সেই সব অগ্নিগর্ভ সময়

এ বছর চারুকলায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ১৯৪৮ সালের নভেম্বরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের নেতৃত্বে ঢাকায় সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় আর্ট কলেজ, যা এখন চারুকলা অনুষদ। এ লেখায় ১৯৬৬ থেকে ’৭২ সাল পয৴ন্ত চারুকলার এক অগ্নিগর্ভ সময়ের ছবি ধরা আছে।

১৯৭০ সালে চারুকলার ছাত্রদের মিছিলছবি: তৎকালীন আর্ট কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজউদ্দিনের সৌজন্যে

১৯৪৮ সালের নভেম্বরে ঢাকায় সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত চারুকলা শিক্ষার প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়, এ নভেম্বরে এর পথচলার ৭৫ বছর পূর্ণ হচ্ছে। এ মাইলফলকের অভিঘাত আমাকেও কিছুটা স্মৃতিকাতর করে তুলেছে। মনে পড়ছে ষাটের দশকের শেষার্ধে এ প্রতিষ্ঠানে আমার ছাত্রজীবনের বিদ্যুচ্ছটাময় অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর কথা। সাম্প্রদায়িক ভেদচিন্তায় প্রতিষ্ঠিত একটি রাষ্ট্রের সূচনালগ্নেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন কীভাবে একটি চারুশিল্প বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছিলেন, তা ভেবে অবাক হতে হয়। তাঁর সে শিশুবৃক্ষ আজ পল্লবিত মহিরুহ। নানা ধাপ পেরিয়ে এটি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষদ।

আমার ছাত্রত্ব প্রতিষ্ঠানটির আদি-মধ্য পর্যায়ে। আমাদের কালে এটি আর্ট কলেজ নামে সর্বসাধারণ্যে পরিচিত ছিল, পোশাকি নাম ছিল ইস্ট পাকিস্তান কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস। উচ্চমাধ্যমিকের পর ঢাকায় এসে অনিশ্চিত ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে আর্ট কলেজ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলাম এর স্থাপতিক সৌন্দর্য, বাগান, জলাধার আর প্রকৃতির ভেতর ছাত্রদের আঁকাআঁকির পাঠ নিতে দেখে। আঁকার হাত তো ছিলই, সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। তবে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে লাগে মাধ্যমিক পাস। এর মধ্যে ভর্তি সম্পন্ন হয়ে ক্লাস চালু হয়ে গেছে প্রায় দুমাস। বাবার সঙ্গে অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিনের হৃদ্যতা আছে। অতএব, বাবাকে সঙ্গে নিয়ে আর্ট কলেজে গমন। অধ্যক্ষ জয়নুল আবেদিন একজন পিয়নকে ডেকে বললেন, ‘এরে ফার্স্ট ইয়ার ক্লাসে নবীর (শিল্পী রফিকুন নবী) কাছে নিয়া যাও, কইয়ো আমি পাঠাইছি।’ এভাবে প্রতিষ্ঠানটি এবং তৎকালীন ছাত্র ও জাতীয় রাজনীতির এক বিস্ফোরক পরিস্থিতির সঙ্গে আমার দীর্ঘ এক সম্পর্কের সূচনা ঘটল।

আর্ট কলেজে ওই সময় ছাত্রদের অধিকাংশ আসত একেবারে অজপাড়াগাঁ থেকে। আমার মতো মফস্‌সলি-শহুরে ছেলে ছিল না বললেই চলে।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে অধ্যক্ষ হিসেবে পেলেও তাঁর ক্লাস পাইনি। পরের বছরই তিনি অধ্যক্ষের পদে ইস্তফা দিয়ে অবসর নিয়ে ফেলেন। উপাধ্যক্ষ শফিকুল আমিনই দাপ্তরিক কাজকর্ম দেখভাল করতেন। আমাদের শিক্ষকমহল ছিল তারকাখচিত। অন্যদের মধ্যে তখনকার প্রবীণ শিক্ষক কলকাতা আর্ট স্কুল থেকে প্রশিক্ষিত শফিকুল আমিন, আনোয়ারুল হক, সফিউদ্দিন আহমেদ, খাজা শফিক আহমেদ, হবিবুর রহমানকে পেয়েছি। তখনই খ্যাতিমান মোহাম্মদ কিবরিয়া, আমিনুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আবদুল বাসেত আর কিছুটা বয়োকনিষ্ঠ হাশেম খান, রফিকুন নবী ও মনিরুল ইসলামকে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছি। মীর মোস্তফা আলী, কাইয়ুম চৌধুরী ও সমরজিৎ রায়চৌধুরী অন্য বিভাগের হওয়ায় তাঁদের ক্লাস পাইনি বটে, তবে স্নেহের কমতি হয়নি। প্রথম বর্ষে আমাদের শিক্ষক ছিলেন রফিকুন নবী ও মনিরুল ইসলাম। নবী স্যার ও মনির স্যারের কাছেই স্কেচ ও স্টাডির হাতেখড়ি। দ্বিতীয় বর্ষে হাশেম স্যারের কাছে শিখেছি বিশেষভাবে জলরং। তৃতীয় বর্ষ থেকে চিত্রকলা বিভাগে বাসেত স্যার, আমিনুল ইসলাম স্যার ও আনোয়ার স্যারের মতো শিক্ষকদের পেয়েছি। শিল্প ইতিহাস ও সমাজতত্ত্ব পড়তে হতো; শিক্ষক ছিলেন আবদুল মতিন সরকার ও বুলবন ওসমান। তাত্ত্বিক বিষয়েও ভালো হওয়ায় তাঁদেরও প্রিয়পাত্র ছিলাম। শিল্পাচার্যের অবসরের পর অধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন শফিকুল আমিন স্যার। তিনিও অবসর নিলে অস্থায়ী অধ্যক্ষের দায়িত্বে আনোয়ার স্যার বেশ কিছুদিন ছিলেন। আমি শেষ বর্ষে থাকতে সৈয়দ শফিকুল হোসেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে এসে অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী ও মুস্তাফা মনোয়ার আর্ট কলেজে শিক্ষকতা করেছেন, কিন্তু আমাদের কালে তাঁদের পাইনি।

আর্ট কলেজে ওই সময় ছাত্রদের অধিকাংশ আসত একেবারে অজপাড়াগাঁ থেকে। আমার মতো মফস্‌সলি-শহুরে ছেলে ছিল না বললেই চলে। তুলনায় মেয়েরা ছিল একেবারে বিপরীত কিসিমের। এরা আসত ঢাকার বিত্তশালী এবং কখনো কখনো খ্যাতিমান পরিবার থেকে। অধিকাংশের যাতায়াত ছিল পারিবারিক গাড়িতে। আমাদের এক সহপাঠিনী নিজেই গাড়ি চালিয়ে আসত। আমরা হোস্টেলবাসী ছাত্রদের ছিল পদযুগলই সম্বল। তখনকার আর্ট কলেজ ছিল সর্বাধিক মুক্ত ও প্রগতিশীল শিক্ষালয়। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ছাত্রীরা পরস্পরকে ‘আপনি’ সম্বোধন করত এবং দূরত্ব বজায় রেখে চলত, তখন আমাদের কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে তুইতোকারি চালু হয়ে গেছে, পরস্পরের গাত্র স্পর্শ করেও দুষ্টুমি চলছে। এর মধ্যে কোনো মালিন্য বা হীন মতলব অন্তত আমার কালে দেখিনি। শহুরে বিত্তশালীর কন্যা ও গ্রামের দরিদ্র কৃষকপুত্রের মধ্যে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল, তার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা ছিল না।

সামান্য চিত্রাঙ্কনের শিক্ষা যে এতটা পরিশ্রমসাধ্য, তা ভাবতেই পারিনি। প্রচুর অনুশীলনই সাফল্যের চাবিকাঠি। বিভিন্ন ভঙ্গিমায় মানুষের অবয়ব আঁকা শিক্ষণের জন্য অন্যতম উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হতো দিবসকালে কাঁচাবাজার আর রাত্রিকালে রেলস্টেশন। এই সব জায়গায় বা অন্যত্র স্কেচ বা জলরংচিত্র আঁকতে বসলে লোকে ঘিরে ধরত। অধিকাংশ সাধারণ কৌতূহলে সীমিত থাকলেও মাঝেমধ্যে ভারতীয় গোয়েন্দা পাকিস্তানি স্থাপনার ছবি এঁকে নিচ্ছে, এমন সন্দেহের শিকারও হতে হতো। ১৯৬৫ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের জোশ তখনো কমেনি, কেউ কেউ গুরুতর হেনস্তারও সম্মুখীন হয়েছে।

১৯৬৭ সালে ছায়ানটের উদ্যোগে রমনা বটমূলে নববর্ষ আবাহনের সূচনালগ্নে আর্ট কলেজের ছাত্ররা অনেকেই জড়িত ছিল। সম্ভবত মঞ্চপরিকল্পনা করেছিলেন নিতুন কুন্ডু, তাঁর সহায়তাকারীরূপে সিনিয়র ছাত্রদের অনেকেই ছিলেন। আমি তখনো নিচের শ্রেণির ছাত্র। আমরা ১৯৭০ সাল পর্যন্ত হোস্টেল থেকে দল বেঁধে ভোরের সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছি। তখন বড়জোর শ খানেক মানুষ সেই গাছতলা ঘিরে বসতেন। তাতে আর্ট কলেজের ছাত্রসংখ্যাই ছিল অধিক।

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠছিল। ঊনসত্তর-সত্তরে আমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে সর্বহারার বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়ে গেছে, এখন শুধু একে এনে ফেলাই কাজ। বিপ্লবের সঙ্গে প্রেমের মনে হয় গোপন সম্পর্ক রয়েছে। বিপ্লবের গুরগুর ধ্বনি শোনা গেলেও আগমনে কিঞ্চিৎ বিলম্ব হচ্ছিল। প্রেমের অত ধৈর্য নেই, সবেগে এসে একেবারে দুকূল ভাসিয়ে দিল। আমাদের আর্ট কলেজে প্রেমের প্লাবন বয়ে গেল। সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র জুটি তো হলোই, এমনকি নিরীহ ব্যাচেলর কিবরিয়া স্যারও এক ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের বাঁধনে জড়িয়ে গেলেন। আমারও একজনের সঙ্গে খানিক মন দেওয়া-নেওয়া ঘটল, উপহার বিনিময়ও হলো। অবশ্য এর বেশি অগ্রসর হওয়ার ফুরসত মিলল না, একাত্তর এসে সব তছনছ করে দিল। কে কোথায় ভেসে গেল, জানার উপায়ও রইল না।

১৯৬৯ সালে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন একতাবদ্ধ হয়ে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন এবং ১১ দফা দাবি উপস্থাপন করলে ছাত্র সমাজই চলমান আন্দোলনের নিয়ামক হয়ে উঠল। উদ্বেলিত ছাত্রজনতার সামনে ছাত্রনেতারাই দিতে শুরু করলেন দিকনির্দেশনা। কলাভবন চত্বরে প্রতিদিন বিশাল সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়; পোস্টার, ফেস্টুন, কার্টুন, ব্যানারে সজ্জিত মিছিল নিয়ে আমরা সমাবেশস্থলে হাজির হলে সারা কলাভবন প্রাঙ্গন হাততালিতে ফেটে পড়ত। উদ্দীপ্ত ছাত্রজনতার বিশাল মিছিল উত্তেজনায় টগবগ করতে করতে দৌড়াতে থাকত। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ছিল অবশ্যম্ভাবী, কাঁদানে গ্যাসে আমরা মোটামুটি অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কেউ কেউ পুলিশের লাঠি থেকে বাঁচার উপায় হিসেবে শার্টের নিচে পিঠে কম্বল বাঁধার প্রস্তাব দিল। আমার মতো কম হিম্মতওয়ালাদের মধ্যে পুলিশের হাত থেকে পালানোর সুবিধার জন্য কেড্স কেনার ধুম পড়ে গেল।

উত্তেজনার পারদ তড়তড় করে বাড়তে লাগল। ক্লাসের চেয়ে সভা-মিছিল আমাদের অধিক প্রিয় হয়ে উঠল। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে শহীদ মিনারের বিপরীত দেয়ালের ওপর বিশালাকারের ব্যানারে বাঙালির ইতিহাস ও সংগ্রামের ছবি আঁকল শিল্পীদল, নেতৃত্বে ছিলেন মুস্তাফা মনোয়ার। আমাদের তরুণ শিক্ষকদের অনেকেই হাত লাগালেন। ব্যানার আঁকার বিশাল কর্মযজ্ঞটি চলত আমাদের হোস্টেলে। আমরা ছাত্ররা রং গুলানো, কাঠির মাথায় তুলা জড়িয়ে তুলি বানানো আর রঙের বাটি এগিয়ে দেওয়ার মতো কাজগুলো করতাম। সারা রাত ব্যানার, ফেস্টুন, পোস্টার, কার্টুন আঁকার কাজ চলত। সত্তর-একাত্তরে আমি শেষ বর্ষের ছাত্র, একটু নেতাগোছেরও হয়ে উঠেছি। ব্যানার-পোস্টারের জন্য স্লোগান ও কবিতার চরণ চয়ন করার দায়িত্ব অধিকাংশ আমিই পালন করতাম। প্রচলিত চরণের বাইরে আমি সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদ বা তুর্কি কবি নাজিম হিকমতের কবিতার অংশও ব্যবহার করতাম। একবার আমাদের মিছিলের সামনে বিশালতম ব্যানারের জন্য চয়ন করলাম রবীন্দ্রনাথের কবিতা থেকে ‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী, ভয় নাই ওরে ভয় নাই, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান, ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। সিদ্ধান্ত হলো, হোস্টেলের ছাদ থেকে একতলা পর্যন্ত বৃহৎ ব্যানার ঝোলানো হবে। আমার রচিত ‘স্বাধীনতা আমার স্বপ্ন, ঐক্য আমার শক্তি, মুক্তি আমার লক্ষ্য’ বিরাট একটি লাল কাপড়ে লিখে ঝোলানো হলো। বাক্যটি বেশ কিছু কাগজ সে সময় শিরোনাম হিসেবে ব্যবহার করেছে। শিল্পী সমাজও বসে নেই, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে সভাপতি করে গঠিত হলো ‘বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজ’। শিল্পীদের মিছিলে আমাদের শিক্ষকেরা ছাড়া ছাত্র ও বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত শিল্পীরাও যুক্ত হলেন। শিল্পী সমাজের মিলিত মিছিল সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এসব ডামাডোলের মধ্যে আমি হোস্টেলেই ছিলাম। পয়লা মার্চ থেকে ক্লাস নেই, অধিকাংশ ছাত্র বাড়িতে চলে গেছে, আমরা জনা ১০-১২ ছিলাম। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু রমনা রেসকোর্সের জনসভায় দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেবেন। চারদিকে কানাঘুষা—বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন। সে জনসভায় উপস্থিত একজন হিসেবে নিজেকে এখনো সৌভাগ্যবান মনে করি। কিছুদিন ধরে আমার একটু ঘুসঘুসে জ্বর চলছিল, বাড়ি থেকে অল্প দিনের জন্য ঘুরে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম। সহপাঠী বন্ধু শাহনেওয়াজের কাছে রুমের চাবি দিয়ে ২৪ মে তখনকার সকালের ট্রেন উল্কায় চট্টগ্রামে রওনা দিলাম। পুরো ট্রেন মানুষ আর বাংলাদেশের পতাকায় একাকার, প্রতিটি স্টেশনে হাজার হাজার মানুষ, ট্রেন আর স্টেশনের মানুষের মিলিত গগনবিদারী ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে ট্রেনের শব্দ ঢাকা পড়ে গেছে। বেশ রাতে চট্টগ্রামে পৌঁছালাম। তখনো দুঃস্বপ্নেও জানি না, বন্ধু শাহনেওয়াজ ও অন্য কয়েকজনের সঙ্গে আর জীবনে দেখা হবে না। আর মাত্র এক দিনের হেরফেরে আমারও একই পরিণতি হতে পারত।

আমার আর্ট কলেজজীবনের সমুদয় সম্পত্তি আমার হোস্টেলকক্ষের দেরাজ, স্যুটকেস ও তোশকের তলায় রক্ষিত ছিল। সেনা-অপারেশনের পর অরক্ষিত হোস্টেলটির যাবতীয় মালামাল লুণ্ঠিত হয়। ফলে আজ আমার কাছে ছাত্রজীবনে আঁকা ছবি, আলোকচিত্র বা স্কেচের খাতা কিছুই নেই। বাহাত্তরের এপ্রিলেই আমাদের একাত্তরে অনুষ্ঠিতব্য সমাপনী পরীক্ষাটি সংক্ষিপ্ত আয়োজনে হয়ে গেল। এরপর সদ্য স্বাধীন দেশটিতে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ালাম। শেষ হলো আমার আর্ট কলেজজীবনের স্মৃতিমধুর রোমাঞ্চপূর্ণ অধ্যায়।