পঙ্ক্তিমালা
ঘুম দিবসের সেমিনার
তুমি বিশ্ব ঘুম দিবসের সেমিনারে আমাকে প্রধান অতিথি করেছ।
সভাপতি কে হবেন—কুম্ভকর্ণ নাকি রিপভ্যান উইংকল?
আলোচ্যসূচিতে কি ঘুমের অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যৎ থাকবে?
পাওয়ার পয়েন্টে ঘুমের কবরভূমি দেখানো যেতে পারে।
‘চারদিকে বাঘ। হরিণেরা ঘুমহীন।’
মূল প্রবন্ধে কি বিষয়টা আসবে?
‘ঘুমের জন্ম-ইতিহাস বলুন’, ‘কোন জাতি সবচেয়ে বেশি ঘুমায়?’
‘ঘুম কি জাতীয় সম্পদ হতে পারে?’
‘ঘুমন্ত নদীর কষ্ট কেমন?’, ‘বন্দুক কখন ঘুমায়?’
শ্রোতাদের এই সব প্রশ্নের আমি কী উত্তর দেব ?
প্লেটো কি ঘুম থেকে উঠে এসে বলবেন,
‘তোমরা কি রিপাবলিক পড়েছ?’
লালন এসে বলতে পারেন,
‘ঘুমের দেশে একতারা নেই।’
ক্লিওপেট্রা কি নিমন্ত্রিত?
‘সৌন্দর্যের ঘুম কেমন?’ তাকে জিজ্ঞেস করতাম।
সেমিনার শুরুর আগে একটা নীরব শোভাযাত্রা হলে
পুলিশ কি বাধা দেবে?
প্রশাসনের ঘুম নিয়ে প্রতিবাদ করছে কারা?
ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে কি লেখা থাকবে,
‘শান্তিতে ঘুমাতে চাই,’
‘বহুবর্ণের পোশাক পরা স্বপ্নেরা কি ঘুমের ধর্ষক?’
আমার বক্তৃতায় আমার জানা কেবল তিনটি শব্দই বলতে পারি,
‘জেগে থাকো সারাক্ষণ।’
জাহিদ হায়দার
একাত্তরে খুচরো বৃত্তান্ত
যুক্তিতর্ক অন্ধ-শীতগ্রস্ত
রাতগুলি জেগে আছে
দীর্ঘকাল,
প্রফুল্ল খুন হয়েছে
খুচরো বৃত্তান্ত
তদন্ত অন্ধকারে;
ওড়ে দুঃস্বপ্নের শঙ্খচিল
নিবিড় নৈঃশব্দ্য ভাঙা নিশ্চুপ শব্দ
কেউ এল কি কুয়াশায়!
শুকনো পাতার ওড়াউড়ি—
সোহরাব পাশা
রক্ত আর বন্যা পার হয়ে
রক্তবন্যায় ভাসতে ভাসতে
এখন ঘোলা জলে এসে পড়েছি।
লোকেরা বলছে—
এ জল বড় নোনা
চোখের জল মেশে।
বলো হে মাতৃজননী,
এ হানাহানি, হিংসার রক্তপথ পার হয়ে
কবে
তোমার শস্যশ্যামল ভালোবাসাভরা
উপত্যকায় পৌঁছাব?
শোয়াইব জিবরান
বসন্তদিনে
বসন্ততে ফুর্তি লাগে মনে
অফিসগামী পাখিরা সব
উড়তে গিয়ে, অতর্কিতে থামে।
হন্যে হয়ে যোজন হাঁটা হলে
ধিন–তা তালে কোকিল দেবে ডাক
কুহক–কুহু মনভোলানো ভোরে
বাতাসে আজ বহু রকম বাঁক।
আজ বাতাসে সর্বত্যাগী রোদ
এমন রোদে ঝড়ের পেলে দেখা
দেহের শাখা দস্যু হতে রাজি,
নিকট ঠেলে দূরের ধুলা এসে
আজ সমীরে পাঠাল তার ধ্বনি!
অনেকখানি বাতাস হলো ফলে
হৃদয় হলো ঘাপটি মারা বাঘ!
খুচরো কথা জঙ্গলে থাক পড়ে
মাথার নিচে থাকুক শুধু কাঁধ।
থাকাথাকির উদাহরণ জেনে
আমরা থাকি যোজন কিলো শেষে
শিল্পগীত বসুন্ধরা তবু,
তোমার পথ, কেন্দ্র করে হাসে।
ধ্বংস ধসে মেলানকলি ফিরে
সৌরজগৎ উল্টে যদি যায়
মাতাল বুনো, তুরীয় ঝাঁ ঝাঁ গায়ে
ফাগুনধুলা আটকে রাখা দায়।
নাদিয়া জান্নাত