পটুয়া কামরুল হাসান নিজের কাঁধে কেন তুলে নিয়েছিলেন গরুর গাড়ির জোয়াল

কামরুল হাসান

বরেণ্য শিল্পী পটুয়া কামরুল হাসানের আত্মীয়স্বজন ও পরিবারের বড় একটা অংশ বিহারের কিষণগঞ্জে থাকতেন। ছুটিছাটা পেলেই তরুণ কামরুল হাসান চলে যেতেন সেখানে। তাঁকে পেয়ে চাচাতো ভাইবোনেরা যেন হাতে চাঁদ পেতেন। তাঁদের নানা শখ, আহ্লাদ আর বায়না মেটাতেন কিংবদন্তি এই শিল্পী। একবার তো চাচাতো বোনেদের বায়না মেটাতে গরুর গাড়ির জোয়াল কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন তিনি।

যখনকার কথা বলা হচ্ছে, সে সময় বাঙালি মুসলমান মেয়েদের ঘরের বাইরে বেরোনোটা ছিল স্বপ্নের মতো। তবে শিক্ষিত পরিবারের মেয়েরা ঘরে বসেই খবরের কাগজ মারফত শিল্প–সাহিত্য ও সিনেমার খুঁটিনাটি আগ্রহ নিয়ে পড়তেন এবং বাইরের নানাবিধ বিষয়ে খবর রাখতেন। কখনো বা হিন্দু বান্ধবীদের মুখে নতুন কোনো সিনেমার গল্প শুনে হলে গিয়ে সেটা দেখার ইচ্ছাও হতো তাঁদের, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তাঁরা ছিলেন নিরূপায়।

১৯৩৫ সালের দিকে পূজার ছুটিতে কিষণগঞ্জে গেলেন কামরুল হাসান। তাঁর চাচাতো বোনেরা ঘিরে ধরলেন তাঁকে, এবার হলে নিয়ে সিনেমা দেখাতেই হবে। তবে বললেই তো আর হলো না, সেকালে মুসলমান মেয়েদের প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে সিনেমা দেখা ছিল একরকম অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু, চাচাতো বোনেরা নাছোড়বান্দার মতো লেগে রইলেন তাঁর সঙ্গে। পরিবারের বড়রা জানলে কখনোই তাঁরা সে সুযোগ দেবেন না। তাই কামরুল হাসান ভিন্ন এক ফন্দি আঁটলেন।

চাচাতো বোনেদের নিয়ে নাইট শো দেখতে যাওয়ার পরিকল্পনা করলেন কামরুল হাসান। পরিকল্পনা হলো যে সন্ধ্যার পর অন্ধকার নেমে এলে ঘর থেকে বেরোবেন তাঁরা। সে বাড়িতে ছিল দুটো বাহন। একটি গরুর গাড়ি, অন্যটি ঘোড়ার। গাড়োয়ানকে বলা হলো, বাড়ি থেকে দূরে গরু নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে। আর গরুবিহীন গাড়ি নিয়ে আসা হলো কুয়োতলায়।

বাড়ির মেয়েরা সেখানে গিয়েই উঠলেন গাড়িতে। কিন্তু সেই গাড়ির জোয়াল চতুষ্পদ গরুর কাঁধে না জুড়ে দ্বিপদ কামরুল হাসান ও তাঁর চাচাতো ভাইয়ের কাঁধে জোড়া হলো।

দুই ভাই মিলে বোনেদের গাড়ি টেনে নিয়ে গেলেন রাস্তা অবধি, সেখানে গিয়ে জোয়াল জোড়া হলো গরুর কাঁধে। আর সে গাড়িতে করেই তাঁরা গেলেন সিনেমা দেখতে। আদতে বোনেদের স্বাদ-আহ্লাদ মেটাতে সব করতে রাজি ছিলেন এই চিত্রকর পটুয়া কামরুল হাসান।

সূত্র: কামরুল হাসানের বাংলাদেশের শিল্প আন্দোলন ও আমার কথা

গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন