বইমেলার নতুন বই

বইমেলায় প্রতিদিনই আসছে নতুন নতুন বই। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণের বাইরেও ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বের হচ্ছে বিশ্লেষণাত্মক বই। নানা ধরনের বইয়ে সরগরম এখন বইমেলা। বইমেলার মাসে আমাদের প্রতিদিনের আয়োজন ‘বইমেলার নতুন বই’। এখানে থাকল কয়েকটি বইয়ের খবর।

‘লেনিন কেন জরুরী’ বইয়ের প্রচ্ছদ

লেনিন কেন জরুরী
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
প্রকাশক: বিদ্যাপ্রকাশ
দাম: ৪২০ টাকা

লেনিনের শতবর্ষে এই প্রশ্ন আবারও এসেছে যে সমাজতন্ত্রী এই নেতা কেন জরুরি। বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর সাম্প্রতিক বই ‘লেনিন কেন জরুরী’র মধ্য দিয়ে প্রশ্নটিকে আবার সামনে নিয়ে এসেছেন।

১৯৯২ সাল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটেছে। সমাজতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ‘নাই’ বলে ধারণা প্রবল হয়ে উঠতে শুরু করেছে, তখনই লেখা হয়েছে এ বইয়ের প্রবন্ধগুলোর অধিকাংশ। মূল প্রবন্ধটির নাম, ‘লেনিন কেন জরুরী’। অন্য প্রবন্ধগুলোয়ও পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্যের কথাই বলা হয়েছে। প্রবন্ধগুলোর মূল বক্তব্য হলো, পুঁজিবাদী ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক অর্থাৎ সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা।

পুঁজিবাদ যে আজ চরম অবস্থায় পৌঁছে ফ্যাসিবাদী রূপ নিয়েছে, তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই এবং বিশ্বব্যাপী এই সচেতনতা ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে যে ঘটনা যেদিকে চলছে, সেদিকে চলতে দিলে মানুষের মনুষ্যত্বই কেবল নয়, তার বেঁচে থাকাটাই হুমকির মুখে পড়বে। সমাধান সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা বটে, তবে সেটা আপনা–আপনি ঘটবে না; তার জন্য সাংস্কৃতিক প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। এসব বক্তব্য লেখকের অন্যান্য বইয়েও রয়েছে, কিন্তু বিশেষভাবেই পাওয়া যাবে বর্তমান প্রকাশনাটিতে।

‘মির্জা গালিবের সঙ্গে দেখা’ বইয়ের প্রচ্ছদ

মির্জা গালিবের সঙ্গে দেখা
জাভেদ হুসেন
প্রকাশক: প্রথমা প্রকাশন
দাম: ৪৮০ টাকা

উর্দু-ফারসি কবি মির্জা গালিবকে নিয়ে এ উপন্যাস। এই উপাখ্যানের পরতে পরতে রয়েছে গালিবের জীবনের বাঁক ফেরানো সব ঘটনা। আছে তাঁর কবিতাও। কবিতা আর কবিজীবন মিলিয়ে অন্য রকম এক গালিবের দেখা মিলবে এই বইয়ে। বইটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, বইটি লেখার সময় তথ্য, সংলাপ ও ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণ—সবই মূল উর্দু-ফারসি উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ফলে এই উপন্যাসে যে মির্জা গালিব হাজির হয়েছেন, তিনি সত্য ইতিহাস থেকে উঠে আসা এক অমর চরিত্র।

ইংরেজদের বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহে সর্বস্ব হারানো এক রাজপুত তরুণ রুসওয়া, যার আজন্ম সাধ মির্জা গালিবের দর্শন পাওয়া। সেই উদ্দেশ্য নিয়ে সে কানপুর থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়। ধ্বংসস্তূপ দিল্লিতে কবির সঙ্গে তার দেখা হয়। ইতিহাসের সেই ক্রান্তিলগ্নে রুসওয়ার চোখে দেখা তখনকার দিল্লি, সেখানকার যমুনাঘাট, চাঁদনি চওক, জামা মসজিদের বাজার আর সাবেকি দিল্লির সংস্কৃতির সঙ্গে আজকের পাঠকের পরিচয় ঘটাবে এ বই। গালিব নিজেকে বলেছেন অনেক দূরের নক্ষত্র। তাঁর প্রবল ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য আর উচ্ছলতার সঙ্গে অদ্ভুত এক উদাসীনতার ছবিও ফুটে উঠেছে এ উপন্যাসে। সঙ্গে আছে গালিবসহ অনেক কবির মনোগ্রাহী বেশ কিছু শের।

‘মানুষের গল্প’ বইয়ের প্রচ্ছদ

মানুষের গল্প
সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম
প্রকাশক: পাঠক সমাবেশ
দাম: ৩৫০ টাকা

এই বইয়ের কয়েকটি গল্প বাংলাদেশের সুন্দরবনঘেঁষা জনপদের লোকবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে লেখা। কয়েকটি গল্প নগরজীবনে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের বিস্তার-সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে। সব মিলিয়ে হরেক রকম মানুষের গল্প আছে সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমামের লেখা এই নতুন গল্পগ্রন্থে।

বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবনধারা কেমন, তাদের লোকবিশ্বাসগুলো কেমন?—এসবও উঠে এসেছে বইয়ে।

কখনো পুরোনো হয় না মানুষের গল্প। বেহুলা বনবিবির কাহিনি শত শত বছর ধরে আমাদের চিরচেনা হয়ে বয়ে চলে প্রজন্ম হতে প্রজন্মে। লোকবিশ্বাস জড়িয়ে এ সাহিত্য মানুষের মনে তৈরি করে জগতের প্রতি এক ভিন্ন স্তরের টান। চারপাশে সবকিছু মিলিয়েই তৈরি হয় মানুষের জীবনের ধারা। সে যে ভূখণ্ডের নাগরিক হোক না কেন, মানবিক সম্পর্কের আদান-প্রদানের ভেতর লুকিয়ে থাকে তার প্রকৃতির প্রভাব। থাকে বিশ্বাসের ধারাটিও। ধর্মের ভেদ থাকলেও দেখা যায়, একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় পাওয়া যায় লোকবিশ্বাসটি আসলে অভিন্ন। সেখানেই মানুষ মূলত অসাম্প্রদায়িক। আর যে অঞ্চলের মানুষ যত বেশি প্রকৃতিনির্ভর, তাদের লোকবিশ্বাসের আচার তত বেশি।

আগেই বলেছি, এ বইয়ের গল্পগুলো সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলীয় জনপদ আর সদর-মফস্‌সলের। বনজীবী, চোর, ভক্ত, সংবাদকর্মী ও আটপৌরে মানুষের গল্প। ফলে এ বইয়ে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের জীবন যেমন প্রতিভাত হয়েছে, তেমনি উঠে এসেছে এই সময়ের বাস্তবতাও।