এমনিতে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন ভোজনরসিক মানুষ। যেমন খেতে জানতেন, তেমন রাঁধতেও। সঙ্গে খাবার নিয়ে মশকরাও করতেন। শিবরাম চক্রবর্তী লেখেন, ‘জেলখানায় কাজী নজরুল ইসলামের হাতের রান্না খেয়ে নাতিদীর্ঘ আমি হাতিদীর্ঘ হয়ে গিয়েছিলাম। বলতেই হয়, খাওয়াদাওয়ায় কাজীর একটা সুনাম ছিল বটে।’
তো একবার সিরাজগঞ্জে এলে কবিকে উপলক্ষ করে বাংলোতে খাবারদাবারের ব্যাপক আয়োজন করা হয়েছে। অতিথিরা খেতে বসেছেন। খাবার পরিবেশনকারী ছেলেটি বিদ্রোহী কবিকে প্রথমে এক টুকরা ইলিশ দিলেন। প্রথম টুকরা শেষ হতেই দ্বিতীয় টুকরা তুলে দেওয়া হলো তাঁর পাতে। দ্বিতীয় টুকরাটিও দ্রুতই সাবাড় করে ফেললেন তিনি। এবার তৃতীয় টুকরা দেওয়ার জন্য ছেলেটি কাছে আসতেই কবি তাঁকে বাধা দিয়ে বলে উঠলেন, ‘আরে, করছ কী? এত মাছ খেলে শেষকালে আমাকে বিড়ালে কামড়াবে যে!’
কবির কথা শুনে সবাই না হেসে পারলেন না।
দুটি জিনিসের প্রতি কবি খুবই দুর্বল ছিলেন—চা আর পান। এ দুটি হলে তাঁর ভাত না খেলেও চলত। শৈলেন নামের তাঁর এক বন্ধু ছিলেন। তাঁর দোকানে গিয়ে চা খেতেন নিয়মিত। অনেক বকেয়া জমে গেল। কিন্তু চা খাওয়ায় তো আর বিরতি দেওয়া যায় না। একদিন গিয়ে শৈলেনকে বললেন, ‘তুমি তো অনেক টাকা পাবে আমার কাছে, হিসাব করে রেখো, আপাতত দু পেয়ালা চা দাও।’ শৈলেন তো অবাক! এ আবার কী কথা! অনেক টাকা পাওয়ার সঙ্গে দু পেয়ালা, মানে দুই কাপ চায়ের কী সম্পর্ক? তিনি চোখ কপালে তুলে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘দু পেয়ালা কেন?’ কবি বললেন, ‘আরে, লাখ পেয়ালা চা না খেলে টাকা হয় না। লাখ পেয়ালা হতে আমার এখনো দু পেয়ালা বাকি আছে।’ এমন কথার পর কোনো বন্ধু চা না খাইয়ে থাকতে পারেন!
আবার ‘পানের সিন্দুক’ নামে কাজী নজরুলের একটি পানের বাটা ছিল। বাটাভরা পান নিয়ে চলতেন কবি। ‘যেখানেই যাই, পাশে বাটা থাকা চাই’—এই রকম একটা ব্যাপার ছিল তাঁর মধ্যে। লিখতে লিখতে মাঝেমধ্যে একসঙ্গে তিন-চারটা পান মুখে পুরতেন আর পিকদানিতে পানের পিক ফেলতেন। এই পান নিয়ে রসিকতারও শেষ নেই। একবার এক ভদ্রমহিলা নজরুলের পান খাওয়া দেখে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা, আপনি কি পানাসক্ত?’ নজরুল বললেন, ‘জি না, আমি বেশ্যাসক্ত!’ নজরুলের এমন উত্তর শুনে ভদ্রমহিলার মুখ কালো হয়ে গেল। পরে নজরুল ব্যাখ্যা করলেন, ‘পান একটু বেশি খাই, তাই বেশ্যাসক্ত, অর্থাৎ বেশি+আসক্ত=বেশ্যাসক্ত!’
● গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন
সূত্র: তাপস রায় সংকলিত রসিক নজরুল ওআনন্দবাজার পত্রিকা।