একদিক থেকে দেখলে লাস্ট ডিফেন্ডার্স অব মনোগামী মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর মাস কয়েক আগে নির্মিত সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফির বিপরীত ছবি। আগের ছবির বিষয়বস্তু সন্তান বা পরিবারের জন্য পিতার ত্যাগ। আর এ ছবির বিষয়বস্তু পরিবারের প্রতি স্বামী বা পিতার অবিশ্বস্ততা।
ছবির কাহিনি অতি সরল। এককথায় অফিস–রোমান্স। এক অফিসে দুই সহকর্মীর মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ক। তবে তাদের স্তরভেদ আছে। কারণ, একজন অফিসের বস (চঞ্চল চৌধুরী), আরেকজন সদ্য যোগ দেওয়া তরুণী লামিয়া (জেফার রহমান)। ফলে এখানে আছে ক্ষমতাচর্চার স্পষ্ট সমীকরণ। বস অবশ্য অনুশোচনাজনিত প্রবল মানসিক পীড়নে ভোগেন। বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের অনুশোচনা। তবে ফারুকী কাহিনিতে আরেকটি স্তর যোগ করেন। দুজনের বয়সের তফাতের কারণে দুটি ভিন্ন প্রজন্মের অভিরুচি ও দৃষ্টিভঙ্গির সংঘাত উঁকি দিতে থাকে।
বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক দুটি মানুষের জীবনকে কীভাবে একটি ছুরির ফলায় প্রকাশ্য ও গোপন দুটি টুকরায় বিভক্ত করে ফেলে এবং তা কীভাবে কখনো কৌতুক বা কখনো সংকটের জন্ম দিতে থাকে—ছবির বড় অংশ তা নিয়েই। অনেকের মনে হতে পারে, এ কাহিনি চেনা, তাঁরা চড়ুইভাতির আরেকটি সংস্করণ দেখছেন।
শেষ দৃশ্যে এসে ফারুকী গল্পটি ঘুরিয়ে দেন। লামিয়া তার ছেলেবন্ধুর কাছে প্রতারণার কথা স্বীকার করে। আমরা দেখি, বহুগামিতার অনুশোচনা দুটি ভিন্ন প্রজন্ম পুরোদস্তুর ভিন্নভাবে মোকাবিলা করছে। প্রথমবারের মতো আমরা টের পাই, এতক্ষণ কাহিনিতে আমরা লামিয়া নামের উচ্চালিভাষী ও অস্থির তরুণীর দৃষ্টিকোণটাই লক্ষ করিনি। লামিয়ারাও তাদের পক্বকেশ বসদের মতো মনোগামীর ‘ডিফেন্ডার্স’। ছবির নামে ‘ডিফেন্ডার্স’ বহুবচন লক্ষণীয়। এই বহুবচন শুধু চঞ্চলের প্রজন্মের জন্যই বরাদ্দ নয়।
এ ছবির ভাষায় ফারুকী খুব স্পষ্টভাবেই ক্রমাগত ‘ফ্রেমের ভেতরে ফ্রেম’ ব্যবহার করেছেন—সেটা চঞ্চলের অফিসই হোক বা জেফারের রেকর্ডিং স্টুডিও। ফ্রেমবন্দী
চরিত্রগুলো বিভিন্ন কাচের জানালায় প্রতিফলিত হয়েছে। যেন তারা প্রথা আর সামাজিকতার নানা খোপে বন্দী।
ফারুকীর ছবিতে আমরা চূড়ান্ত ফারুকীময় মুহূর্ত খুঁজি। এই ছবিতে সে মুহূর্তটি কক্সবাজারে, লামিয়া যখন ছুটে যায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়া বসের শয়নকক্ষে। লামিয়া এক মুহূর্তে পর্দার সামনে থেকে তার নিজের ল্যাপটপের ‘গুগল মিট’ ফ্রেমে প্রবেশ করে। অদ্ভুত ইশারাময় এক দৃশ্য।