একাত্তরে যেভাবে পালিত হয়েছিল রোজা

১৯৭১ সালে রোজা শুরু হয়েছিল ২২ অক্টোবর। গোলাবারুদের গন্ধমাখা সেই যুদ্ধদিনের প্রহরে বাংলাদেশে কীভাবে পালিত হয়েছিল রোজা, স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বিভিন্ন বই ঘেঁটে তার সুলুকসন্ধানের চেষ্টা।

মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ছবি অবলম্বনে কোলাজ: আপন জোয়ার্দার

১৯৭১ সাল যেমন বাঙালির শৌর্যবীর্যের নাম, তেমনি এ বছর বাঙালি দেখেছে অনেক বিভীষিকাময় অধ্যায়ও। পূর্ববঙ্গ তথা বাংলাদেশের মানুষ যখন স্বাধীনতার মরণপণ যুদ্ধে লিপ্ত, চারদিকে যখন বিদীর্ণ হৃদয়ের হতাশা আর নৈরাশ্যের দীর্ঘশ্বাস, সে সময় আকাশে ফুটে ওঠে পবিত্র রমজানের চাঁদ। স্বভাবতই মুসলমান সম্প্রদায় এ মাসে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে যাবতীয় পাপতাপ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে। কিন্তু বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী তা করেনি। নিজেদের ‘সাচ্চা মুসলমান’ দাবি করার পরও তারা রমজান মাসে নিরীহ বাঙালিদের ওপর চালিয়েছে অকথ্য নির্যাতন, লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ। লেখক-সাহিত্যিকদের স্মৃতিকথায় ধরা আছে একাত্তরের রোজার মাসের টুকরো টুকরো ছবি।

আমাদের কাছে আজকের বাস্তবতায় রোজা-রমজানের চিত্র যেমন, সেদিনের যুদ্ধপ্রহরে নিঃসন্দেহে তা এ রকম ছিল না। তবে যুদ্ধের ওই ডামাডোলের মধ্যেও ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমান নিজেদের ধর্মবোধ থেকে বিচ্যুত হয়নি। ফলে ১৯৭১ সালে মানুষেরা রোজা পালন করেছেন নিজস্ব বাস্তবতা মাথায় রেখে।

একাত্তরে পয়লা রমজান ছিল ২২ অক্টোবর। দেশে তখন যুদ্ধ চলছে। অনেকেই যুদ্ধে গেছেন, কেউবা অবরুদ্ধ হয়ে আছেন দেশের ভেতরে, নানান শহরে।

রমজানের চাঁদ দেখা গেল অন্য মুসলমানেরা যা করে, একাত্তরে মুসলমান বাঙালিরাও তা–ই করেছিল—সাহ্‌রি খেয়ে রোজা রাখার সংকল্প করেছিল। কিন্তু সময়টা তো ছিল অগ্নিঝরা, ঝঞ্ঝাসংকুল, তাই রোজাদাররা যখন সাহ্‌রি সেরে, ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনো তাঁদের কানে ভেসে আসছিল গুলির শব্দ আর অসহায় মানুষের আর্তনাদ। হিটলারের নাৎসি বাহিনীর মতো পাকিস্তানি বাহিনী এ মাসেও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে, ভেঙেচুরে নিরীহ মানুষের বুকে সেঁটে দিচ্ছিল এক ভয়ানক কৃষ্ণপক্ষ। সাহিত্যিক আবুল ফজল তাঁর দুর্দিনের দিনলিপিতে এ প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘তারা কোনো দোষ করেনি, করেনি কারও কোনো ক্ষতি। কেউ নিয়মমাফিক অফিস করে, কেউ–বা বেচাকেনা করে, কেউ হয়তো আসন্ন ঈদের সওদা করে বাড়ি ফিরছে, অনেকেই রোজাদার, অতর্কিতে তাদের ওপরই কিনা নেমে এসেছে ছোরাছুরির মুখে এক অভাবনীয় মৃত্যু। কয়েক দিন ধরে চলেছে এ পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড।’

সেই পয়লা রোজার দিন বাঙালি মুসলমানরা যেভাবে নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী তা চালিয়েছিল রমজানজুড়ে।

নৃশংসতা থামেনি রোজার মাসেও

রোজার মাসেও থামেনি পাকিস্তানি সৈন্যদের জিঘাংসা। পবিত্র রমজান মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংসতার গা শিউরে ওঠা কিছু চিত্র উঠে এসেছে হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র অষ্টম খণ্ডে। রাজশাহীর দুর্গাপুরের সরদার আবদুল মালেকের বরাত দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘পহেলা রমজান শুক্রবার পাকসেনারা গগনবাড়িয়ায় অপারেশন করে। এখানে ত্রিমুখী অভিযান চালিয়ে ১০–১১ শত জন লোককে ধরে আনে এবং তাদের দিয়ে গর্ত করানোর পর হত্যা করে মাটিচাপা দিয়ে রাখে। কচি শিশুদের বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের অপরাধ, তাদের মায়ের ওপর যখন পশুরা অত্যাচার করছিল, তখন তারা কাঁদছিল। এখানে ১০০ বছর পেরোনো এক অন্ধ বৃদ্ধকে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়। গ্রামে আগুন দিলে মেয়েরা যখন প্রাণভয়ে মাঠে পালায়, তখন সেখানেও তাদের ধরে শ্লীলতাহানি করা হয়। বাপের সামনে মেয়েকে, স্বামীর সামনে স্ত্রীকে নির্যাতন করা হয়।’

সেই পয়লা রোজার দিন বাঙালি মুসলমানরা যেভাবে নিপীড়িত ও নির্যাতিত হয়েছিলেন, পাকিস্তানি বাহিনী তা চালিয়েছিল রমজানজুড়ে। দিনাজপুরের চিরিরবন্দর এলাকার পরিস্থিতির বিবরণ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিলপত্র-তে হাসান হাফিজুর রহমান জানান, ‘১১ রমজান খানসেনারা ও রাজাকাররা সোলায়মান গণি নামে একজনকে ঘর থেকে গ্রেপ্তার করে। শান্তি কমিটির সদস্যদের ইচ্ছায় তাকে হাত পিছমোড়া করে বেঁধে মিছিলসহযোগে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাস্তায় রাইফেলের গাদা ও হাত দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়। গ্রেপ্তার করা ছাড়াও তার বাড়িঘর লুটপাট এবং শেষে আগুন জ্বালিয়ে ভস্মীভূত করা হয়। থানায় নেবার পর পা উপরের দিকে লটকিয়ে লোহার রড দিয়ে অনবরত পেটানো হয়। সঙ্গে চলে কিল, ঘুষি ও লাথি। চার দিন, চার রাত সোলায়মান গণিকে থানায় আটকে রাখা হয় এবং রোজার দিন হওয়া সত্ত্বেও সাহ্‌রি ও ইফতারের জন্য কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। ওই কদিন না খেয়ে তাকে রোজা থাকতে হয়েছে। বহুবার পানি চাওয়া হলেও পানি পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। চতুর্থ দিন পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে সে ছাড়া পায়।’

কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার সম্পাদিত ১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা সংকলনে উঠে আসে বগুড়ার পীরবাড়িতে রমজান মাসে ঘটে যাওয়া বর্বরতার দুঃসহ স্মৃতি। প্রত্যক্ষদর্শী মো. তবিবুর রহমান, আবদুল হান্নান ও রহিমুদ্দিন ফকিরের ভাষ্য অনুযায়ী,‘২৩ রমজান (১৩ নভেম্বর, ১৯৭১) পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সাহ্‌রির সময় পীরবাড়ি ও তার আশপাশের এলাকা ঘেরাও করে। বাড়ির মোট ৭ জন পুরুষ সদস্য ও গ্রামের অন্য পাড়ার যাকে যেখান থেকে ধরতে পেরেছে এমন ৪ জন, মোট ১১ জনকে পুকুরপাড়ে সারিবদ্ধভাবে বসিয়ে গুলি করে হত্যা করে। ওই ১১ জন শহীদের মধ্যে ১৪ বছর বয়স্ক ৭ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত একজন কিশোর থেকে শুরু করে ৬৮ বছর বয়স্ক একজন অসুস্থ বৃদ্ধ লোক পর্যন্ত ছিলেন। উল্লেখ্য, এদের সবাইকে ধরা হয়েছিল সেহরি খাওয়ার সময়। কেউ সেহরি শেষ করেছেন, আবার কাউকে তার অর্ধসমাপ্ত সেহরি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, একজন ফজরের নামাজ পড়ার সময় চেয়েছিলেন কিন্তু পাকিস্তান ও ইসলামের রক্ষাকারী খাঁটি মুসলমানেরা তাঁদের সে সময় দেয়নি।’

কেমন ছিল ইফতার আয়োজন

আজকের দিনে আমরা যেমন নানা পদের বাহারি ইফতার করি, একাত্তরে যুদ্ধদিনের বাস্তবতা ছিল ভিন্ন। তা ছাড়া মানুষের অর্থনৈতিক সামর্থ্যও এখনকার মতো ছিল না।

একাত্তরের রমজান মাসে পঞ্চগড়ের বিভিন্ন অঞ্চলে সফল অভিযান চালিয়ে পাকিস্তানি বাহিনীকে ধরাশায়ী করেন গেরিলা কমান্ডার মাহবুব আলম। ২১ রমজান (১১ নভেম্বর, ১৯৭১) তাঁদের অভিযানের জন্য নির্ধারিত স্থানে পৌঁছানোর পরপরই ঘনিয়ে আসে ইফতারের সময়। এমন সময় এক হুজুর তাঁদের জন্য ইফতারের আয়োজন করেন। মাহবুব আলম তাঁর গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে (দ্বিতীয় খণ্ড) বইয়ে সেই ইফতারের স্মৃতিচারণা করে লিখেছেন, ‘সোনারবান পৌঁছে যাই সন্ধ্যার মাগরেবের নামাজের সময়, রোজার ইফতারের সময় তখন। হুজুর ইফতারি নিয়ে বসেছেন। আমাদের দেখেই তিনি উঠে দাঁড়ান এবং ইফতারি জোগাড়যন্তর করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। হুজুরকে বলি, ৪–৫ জন ছাড়া কেউই রোজা নেই। তিনি বলেন, তাতে কী হয়েছে, রোজার দিনে ইফতার করা তো সওয়াবের কাজ। এরপর তাঁর ঘরের সামনে লম্বা করে মাদুর বিছিয়ে তিনি সবার আয়োজন করেন। সবার জন্য ইফতারের প্লেট আসে। মুড়ি-চিড়া-গুড়সহযোগে সামান্য আয়োজন। কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে গভীর আন্তরিকতার ছোঁয়া। মসজিদে আজান হয়। হুজুর বলেন, “নেন বিসমিল্লাহ্ করেন।” আমরা সবাই হাত লাগাই প্লেটে। রমজান মাসের দিন শেষের এই শান্ত সমাহিত ক্ষণ একটা পরম পবিত্র লগ্ন হিসেবেই সবার কাছে ধরা দেয়।’ 

মুক্তিযোদ্ধা রোজাদাররা

রণাঙ্গনের শত প্রতিকূলতা ডিঙিয়েই অনেক মুক্তিযোদ্ধা রোজা রেখেছেন। নিয়মিত তারাবিহর নামাজও পড়েছেন। কোথাও রোজাদারদের জন্য আলাদা দল গঠন করা হয়েছে এবং তাঁদের ভারী দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এমনকি যেদিন কোনো অভিযান থাকবে না, সেদিন সবাই রোজা রাখবেন—এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের রোজা রাখার এই প্রবণতা নিয়ে মাহবুব আলমের উপলব্ধি হলো, ‘জন্ম থেকে বয়ে নিয়ে আসা ধর্মীয় অনুভূতি আর বিশ্বাস কি ঝট করে ঝেড়ে ফেলে দেওয়া যায়? মুক্তিযুদ্ধ বা জয় বাংলার জন্য যে সংগ্রাম, তা তো আর ধর্মহীন হবার বা তার বিরুদ্ধে যাবার মতো কোনো ব্যাপার নয়। যার যা ধর্ম, সে সেটা পালন করুক। ছেলেদের ধর্মীয় বিশ্বাস বা অনুভূতি আমাদের যুদ্ধে বা সংগ্রামে কোনোই বিরূপ প্রভাব ফেলছে না।’

রোজার দিনের ঢাকা

একাত্তরের ৯ মাস ঢাকা কার্যত অবরুদ্ধ ছিল। রমজান মাসেও পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি। যদিও একশ্রেণির মানুষের ওপর চেপে বসেছিল ঈদের কেনাকাটার ভূত। কিন্তু হঠাৎ বোমা বিস্ফোরণের ফলে সেই ভূত পালিয়ে যায়। জাহানারা ইমাম তাঁর একাত্তরের দিনগুলিতে ঢাকায় ঈদের কেনাকাটার বিবরণ তুলে ধরে লিখেছেন, ‘গতকাল বায়তুল মোকাররমের দোকানে বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আজকাল ঢাকায় এ রকম কোথাও কিছু হলে আমার বিস্তারিত খবর জানতে কোনো অসুবিধা হয় না...। দোকানের সামনে দাঁড়ানো তিনজন খানসেনা মরেছে, আরও কয়েকজন জখম হয়েছে। ফল হয়েছে বাকি দিন দোকানপাট সব বন্ধ। লোকের ঈদের কেনাকাটায় ছাই পড়েছে। বেশ হয়েছে।’

একাত্তরের রমজান মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেমে এসেছিল প্রাচীন নগরীর নিস্তব্ধতা। কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তখন থাকতেন মহসিন হলে। রোজার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তিনি তাঁর আমার আপন আঁধার বইয়ে লিখেছেন, ‘রোজার সময় বলেই সব দোকান বন্ধ। হোটেল তো বন্ধই, চায়ের দোকানও বন্ধ। হলের মেসও বন্ধ। ধর্মীয় কারণে নয়, নিতান্তই বাধ্য হয়ে হলের অনেকেই রোজা রাখছে। সেখানেও বিপদ আছে। বিকেলে ইফতারি কিনতে নিউমার্কেটে গিয়ে একজন মিলিশিয়ার হাতে বেধড়ক মার খেল। মিলিশিয়ার বক্তব্য, রোজার দিনে এই ছাত্র নাকি ছোলা ভাজা খাচ্ছিল।’ এই রমজান মাসেই হুমায়ূন আহমেদসহ আরও কয়েকজন ছাত্রকে মহসিন হল থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। এর মধ্যে সৌভাগ্যক্রমে হুমায়ূন আহমেদ বেঁচে ফিরে আসেন।

১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বর, ঈদের আগের দিন ছিল পবিত্র জুমাতুল বিদা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী। তিনি তাঁর একাত্তরের ডায়েরিতে জুমাতুল বিদার দিন নিয়ে লিখেছেন, ‘শুক্রবার, ১৯ নভেম্বর। আজ সকালে কিছুক্ষণ বসে প্রশ্নপত্র তৈরি করলাম কিছুটা। ১২.৩০টায় বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে গেলাম। আজ জুমাতুল বিদা। দোয়া করা হলো। আজ রোজা রাখলাম। বিকেলে বোমার শব্দ। আজ আমরা আর কোথাও গেলাম না। কাল নাকি ঈদ হবে।’

‘কাল নাকি ঈদ হবে’—মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর এই বাক্যের ব্যবহারই জানান দেয়, তখনকার আবহাওয়া ছিল কতটা সঙিন। আকস্মিক কোনো দুর্যোগ নয়। একদল মানুষরূপী হায়েনা রমজানের মতো পবিত্র মাসে বিস্তার ঘটিয়েছিল পাইকারি হত্যার যন্ত্রজাল। কেড়ে নিয়েছিল বহু বহু তাজা প্রাণ। কিন্তু বীর বাঙালির সশস্ত্র সংগ্রামের পথ ধরে বাংলার বুকে এসেছে স্বাধীনতা ও বিজয়; সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পবিত্র রোজার শাশ্বত আবেদন।