আমি কেন তেলাপোকা মারি না
বেশ অনেক দিন হলো তেলাপোকা মারি না আমি। প্রাণীর প্রতি আমার অনেক মায়া, ব্যাপারটা এমন নয়। আসলে আমি এতই অলস যে সামনে দিয়ে তেলাপোকা চলে যায়, মারার উদ্যোগ নিই না (গায়ে এসে পড়লে অবশ্য আলাদা কথা। সেটাকে আমি বহিঃশত্রুর আক্রমণ হিসেবে ধরে নিই)। কারণ, তেলাপোকা মারার কাজটা অত সহজ নয়। এল, বাড়ি দিলেন, মরে গেল—এত সোজা?
ধরেন, একটা তেলাপোকা ফরফরফর করে উড়ে এসে ঘরে ল্যান্ড করল। আমি হয়তো ফোন চালাচ্ছিলাম। শব্দ শুনে নজর রাখলাম তেলাপোকার দিকে। দেখলাম, তেলাপোকা তার সতর্ক অ্যানটেনা নিয়ে ধীরে ধীরে হাঁটছে। তাকে এখন মারতে গেলে চুপচাপ বিছানা থেকে উঠতে হবে। ঝাড়ু নিয়ে এক বাড়ি দিয়ে করে ফেলতে হবে চ্যাপ্টা। এতে আবার ঘর মোছার ঝামেলা আছে। তবে বিকল্প পদ্ধতির ঝামেলাও কম নয়। অজ্ঞান পার্টির মতো ব্যবহার করতে হবে কালো হিট স্প্রে। কিন্তু এই স্প্রের বোতল কখনোই সময়মতো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনি জিনিসটা খুঁজবেন আর ওদিকে তেলাপোকা জায়গায় দাঁড়িয়ে মরার জন্য অপেক্ষা করবে?
এত সহজ নয়। মৃত্যুযন্ত্রণা কত কঠিন, এটা সম্ভবত তেলাপোকাও জানে। তাই স্প্রে খুঁজে পাওয়ার পর আপনাকে খুঁজতে হবে তেলাপোকাটা। যেহেতু স্প্রে খোঁজার জন্য আপনি একটা এফোর্ট দিয়েছেন, কাঙ্ক্ষিত তেলাপোকা না পেয়ে আপনার মেজাজ হবে খারাপ। ঘরের বিভিন্ন কোনায় আপনি তেলাপোকা খুঁজবেন। খুঁজে বের করার পর স্প্রে মেরে অজ্ঞান করে ফেলতে হবে তেলাপোকাকে। তারপর ময়লা ফেলার ট্রে (জিনিসটার নাম কী? এটাও কাজের সময় খুঁজে পাওয়া যায় না) এনে ওঠাও, জায়গামতো ফেলো, আবার ট্রে রাখো। যেখান থেকে স্প্রে নিয়েছিলে, সেখানে রাখো। হাত ধোও। হাত মোছো—কত ঝামেলা!
তাকে এখন মারতে গেলে চুপচাপ বিছানা থেকে উঠতে হবে৷ ঝাড়ু নিয়ে এক বাড়ি দিয়ে করে ফেলতে হবে চ্যাপ্টা। এতে আবার ঘর মোছার ঝামেলা আছে। তবে বিকল্প পদ্ধতির ঝামেলাও কম না। অজ্ঞান পার্টির মতো ব্যবহার করতে হবে কালো হিট স্প্রে। কিন্তু এই স্প্রের বোতল কখনোই সময়মতো খুঁজে পাওয়া যাবে না। আপনি জিনিসটা খুঁজবেন আর ওদিকে তেলাপোকা জায়গায় দাঁড়িয়ে মরার জন্য অপেক্ষা করবে?
আমি এই সব ঝামেলার মধ্যে নেই অনেক দিন হলো। তেলাপোকা একটি–দুটি–তিনটি করে আসে, আমি সিন করি। কোনো রিপ্লাই দিই না। কী করবি, কর। ওরা এদিক–ওদিক উড়ে উড়ে বেড়ায় কিছুক্ষণ।
আজকালকার তেলাপোকাগুলোও অস্থির। কোনো লক্ষ্য নেই। এই একবার টেবিলে উঠছে, মনে করলাম এটা বোধ হয় একটু বইটই পড়ে; একটু পরই নেমে গিয়ে বসছে চেয়ারে রাখা কাপড়ের ওপর। তখন আবার ভাবলাম, এই তেলাপোকা বেশ ফ্যাশনসচেতন। থাক, যা ইচ্ছা কর তোরা, আমি কিছু বলব না। মানুষ হলে তো যা ইচ্ছা তা–ই করতে পারতি না।
এইভাবে ভালোই চলছিল। তেলাপোকা নিয়ে কোনো চিন্তাই ছিল না আমার। কয়েক দিন আগে ড্রয়ার থেকে বোনের দেওয়া জুতা বের করলাম। নতুন জুতা। বাক্সটাও খোলা হয়নি এত দিন, পরা তো দূরের কথা। বিদেশ থেকে পাঠানো জুতা জোড়া হাতে পাওয়ার পরই করোনা এসেছে পৃথিবীতে, কীভাবে পরব? বের করে দেখি, অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে দুই পাটি জুতা খেয়ে ভাজা ভাজা করে ফেলেছে তেলাপোকারা। জুতার বেশ কিছু জায়গায় ফুটো হয়ে তৈরি হয়েছে নতুন ডিজাইন। তবে, রুচি আছে তেলাপোকাগুলোর। পাশেই স্থানীয় কোম্পানির জুতা পড়ে ছিল, ছুঁয়েও দেখেনি।
মানুষকে সুযোগ দিলে, স্পেস দিলে মানুষ ক্ষতি করবে, এটা জানতাম। কী দিন এল, আজকাল দেখি তেলাপোকাও...