যে ছবি চুরি করতে মরিয়া ছিলেন হিটলার

‘দ্য ঘেন্ট অল্টারপিস’ ছবির তিনটি প্যানেল

জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার স্বৈরশাসক ছিলেন—এটা যেমন সত্য, তেমনি তিনি যে শিল্পরসিক ছিলেন, এ-ও সত্য। তিনি নিজে ছবি আঁকতেন, সেই সঙ্গে ভালোবাসতেন মহৎ শিল্পীদের কাজ। ফলে এ কথা শুনে কেউই অবাক হবে না যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ঘটনাক্রমের মধ্যেও হিটলার নিজের সংগ্রহের জন্য অসংখ্য ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম লোপাট করতে ভোলেননি। আবার নিজের রুচিবিরুদ্ধ বহু শিল্পকর্ম দেদারসে ধ্বংসও করেছেন ‘অধঃপতিত শিল্প’ আখ্যা দিয়ে।

তবে হিটলার সবচেয়ে বেশি মরিয়া হয়েছিলেন প্রায় ৬০০ বছর পুরোনো একটি ছবি লোপাট করার জন্য। শুধু তা-ই নয়, সেই ছবির একটি প্যানেল নিরুদ্দেশ হওয়ায় হিটলারের মন্ত্রী গোয়েবলস আলাদা এজেন্ট লাগিয়ে দিয়েছিলেন অংশটি উদ্ধার করে আনার জন্য।

কিন্তু কী ছিল সেই ছবি?

১৪৩২ সালে বেলজিয়ামের শিল্পী ইয়্যান ভ্যান আইক তাঁর ভাই হিউবার্ট ভ্যান আইকের সহযোগিতায় এঁকেছিলেন ‘দ্য ঘেন্ট অল্টারপিস’ নামের এ ছবি। খ্রিষ্টধর্মের সবকিছুই অঙ্কিত আছে এই অমর ছবিতে। ১২টি প্যানেলজুড়ে অ্যাডাম ও ইভ হতে শুরু করে যিশুর জন্ম অবধি খ্রিষ্টাধর্মের গুরুত্বপূর্ণ সব ঘটনা উঠে এসেছে এখানে। এটিই ইতিহাসের প্রথম উল্লেখযোগ্য তেলরঙে আঁকা ছবি। বলা হয়, এ ছবির মাধ্যমেই ইউরোপ অন্ধকার মধ্যযুগ অতিক্রম করে রেনেসাঁসের সাবালক পর্যায়ে প্রবেশ করে।

একটি ছবির সঙ্গে যা যা হওয়া সম্ভব, তার সবই হয়েছে ছবিটির সঙ্গে। ক্যালভিনিস্টরা একে পুড়িয়ে ফেলতে চেয়েছে, নেপোলিয়ন ছবিটিকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিলেন ফ্রান্সের ল্যুভর মিউজিয়াম, প্রুশিয়ার রাজা একে কেটে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলেছিলেন, আর হিটলারের কথা তো বলাই হলো। ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার চুরি হওয়া ছবির খেতাবও অর্জন করেছে এ চিত্র। ১৯৩৪ সালে এ ছবির ১২টি প্যানেলের মধ্যে একটি চুরি হয়ে যায়। ৮৮ বছর হয়ে গেল, অথচ সেই অংশের খোঁজ এখনো চলছে। এত কিছু হওয়ার পরও এ শিল্প এখনো টিকে আছে স্বমহিমায়।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ডটকম

● গ্রন্থনা: মাহীন হক