মুজতবা আলী শহরের উপকণ্ঠে এক গ্রামে বসবাস শুরু করেন। কাবুলে তখন বিদেশিদের সংখ্যা বাড়ছিল। পাশাপাশি বাড়ছিল স্ত্রীদের সংখ্যাও। তাঁদের সঙ্গে তখন তাঁর সখ্য গড়ে ওঠে। এতে তিনি আরেক অন্তর্দৃষ্টি লাভ করেন। কিন্তু পঞ্জসেরি তাজিক গৃহপরিচারকের কাছ থেকে তিনি যা পেয়েছেন, তার কোনো তুলনা নেই। সেই যুবক তঁাকে আফগানদের প্রকৃত চেতনা সম্পর্কে অবহিত করেছে, যে চেতনায় আবাহন করে আফগানরা বন্ধুত্ব ও আনুগত্য প্রকাশ করে।
নিজের কাজের ঐতিহাসিক পটভূমি উল্লেখ করতে গিয়ে মুজতবা আলী এক ভারতীয় ও আফগান ঐতিহাসিকের অভাব বোধ করেছেন, যে ইতিহাসবিদ সেই দেশের ইতিহাস নিয়ে সারবান কিছু লিখেছেন। এমনকি আজকের দিনেও আফগানরা ইতিহাস পাঠে কমই আগ্রহ দেখায়। তিনি যে গড়পড়তা পর্যালোচনা পেশ করেছেন, তা আসলে সত্য ও অলীক কল্পনার এক কৌতূহলোদ্দীপক মিশেল। তার জট খুলতে হবে। তার পরও চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলার পূর্ববর্তী ঘটনাবলি ও ব্যক্তিত্বের বিষয়টি খোলাসা করতে হবে।
যদিও আফগানিস্তান নিয়ে জারের রাশিয়া ও ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দ্বন্দ্ব ২০ শতকের শুরুর দিকেও ছিল, কিন্তু পরিস্থিতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হয় ভারতের নাগরিক আন্দোলনের তীব্রতার এবং ইউরোপের আকাশে যুদ্ধের ঘনঘটা শুরু হওয়ার কারণে। আমির আবদুর রহমানের ছেলে আমির হাবিবুল্লাহ ১৯০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ঠিক যেমন এ অঞ্চলে আফগানিস্তানের ভূরাজনৈতিক অবস্থান সেই শক্তিগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে, যাদের সক্রিয় তৎপরতার কারণে ইউরোপ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। ভারতের এক স্বাধীনতাকামী বিপ্লবী রাজা মহেন্দ্র প্রতাপ জার্মানিতে গিয়ে কায়সারকে অনুরোধ করেন, যাতে তিনি আফগানিস্তান থেকে ব্রিটিশবিরোধী প্রচারণা শুরু করে সীমান্তবর্তী আদিবাসীদের উত্তেজিত করে তোলেন। একই সময়ে তুরস্কের তরুণ যুদ্ধমন্ত্রী আনোয়ার পাশা জার্মানিকে আফগানিস্তানের কেন্দ্রীয় শক্তির সঙ্গে ঐক্য গড়তে সেখানে যৌথ কমিশন পাঠানোর অনুরোধ করেন।
অন্যদিকে আফগানিস্তানের আমিরের ছোট ভাই জাতীয়তাবাদী মনোভাবাপন্ন নাসরুল্লাহ, আমিরের বড় ছেলে এনায়েতউল্লাহ, তৃতীয় ছেলে আমানুল্লাহ তাঁদের নেতা মাহমুদ তারজির মতো এসব প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। মাহমুদ তারজি বহু বছর নির্বাসনে থেকে দেখেছেন, তরুণ তুর্কিরা কীভাবে আধুনিক তুরস্ককে বদলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তারজি ১৯০৩ সালে সিরীয় স্ত্রী ও পরিবার নিয়ে আফগানিস্তানে ফেরেন। এর মধ্যে তিনি রাজদরবারেও বেশ প্রভাব বিস্তার করেছেন। আমিরের কোনো চাপের কাছে তিনি নতি স্বীকার করেননি। খুব চাতুর্যের সঙ্গে তিনি একজনের বিরুদ্ধে আরেকজনকে লাগিয়েছেন। আর যে ফলাফলই আসুক না কেন, তার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছেন।
১৯১৫ সালে মহেন্দ্র প্রতাপ সিংসহ তুর্কি-জার্মান মিশন কাবুলে আসে। তাঁদের বাগ-ই-বাবুরে রাখা হয়। প্রভূত আতিথেয়তায় আপ্যায়িত করা হলেও তাঁদের জনসমক্ষে আসতে দেওয়া হয়নি, অত্যন্ত কঠোরভাবে আলাদা রাখা হয়েছে। আমিরের সঙ্গে বৈঠকে তাঁরা আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও ব্রিটেনের সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের প্রস্তাব দেন। তুর্কি সেনাদের সহযোগিতায় ভারতের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার প্রস্তাবও করেন তাঁরা। কিন্তু আমির খুব কঠোরভাবে নিরপেক্ষতার নীতিতে অটল থাকেন। মিশন ১৯১৬ সালের মে মাসে কাবুল ত্যাগ করে, যদিও তাঁদের লক্ষ্য অধরাই থেকে যায়। ওদিকে মহেন্দ্র প্রতাপ সিং নিজেকে প্রধান করে কাবুলে ভারতের সাময়িক সরকার গঠন করেন।
পরবর্তী তিন বছরে অনেক পরিবর্তন আসে: ১৯১৭ সালের রুশ বলশেভিক বিপ্লব, ১৯১৮ সালের জার্মান যুদ্ধবিরতি—যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটায়, অটোমান সাম্রাজ্যের পতন, আর ১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জালালাবাদের কাছে শিকারে গিয়ে আমির হাবিবুল্লাহর গুপ্তহত্যা প্রভৃতি। তো কে তাঁর উত্তরসূরি হবেন? সিংহাসনের উত্তরাধিকারী যুবরাজ, নাকি আমির যাঁকে আগেই নির্ধারণ করে গেছেন সেই নাসরুল্লাহ? কেউই না। এদিকে আমানুল্লাহ কাবুলে কোষাগার, অস্ত্রাগার ও ক্ষমতা দখল করে বসেন। প্রচলিত গুজব ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব অনুসারে তিনি তাঁর মায়ের কুটিল বুদ্ধির বলে ক্ষমতা দখল করেন। নাসরুল্লাহ-এনায়েতউল্লাহসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করা হয়, কিন্তু নাসরুল্লাহ ছাড়া অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। ১৯২১ সালে নাসরুল্লাহকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়।
আফগানিস্তানের ইতিহাসে হারেম ষড়যন্ত্রের কমতি নেই। প্রকৃতির দিক দিয়ে সেগুলো সহিংস ও চমকপ্রদ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেসবের জট খোলা কঠিন। তবে এ ক্ষেত্রে আমির হাবিবুল্লাহর সাত স্ত্রী ও প্রায় ৩৩ উপপত্নী থাকা সত্ত্বেও রানিমার যে রাষ্ট্র বিষয়ে হস্তক্ষেপের প্রতিভা ছিল, তাতে আমজনতার সন্দেহ ছিল না। রাজদরবারে আরও নারী ছিল: যেমন মাহমুদ তারজির কন্যা খৈরিয়া, যাঁর সঙ্গে ১৯০৯ সালে এনায়েতউল্লাহর বিয়ে হয় এবং সুরাইয়া, যাঁর সঙ্গে ১৯১৩ সালে আমানুল্লাহর বিয়ে হয়। তাঁদের মা ও আমানুল্লাহর বোনকে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া, আঁটসাঁট টুপির সঙ্গে প্রায় স্বচ্ছ বোরকা পরা এবং জনসমক্ষে পশ্চিমা ঢঙে ছোট স্কার্ট পরায় উৎসাহিত করার জন্য ভর্ৎসনা করা হয়েছিল। তারজির মেয়েরা ফ্যাশনের ধারা তৈরি করেছে। তাদের অনুপ্রেরণায় পশ্চিমা পোশাক সেখানে শিক্ষিত ও মার্জিত নারীদের পোশাকে পরিণত হয়। সেটা আজও রয়ে গেছে। ভারতীয় ও পাকিস্তানি নারীদের সঙ্গে আফগান নারীদের পার্থক্য ঠিক এখানেই। ভারতীয় ও পাকিস্তানি নারীরা নিজেদের জাতীয় পোশাক পরতেই গর্ব বোধ করে।
এই যে আফগানের রাজদরবারের মানুষেরা পুরোপুরি পশ্চিমা ফ্যাশন মেনে নিল, তাতে গ্রামের আমজনতার সঙ্গে তাদের যোজন যোজন ব্যবধান সৃষ্টি হয়। ফলে তাদের কেন্দ্র করে যে গন্ডগোল ধূমায়িত হতে শুরু করে, তারা সেটার গভীরতা বুঝতে ব্যর্থ হয়। আমানুল্লাহ ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসেন। সে প্রচারণা ১৯১৯ সালের মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত টিকে ছিল। প্রকৃত যুদ্ধক্ষেত্রে না হয়ে সে যুদ্ধ সংঘটিত হয় অসংখ্য যুদ্ধ-প্রতিনিধির কাগজপত্রে। তবে এর পরও তিনি যে রকম অস্থির উত্তেজনা নিয়ে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে সংস্কার চালিয়ে যান, আদিবাসীরা তাতে নাখোশ হয়। রক্ষণশীল ধর্মীয় নেতা ও রাজদরবারের বিদ্রোহী নেতারা এসব সংস্কার কর্মসূচিকে তুচ্ছ জ্ঞান করেছেন; সংস্কৃতির জন্য এগুলোকে হানিকর, অযথা ব্যয়বহুল ও আত্মাভিমানী মনে করেছেন। পাগমানে চিত্তাকর্ষক ভবন নির্মাণের তোড়জোড়ের মধ্যে আছে যেমন: বিজয় তোরণ, ক্যাফে বাদনমঞ্চ, বিশাল বাগান, ফোয়ারা, হোটেল, হাসপাতাল, গ্রন্থাগার, থিয়েটার, অ্যাম্ফিথিয়েটার, দৌড় প্রতিযোগিতার মাঠ এবং ডজন ডজন অপরূপ বাড়ি, যার অনেকগুলোই বিদেশি স্থপতিদের তৈরি, যাঁরা অনেকেই এই গ্রীষ্মকালীন কেন্দ্রে উঠেছেন ও বিশ্বব্যাপী সুনাম অর্জন করেছেন।
উত্তেজনা বেড়ে যাওয়া সত্ত্বেও আমানুল্লাহ রানি সুরাইয়াকে নিয়ে বিরাট সফরসঙ্গীসহ ১৯২৭ সালের ডিসেম্বরে ইউরোপ সফরে যান। স্থানীয় পর্যায়ের অসন্তোষ সে সময়ে প্রকাশ্য বিদ্রোহে পরিণত হয়। অভিজাত জালালাবাদ প্রাসাদ লুট ও ধ্বংস হলে আমানুল্লাহ ১৯২৯ সালের জুলাইয়ে তাঁর রোলস রয়েসে চেপে কান্দাহারে পালিয়ে যান। তিন দিনের জন্য রাজত্ব দিয়ে যান এনায়েতউল্লাহর হাতে। সেই এনায়েতউল্লাহও পরিবারসহ তাজিক অভিযাত্রী বাচ্চা সাকাওয়ের হাতে নয় মাসের জন্য শহর ছেড়ে দিয়ে চলে যান। মুজতবা আলী এসব ঘটনার যে বিবরণ দিয়েছেন, তাতে এই অবরুদ্ধ শহরের নিদারুণ যন্ত্রণার বিরল অভিজ্ঞতা আঁচ করা যায়।
আফগানিস্তানে এরপর অনেক উত্থান-পতন ঘটেছে। এই জাতি এখন প্রত্যাশার পাহাড়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তার সামনে অমিত চ্যালেঞ্জ—নতুনের সঙ্গে পুরোনোর মেলবন্ধন ঘটাতে হবে। যে মনোভাবের কারণে আজকের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে, তার সঙ্গে এই গল্পে বর্ণিত মনোভাবের মূলগত পার্থক্য নেই। এসব শিগগির বদলানো যাবে না। সৈয়দ মুজতবা আলী দেশে বিদেশে বইটিতে সে বার্তাই দিয়েছেন, খুব গভীরভাবে।
কাবুল, জানুয়ারি ২০১৫
অনুবাদ: প্রতীক বর্ধন