একটা কালো দেয়ালের মাঝখানে খোলা জানালা। তার সামনে চেয়ার-টেবিলে সাজানো ছোট অফিসঘর। এমন নিরাভরণ আয়তনে শুরু হয় কথা। কথার ভেতর দিয়ে বয়ে চলা কাহিনির বাঁকে বাঁকে উন্মোচিত হতে থাকে আমাদের সমাজের অসংগতির গতিপ্রকৃতি। আর খোলা সেই জানালা দিয়ে সমাজের পাপ বিসর্জন দেওয়ার স্বপ্ন আর সাহসের জন্ম হতে থাকে। জীবনের অনন্ত সম্ভাবনাকে নতুন করে তুলে ধরেছে নাটকের দল বাতিঘর তাদের নতুন নাটক প্যারাবোলায়।
সহজ, স্বতঃস্ফূর্ত ও চমকপ্রদ কথার কমেডিতে ঠাসা প্যারাবোলা। কমেডি আনন্দের পাশাপাশি তির্যক হুলও ফোটায়।
নাটকের শুরুতে ইতালির মিলান শহরের এক থানায় এক ভুয়া মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। এই মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিজেই মানসিক রোগী। নিজেকে সে বিভিন্ন চরিত্রে কল্পনা করে এবং তাদের চরিত্রে অভিনয় করে। এই রোগের নাম হিস্টিরিওম্যানিয়া। কথার জাদুকর এই রোগী অনর্গল বলে চলে ভয়ডরহীন সত্য কথা, যা আর কারও বলার সাহসই প্রায় নেই। সে বলে আইনের প্রয়োগ, বিচারব্যবস্থা, সমাজে লুকিয়ে থাকা অন্যায় আর অনিয়ম নিয়ে। রোগী চরিত্রটি যখন কমেডির ছলে থানায় সংরক্ষিত বিভিন্ন মামলার সব ফাইল খোলা জানালা দিয়ে নিচে উড়িয়ে দিতে থাকে, সে দৃশ্য এক প্রতীকী তাৎপর্য পায়।
মানসিক রোগীটি এরপর হাইকোর্টের বিচারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে এক রেলকর্মীর মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত শুরু করে। ভেঙে পড়তে থাকে মিথ্যার যত আস্ফালন আর ক্ষমতার নানা অপব্যবহার।
দারিও ফোর অ্যাক্সিডেন্টাল ডেথ অব অ্যান অ্যানার্কিস্ট থেকে রূপান্তরিত এই নাটক যেন বাংলাদেশেরও এক অবলোকন। অনুবাদ করেছেন শাহানা জয় ও খালিদ হাসান রুমী। নাটকের মঞ্চরূপকার ও নির্দেশক মুক্তনীল মানসিক রোগীর খ্যাপা চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেছেন।
নাটকটির তিনদিকে দর্শক বসলেও কম্পোজিশন প্রসেনিয়াম-উপযোগী হওয়ায় দর্শকের আসন মঞ্চের মুখোমুখি হওয়াই উত্তম। নাটকের আঁচ তাহলে সব দর্শকের গায়ে সরাসরি এসে লাগবে।
আসাদুল ইসলাম