প্রাচীন সুরের সৌন্দর্য

ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে ধ্রুপদ গাইছেন ওস্তাদ ওয়াসিফুদ্দিন ডাগরছবি: সংগৃহীত

মোগল সম্রাট আকবরের সভাগায়ক এবং ভারতীয় সংগীতের সবচেয়ে বড় নাম মিয়া তানসেন ধ্রুপদ গাইতেন। আজকের সদ্য প্রয়াত ওস্তাদ রশিদ খান বা অজয় চক্রবর্তী যে ধরনের গানের জন্য খ্যাতিমান, সেটি খেয়াল, ধ্রুপদ নয়। ধ্রুপদ ভারতীয় রাগসংগীতের প্রাচীনতম ও ক্ষীয়মাণ ধারা। গত ২৭ এপ্রিল ঢাকার ছায়ানট মিলনায়তনে ওস্তাদ ওয়াসিফুদ্দিন ডাগর ধ্রুপদ গেয়ে গেলেন। আয়োজনে ছিল সাটোরি একাডেমি অব আর্টস।

ধ্রুপদের চারটি ঘরানার মধ্যে ডাগরদের ঘরানাটি অতি বিশিষ্ট। তাঁরা জোর দেন আলাপে। সংগীত পরিবেশন করেন যুগলে, প্রায় সময়ই দুজন ভাই মিলে। ওস্তাদ ওয়াসিফুদ্দিন ডাগর অবশ্য একাই পরিবেশন করলেন।

ধ্রুপদের অন্য ঘরগুলো এখন ম্রিয়মাণ। ডাগরদের ঘরানাই প্রাচীন এই ভারতীয় সংগীত–শৈলীকে টিকিয়ে রেখেছে বলা যায়। আ র ন ন, তে ত র ন, রি র র ন ন ইত্যাদি ধ্বনি দিয়ে ডাগর ঘরানার অনুসারীরা আলাপ করেন। এই ঘরানার শিল্পীদের গান ‘ডাগরবাণী’ নামে প্রসিদ্ধ।

ঢাকায় ওস্তাদ ওয়াসিফুদ্দিন ডাগর প্রথমে গাইলেন রাগ বেহাগ। এরপর ক্রমান্বয়ে রাগ শঙ্করা, চন্দ্রকোষ, আড়ানা, সবশেষে ভাটিয়ার। ওস্তাদ ওয়াসিফুদ্দিন ডাগর এই সময়ের শিল্পী। তাঁর কণ্ঠ নতুন সময়ের মধ্যে প্রাচীন শিল্পের সৌন্দর্য রচনা করল। ঘরানাবাহিত সাবলীল কণ্ঠলীলায় তিনি ধ্যানী আবহাওয়া গড়ে তুললেন পুরো মিলনায়তনে।

‘অনাহত নাদ’ শিরোনামে এই ধ্রুপদ–সন্ধ্যায় ওয়াসিফুদ্দিন ডাগরের সঙ্গে বাংলাদেশের নিলয় আহসানও ধ্রুপদ পরিবেশন করেন। নিলয় ডাগর ঘরানার আরেক পরম্পরা গুন্ডেচা ভাইদের কাছে তালিম নিয়েছেন এবং সেখানে শিক্ষকতা করছেন। কৃতিত্বের সঙ্গে তিনি এ এর রাহমানের অর্কেস্ট্রা গ্রুপেও স্থান করে নিয়েছেন।

শিল্পীদের সঙ্গে পাখোয়াজে ছিলেন রোমান দাস।