মহাকাশের মজা কত!
মহাকাশের সঙ্গে তোমার পরিচয়টা কিন্তু সেই ছোট্টবেলাতেই। মায়ের কোলে চড়ে চাঁদমামার সেই ঘুমপাড়ানি গান, ছড়ার বইয়ের পাতায় ‘টুইংকেল টুইংকেল লিটল স্টার’ কিংবা ছবি আঁকার খাতায় বৃত্তাকার কমলা রঙের সূর্য। এই সূর্য, চাঁদ, তারা, নক্ষত্র—এসব নিয়েই তো আমাদের মহাকাশ। মহাকাশটা এতই বিশাল যে এটা নিয়ে যেমন জানার শেষ নেই, তেমনি শেষ নেই এর রহস্যের। মহাকাশ নিয়ে বেশ কিছু মজার তথ্য জেনে নিতে পারো আজ।

খেয়াল করেছ? আকাশে কিন্তু চাঁদ ও সূর্য দুটোই একই আকারের দেখা যায়। তাহলে কে বড়? চাঁদমামা, নাকি সুয্যিমামা? ছোটবেলায় অনেকের মাথায়ই এই প্রশ্ন আসে। আসলে সূর্যের ব্যাস চাঁদের চেয়ে ৩৭৫ গুণ বড়। পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বও চাঁদের চেয়ে প্রায় ৩৭৫ গুণ বেশি। আর তাই পৃথিবী থেকে দুটিকেই প্রায় সমান দেখায়। সূর্যগ্রহণের সময় তাই ‘ছোট মামা’ চাঁদই কিন্তু ‘বড় মামা’ সূর্যকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলে।
পৃথিবীর চেয়ে সূর্য কত বড় জানো? তিন লাখ গুণ বড়। এর চেয়েও মজার ব্যাপার হলো, মহাকাশের সব গ্রহ একসঙ্গে করলে যে আকার হবে, সূর্য তার থেকেও ৭৫০ গুণ বড়। শুনে মনে হচ্ছে সূর্যের চেয়ে বড় বুঝি কেউ নেই তাই না? শুনলে অবাক হবে, ব্যাসার্ধের দিক থেকে সূর্যের চেয়ে ১ হাজার ৭০০ গুণ বড় নক্ষত্রও আছে। ‘ইউওয়াই স্কুটি’ এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় নক্ষত্র।

হ্যালির ধূমকেতুর নাম তো শুনেছ? প্রতি শতাব্দীতেই আকাশে কোনো কোনো তারা অনেক উজ্জ্বলভাবে দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। হ্যালির ধূমকেতু খালি চোখে দৃশ্যমান একমাত্র স্বল্পমেয়াদি ধূমকেতু, যা একজন মানুষের জীবদ্দশায় দুবার দেখা দিতে পারে। প্রতি ৭৫-৭৬ বছর পরপর পৃথিবীর আকাশে এটি দেখা দেয়। ১৯৮৬ সালে এই ধূমকেতুকে শেষবারের মতো দেখা গিয়েছিল। ২০৬১ সালে এটি আবারও পৃথিবীর আকাশে দেখা দেওয়ার কথা। তোমাদের দেখার সুযোগ কিন্তু মিলতে পারে, ক্যামেরা হাতের কাছে রেখে দিয়ো!

তোমার এই বয়সেই ওজন কি খুব বেশি? আম্মু-আব্বু চিন্তিত? তাহলে এক কাজ করো, মঙ্গল গ্রহে চলে যাও! মঙ্গলগ্রহে অভিকর্ষের টান খুবই কম। আর ওজন নির্ভর করে ভর ও অভিকর্ষজ টানের ওপর। তাই যে মানুষটির পৃথিবীতে ওজন ১০০ কেজি, মঙ্গলে গিয়ে তার ওজন মাপলে পাওয়া যাবে মাত্র ৩৭ দশমিক ৭ কেজি!
সেই ১৯৬৯ সালে চাঁদের বুকে পা রেখেছিলেন নিল আর্মস্ট্রং ও বাজ অলড্রিন। মজার ব্যাপার কি জানো? তাঁরা চাঁদে গিয়ে পায়ের আর নভোযানের যে ছাপ রেখে এসেছিলেন, সেগুলো আজীবন থেকে যাবে। কারণ, চাঁদে কোনো বাতাস নেই। তাই ছাপগুলো নিজ থেকে মুছে যাওয়ারও কোনো রকম আশঙ্কা নেই!
ডাইনোসররা কীভাবে হারিয়ে গেল জানো? অনেক বিজ্ঞানীর মতে, সাড়ে ছয় কোটি বছর আগে ডাইনোসরদের পুরো প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল ছুটে আসা কোনো এক অ্যাস্টেরয়েডের আঘাতে। অ্যাস্টেরয়েড বা গ্রহাণুপুঞ্জ হলো সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচ্ছিন্ন অংশ, যেগুলো ঠিক গ্রহ নয়, আবার ধূমকেতুও নয়।

সৌরজগতের উৎপত্তি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি বছর আগে। এদের মধ্যে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস ও নেপচুন গ্রহে কোনো শক্ত ভূমি নেই যে তুমি হাঁটতে পারবে। সবচেয়ে উত্তপ্ত গ্রহ হলো ভেনাস, অর্থাৎ শুক্র গ্রহ। এর সাধারণ তাপমাত্রাই থাকে সাড়ে ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। আর প্লুটোকে এখন গ্রহ বলা হয় না, তা জানো তো? জ্যোতির্বিদদের নতুন সংজ্ঞামতে প্লুটো এখন একটি বামন গ্রহ!
l সাজিদুল হক
সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফি কিডস