যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সামলাতে পারেন লেখকেরা

একুশ শতকের বিস্ময়কর আবিষ্কারের নাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর মায়াজাল থেকে মুক্তি নেই কারও; তা আপনি লেখক হন, ব্যবসায়ী হন, চাকরিজীবী হন কি দেশের প্রেসিডেন্ট হন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কথাই ধরুন। যুদ্ধের বাস্তবতায় ভদ্রলোককে এখন প্রতিদিন সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও পোস্ট করতে হচ্ছে।

আর আপনি যদি লেখক হন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রাসঙ্গিকতা আপনার ক্ষেত্রে আরও বেশি। কারণ, আপনার কাজকর্ম সবকিছুই প্রকাশনির্ভর ও যোগাযোগনির্ভর। লেখকেরা নিজেদের চিন্তাগুলোকে সুবিন্যস্তভাবে লেখেন মূলত প্রকাশ করার আকাঙ্ক্ষায় এবং অনেক মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য। এ ক্ষেত্রে এই একুশ শতকে অত্যাবশ্যকীয় মোক্ষম পরিসর হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যম।

কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো এখন এত বেশি, সব একসঙ্গে সামলানোই কঠিন। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন, টিকটক, পিন্টারেস্ট—কোনটা রেখে কোনটা সামলাবেন?

এ জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপক ও লেখক মেগান এরিকসনের পরামর্শ, ‘বুঝেশুনে পা ফেলতে হবে লেখকদের। যা খুশি তাই পোস্ট করা যাবে না, যখন–তখন পোস্ট করা যাবে না। নির্দিষ্ট বিষয় এবং নির্দিষ্ট সময় মেনে পোস্ট করতে হবে।’

কী পোস্ট করবেন

একসঙ্গে একগাদা ছবি পোস্ট করা যাবে না। সবচেয়ে ভালো তিন থেকে পাঁচটি ছবি বাছুন। তারপর পোস্ট করুন। ছবির সঙ্গে অবশ্যই প্রাসঙ্গিক ক্যাপশন ব্যবহার করতে হবে।

অনেকে মনে করেন, আমি যেহেতু লেখক, সুতরাং আমাকে শুধু নিজের বইয়ের ছবিই পোস্ট করতে হবে আর শুধু নিজের বইয়ের লেখাই পোস্ট করতে হবে। না, তা নয়। ধরা যাক, আপনি ইতিহাস–আশ্রয়ী একটি উপন্যাস লিখছেন। আপনি ওই ইতিহাসের কিছু তথ্য পোস্ট করতে পারেন কিংবা ওই ইতিহাসের ছোট ছোট ঘটনাও পাঠককে জানাতে পারেন পোস্ট করার মাধ্যমে।

আর কী পোস্ট করা যেতে পারে? আপনি হয়তো লেখালেখির পাশাপাশি বিড়াল পুষতে পছন্দ করেন অথবা ভালোবাসেন পাখি পুষতে। এমনও হতে পারে, বাগান করা আপনার শখ। আপনি ফুল, পাখি, বিড়ালের ছবি পোস্ট করতে পারেন। মোট কথা আপনার সামাজিক কর্মকাণ্ডের ছবিও পোস্ট করতে পারেন।

এ ছাড়া মাঝেমধ্যে আপনার বইয়ের বিক্রিসংক্রান্ত বিষয়-আশয় পোস্ট করতে পারেন। অর্থাৎ বইটিতে এখন কোন অফার চলছে, কোন অনলাইন দোকানে পাওয়া যাবে, কোন বইয়ের দোকানেই-বা এটি এখন আছে—এসব তথ্য জানিয়ে পোস্ট করতে পারেন।

কী পোস্ট করবেন না

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার আগে নিজের ‘টার্গেট অডিয়েন্স’ বা কাঙ্ক্ষিত ভোক্তাকে চেনার পরামর্শ দিয়েছেন মেগান এরিকসন। তাঁর মতে, যিনি ব্যালে নৃত্য পছন্দ করেন, তিনি নিশ্চয় আপনার টার্গেট অডিয়েন্স নন। সুতরাং ব্যালে নর্তকীদের টার্গেট করে পোস্ট দেবেন না।

আবার লেখকভেদেও টার্গেট অডিয়েন্স ভিন্ন হয়। আপনি যদি থ্রিলার লেখক হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে পাঠকদের পছন্দ বুঝে আপনাকে পোস্ট করতে হবে। আর আপনি যদি কিশোর উপন্যাস লিখে থাকেন, তাহলে কিশোর-কিশোরীদের মনস্তত্ত্ব বুঝে পোস্ট করতে হবে। শিশুসাহিত্যিক হয়ে যেমন বড়দের টার্গেট করে পোস্ট দেওয়া ভুল, একইভাবে রোমান্টিক উপন্যাসের লেখক হয়ে থ্রিলারপ্রেমীদের লক্ষ্য করে পোস্ট করাও ভুল।

শুধুই বই বিক্রির পোস্ট, বইয়ের অফার, বইয়ের লিংক শেয়ার করবেন না। নিজের প্রোফাইলকে মুদিদোকানে পরিণত করবেন না। এতে আপনার পাঠক বিরক্ত হবেন।

সহজে সামলান সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তো অভাব নেই। ভেবে দেখুন ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম—সব মাধ্যমে আপনি যদি আলাদা আলাদাভাবে সময় দিতে যান, দিনে কত সময় ব্যয় হবে! তাই স্মার্ট লেখকেরা এখন নতুন নতুন কিছু টুল ব্যবহার করছেন। যেমন হটস্যুট। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনার (সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট) একটি উপকরণ। এর মাধ্যমে একাধিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্লাটফর্ম ব্যবহার করা যায়।

এ রকম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবস্থাপনা উপকরণ বা টুলের মধ্যে আরও আছে বাফার, টুইট ডেক, টুইপে, সোশ্যাল ওমপা, সোশ্যাল ফ্লো, প্রোমো রিপাবলিক ইত্যাদি।

এ ছাড়া কোন মাধ্যমকে কতটুকু গুরুত্ব দেবেন, সেটা বোঝাও জরুরি বলে মনে করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞরা। ফেসবুক এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এর ৬৫ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম এবং পুরুষ ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে ইনস্টাগ্রামও দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এর ৭০ শতাংশ ব্যবহারকারীর বয়স ৩৫ বছরের কম।

আপনি যখন একজন লেখক ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী, তখন কোনো কিছু পোস্ট করার আগে এসব তথ্যও আপনার বিবেচনায় রাখা উচিত। তাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সামলানো আপনার পক্ষে সহজ হবে।

সূত্র: টিসিকে পাবলিশিং, ক্রিয়েট ইফ রাইটিং ও রিডসি ব্লগ