উলনবাটোরের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা ও হরহগ

মঙ্গোলিয়ার পাশাপাশি হাত ধরে হাঁটে চেঙ্গিস খানের নাম অথবা উল্টোটি বললেও ভুল হবে না। মধ্যযুগে মঙ্গোল সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ। ভ্রমণকারী এলিজা বিনতে এলাহী একবিংশ শতাব্দীতে কেমন দেখলেন আজকের মঙ্গোলিয়া? সেই অভিজ্ঞতাই বর্ণনা করছেন ধারাবাহিকভাবে।

গ্রাফিকস: প্রথম আলো

হোটেল রিসিপশনে বাক্স-পেটরা রেখে রেস্তোরাঁর উদ্দেশে রওনা করলাম। গাইড তুসিনতুর বলল, কাছেই, আমরা হেঁটেই যেতে পারব। মূল কারণ ট্রাফিক থেকে বাঁচা। ভালোই হলো, আশপাশ দেখতে দেখতে যাওয়া যাবে। আমাদের হোটেলটি একেবারে শহরের কেন্দ্রে। ২ মিনিট হাঁটার পরই বুঝলাম। সামনে বিশাল একটি চত্বর। তুসিনতুর বলল, উলনবাটোর স্কয়ার। স্কয়ারজুড়ে লোকজন। সবার হাতে ফুলের তোড়া। আজ ইউনিভার্সিটি অব উলানবাটোরের কনভোকেশন অনুষ্ঠান চলছে। কিছু অংশ স্কয়ারে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই স্কয়ারে মঙ্গোলিয়ার জাতীয় সংসদ ভবনও রয়েছে। আমরা স্কয়ারের পাশ দিয়ে যাচ্ছি। তুসিনতুর বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের জন্যই আজ শহরজুড়ে বিকট জ্যাম।

মঙ্গোলিয়ার ন্যাশনাল হিরো সুখবাতুরের ভাস্কর্য।
ছবি: লেখক

চলতে চলতে আচমকা খেয়াল করলাম বাতাসে সাদা সাদা তুলার মতো কী যেন ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রথমে ভাবলাম কোনো পতঙ্গ। যতই এগোচ্ছি, ততই বাড়ছে। গায়ে এসে পড়ছে। পথের ধারে জড়ো হয়ে আছে। গ্রীষ্মকাল না হলে ভাবতাম স্নো-ফল, আশপাশে বোকার মতো তুলার গাছ খুঁজছি। মনে মনে নিজেই হাসলাম। পথের পাশে অচেনা গাছের সারি। আমি কিছু বলার আগেই তুসিনতুর বলল, এই গাছগুলোর নাম সাইবেরিয়ান পপলার। গ্রীষ্মকালে এদের বীজ ঝরে পড়ে গাছ থেকে। পুরো শহর সাদা চাদরে ঢেকে যায়। বৈরী আবহাওয়ায় এই গাছগুলো বেঁচে থাকতে পারে।

শহরের দেয়ালে গ্রাফিতি
ছবি: লেখক

উলনবাটোর শহরে গাছগুলো রোপণ করা হয়েছে ‘বিলিয়ন গাছ’ নামীয় জাতীয় আন্দোলনের অংশ হিসেবে, যার লক্ষ্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত করা। গাইড বলছিল, কাছেই রেস্তোরাঁ। হাঁটছি তো হাঁটছি। শহরজুড়ে নীলরঙা গাউন পরা তরুণ-তরুণী আর হাতে তাদের ফুলের তোড়া। তুসিনতুর এত জোরে হাঁটছে, আমি চারপাশ দেখতে দেখতে আর ছবি তুলতে গিয়ে পিছিয়ে পড়ছি। তারপর দৌড়ে গিয়ে তাকে ধরতে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মাইল তিনেক হাঁটলাম রেস্তোরাঁ অব্দি।

মর্ডান নোমাডস রেস্তোরাঁ
ছবি: লেখক

পথে লক্ষ করলাম সব দোকানের সাইনবোর্ড সিরিলিক (cyrilic) অক্ষরে লেখা। আমি ভেবেছিলাম চীনাদের প্রভাব বেশি তাদের সংস্কৃতিতে। কিন্তু সে রকমটি নয়। রেস্তোরাঁ বেশ সুন্দর। নাম মডার্ন নোমাডস। তুসিনতুর বলল, এটি মঙ্গোলিয়ান খাবারের জন্য বিখ্যাত। রেস্তোরাঁর সাজসজ্জা দারুণ। ড্রাগন, বুদ্ধমূর্তি, মঙ্গোল পৌরাণিক গল্পের চরিত্রদের শিল্পকর্ম দিয়ে সাজানো হয়েছে। প্রথমে সালাদ ও স্যুপ এল টেবিলে। সবজি স্যুপ এবং পাকা পাম ফল দেওয়া রয়েছে। কিছুটা তাল ফলের ঘ্রাণের মতো এক দারুণ সুবাস পাওয়া যাচ্ছে, খেতে বেশ মিষ্টি। স্যুপের ভেতর পাম ফল এই প্রথম খেলাম।

পাম স্যুপ
ছবি: লেখক

মেইন ডিশ এল দুটি পাত্রে। একটিতে রাইস (কিছুটা ফ্রায়েড রাইসের মতো)। অন্যটিতে মাংস। তুসিনতুর মাংসের পাত্রটি খুলে কয়েকটি বড় বড় কালো পাথর বের করল। আমি অবাক হব না, কী করব, বুঝতে পারছি না। নিজেকে অনুভূতিহীন মনে হচ্ছে। মাংস নাকি রান্না হয় গরম পাথর সহযোগে। মানে উনুনে রান্না হয় না। পাথর আগুনে গরম করে সেই গরম পাথর, মাংস, আলু, সবজি মিশিয়ে তেল ছাড়া পাত্রের মুখ ঢেকে রান্না করা হয় স্টিমে। এক কেজি মাংস রান্না করতে সময় লাগে ৪০ মিনিটের মতো।

পাথরের সাহায্যে তেলবিহীন মাংসে তৈরি হরহগ
ছবি: লেখক

পাথরের সাহায্যে তেলবিহীন এই মাংসের নাম হরহগ। শীতের সময় এই পাথরগুলো হাতে নিয়ে শরীরের উত্তাপ নেয় স্থানীয় লোকজন। আমাদের দেশে শীতের সময় গ্রামাঞ্চলে সন্ধ্যায় যেমন খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন তাপায়। ঠিক তেমনি গরম পাথর হাতে নিয়ে শীতের প্রকোপ থেকে নিজেদের রক্ষা করার একটি মাধ্যম। 

আরও পড়ুন

মাংসগুলো খেতে বেশ সুস্বাদু আর নরম। আলাদা করে তেল না ব্যবহার করার আরও একটি কারণ হলো মাংসের সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে চর্বি থাকে। মধ্য এশিয়াতেও দেখেছি মাংসের সঙ্গে চর্বির ব্যবহার।

পার্লামেন্ট ভবনের কেন্দ্রে চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্য
ছবি: লেখক

দুপুর প্রায় গড়াচ্ছে। আমাদের আজকের গন্তব্য হলো সিটি স্কয়ার ও একটি সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করা। রওনা হয়ে দেখা গেল এখনো ভিড় লেগে আছে। বিশাল চত্বর। সংসদ ভবনের সামনে সাধারণের উৎসব, চলাফেরা, গানবাজনা চলছে। চারদিকে কোনো পুলিশ দেখতে পেলাম না। পার্লামেন্ট বিল্ডিংয়ের কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খানের একটি বিরাট ভাস্কর্য। অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। মনে হচ্ছিল কোনো শিল্পী প্রথম চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্য তৈরি করেছিলেন বা কে প্রথম তুলির ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিজেতাকে। তাঁর অভিব্যক্তি ও কর্ম অবশ্যই ফুটিয়ে তোলা যায় ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে কিন্তু মুখাবয়ব?

ন্যাশনাল থিয়েটার একাডেমির সামনে থেকে শহর
ছবি: লেখক

শিল্পীর মুখশ্রীর বর্ণনা কে করেছেন? এই সবই ভাবছিলাম ভাস্কর্যের দিকে তাকিয়ে। দুই পাশে দুটো অশ্বারোহীর প্রতিমূর্তিও দারুণ। চেঙ্গিস খানের ভাস্কর্যের বাঁ দিকে রয়েছে তাঁর ছেলে ওগেদাই খান ও ডান পাশে রয়েছে নাতি কুবলাই খানের ভাস্কর্য। কিংবদন্তি রয়েছে, চেঙ্গিস খানের বিশ্বজুড়ে অগণিত সন্তান। এর সত্যতা কতটুকু জানা নেই। ইতিহাস বলছে, চেঙ্গিস খানের ছেলে ওগেদাই খান ছিলেন মঙ্গোল সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় খাগান। খাগান শব্দের অর্থ হলো সম্রাট। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সর্বোচ্চ শাসককে এই উপাধি দেওয়া হতো। চেঙ্গিস খানের পর তিনিই মঙ্গোল সাম্রাজ্যের বিস্তার অভিযান এগিয়ে নিয়ে যান। চেঙ্গিস খানের নাতি কুবলাই খান তো চীনের প্রাচীর পেরিয়ে চীন দখল করে নিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইউয়ান শাসনের। তাঁর মৃত্যুর পর এই শাসনের পতন ঘটে। শোনা যায়, চেঙ্গিসের জীবনে হাজার নারীর সঙ্গ এলেও স্ত্রী বোর্তেকে তিনি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতেন। অসংখ্য সন্তানের পিতা হওয়া সত্ত্বেও শুধু বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চার ছেলেকেই উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। বোর্তের গর্ভে জন্ম নেওয়া চেঙ্গিসের চার ছেলের নাম জোচি, তুলুই, ওদেগিই এবং চুঘতাই খান।

পার্লামেন্ট ভবন
ছবি: লেখক

উলনবাটোর সিটি স্কয়ারের মূল নাম হলো সুখবাতুর স্কয়ার। ১৯২৩ সালে মঙ্গোলীয় বিপ্লবী নেতা দামদিন সুখবাতারের মৃত্যুর পর তাঁর সম্মানে এই স্কয়ারের নামকরণ করা হয়। স্কয়ারটির কেন্দ্রে তাঁর একটি অশ্বারোহী ভাস্কর্য রয়েছে। এই স্কয়ারের চারপাশে পার্লামেন্ট ভবন, সুখবাতুরের প্রতিমূর্তি ছাড়াও আছে স্টক এক্সচেঞ্জ, নাট্যশালা এবং সাংস্কৃতিক প্রাসাদ, কেন্দ্রীয় ডাকঘর, রাষ্ট্রীয় অপেরা হাউসসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবন। এই স্কয়ারের চারপাশ ভালো করে ঘুরে বেড়ালেই মনে হবে উলনবাটোর দেখে ফেলেছি। ঐতিহাসিকভাবে এখানে মঙ্গোলিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এককথায় মঙ্গোলিয়ার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু সুখবাতুর স্কয়ার।

সুখবাতুর স্কয়ার
ছবি: লেখক

উলনবাটোর শহরকে স্থানীয়রা আদর করে ডাকে ইউবি। স্কয়ারের চারপাশ দেখতে দেখতেই ছয়টা বেজে গেল। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা উপভোগ করার জন্য টিকিট কাটা রয়েছে। তুসিনতুর তাড়া দিল, সময়মতো সেখানে পৌঁছাতে হবে। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম ন্যাশনাল ড্রামা একাডেমিক থিয়েটার বিল্ডিংয়ের উদ্দেশে।

ন্যাশনাল থিয়েটার একাডেমিতে চেঙ্গিস খানের তৈলচিত্র
ছবি: লেখক

ন্যাশনাল ড্রামা একাডেমিক থিয়েটারের সামনে একটি গোলাপি পদ্ম ফুলের প্রতিকৃতি। লালরঙা নব্য ধ্রুপদি স্থাপত্যের দেয়ালে আজকের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার বড় বড় কয়েকটি ব্যানার ঝুলছে। অনুষ্ঠানের  নাম ‘ল্যান্ড অব দ্য সি’। তুসিনতুর যখন প্রথমে বলেছিল এটি মঙ্গোলিয়ার ন্যাশনাল আর্ট কনসার্ট, তখন আমি ভেবেছিলাম পার্লামেন্ট স্কয়ারের মতো কোনো খোলা স্থানে হবে গানবাজনা। কিন্তু এটি ইনডোর পারফরম্যান্স। একতলা ভবনটিতে প্রবেশ করতেই প্রথমে চোখে পড়ে চেঙ্গিস খানের একটি তৈলচিত্র মঙ্গোল সাম্রাজ্যের সিলমোহরসহ। প্রতিটি সম্রাটের ছবির নিচে রাজকীয় সিলমোহর থাকে। মিসরের রাজারের দেয়ালচিত্রগুলোর নিচে এ রকম সিলমোহর দেখেছি, যাতে লিপিবদ্ধ থাকে রাজার নাম, পদবি। সেগুলোকে বলা হয় কারতুস।

ন্যাশনাল আর্ট কনসার্টে সমবেত পরিবেশনা
ছবি: লেখক

হলঘরে প্রবেশ করলাম। লাল কার্পেট বিছানো রয়েছে সিঁড়িতে। সামনে মঞ্চ। কর্তব্যরত একজন তরুণী আমাদের আসন দেখিয়ে দিলেন। গ্রীষ্মকালে প্রতি সন্ধ্যায় এই প্রোগ্রাম দেখানো হয়। বিশেষ করে ট্যুরিস্টদের জন্যই এই আয়োজন। নিজের সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার পদ্ধতিটি ভীষণ ভালো লেগেছে। অবাক হয়েছি হলভর্তি দর্শক দেখে।

দ্য ল্যান্ড অব দ্য স্কাই
ছবি: লেখক

ঐতিহ্যবাহী মঙ্গোলীয় সমবেত সংগীত, একক সংগীত, লোকজ সংগীত মঙ্গোলীয় নৃত্যকলা, যন্ত্রবাদকদের নৈপুণ্যে এক মনোমুগ্ধকর সন্ধ্যা। শুধু নাচ আর গান নয়; মঙ্গোলিয়ার প্রাচীন ইতিহাসও প্রদর্শিত হলো। আমার কাছে চমকপ্রদ লেগেছে তাদের বিখ্যাত ‘থ্রোট সং’। কেনিয়া ভ্রমণে আদিবাসী সম্প্রদায়ের একটি পারফরম্যান্স দেখেছিলাম। গলা থেকে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্রের ঝংকার বেরিয়ে আসে। এই কৌশল আয়ত্ত করতে কত পরিশ্রম আর সাধনার প্রয়োজন হয় খোদাতালাই জানেন!

কোজিন লামা মন্দিরের দেয়াল
ছবি: লেখক

দেড় ঘণ্টা চট করে শেষ হয়ে গেল। রাত আটটা। হলঘর থেকে বেরিয়ে দেখি চারদিকে এখনো দিনের আলো। তুসিনতুর ডিনারে যাওয়ার প্রস্তাব করল। সূর্যের আলোতে ডিনার করতে কেমন যেন লাগছিল। আমার গররাজি ভাব দেখে তুসিনতুর আমাদের নিয়ে গেল অল্প দূরত্বের একটি মন্দির দেখাতে। শত বছরের মনেস্ট্রি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। এখন প্রত্নস্থান হিসেবেই পরিগণিত হচ্ছে। গাইডের ভাষ্যমতে শহরে ধর্মচর্চা সে রকম নেই। মন্দিরগুলো বন্ধ হয়েছে ১৯৯১ সালের দিকে। পুরো মঙ্গোলিয়ার ৬০ ভাগ জনগণ নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন করে না। এই রকম অনেক তিব্বতি বৌদ্ধমন্দির রয়েছে মঙ্গোলিয়াজুড়ে।

এটির নাম কোজিন লামা মনেস্ট্রি। প্রথমেই চোখে পড়ল একটি ধূসররঙা পাথরের দেয়াল। ড্রাগনসহ নানা পৌরাণিক গল্প খোদিত রয়েছে। তারপর কিছু দূর হেঁটে গেলে মূল মন্দির। কাঠের কারুকাজ করা এই চত্বরের প্রতিটি স্থাপনার দরজা খুবই দৃষ্টিনন্দন। মোট ছয়টি মন্দির রয়েছে এই চত্বরে।

ডিনার কক্ষ
ছবি: লেখক

রাত ৯টার দিকে ডিনার করতে গেলাম। তখনো চারপাশ আলোকিত রয়েছে। আজ ওয়েলকাম ডিনারের আয়োজন করেছে মঙ্গোলিয়ার ট্রাভেল কোম্পানি। রেস্তোরাঁয় একটি কক্ষ রিজার্ভ করা হয়েছে। আটজন একসঙ্গে খাবার উপভোগ করা যায়। তুসিনতুরসহ আমরা মাত্র তিনজন। বেশ গোছানো আর পরিপাটি কক্ষটি। দেয়ালে পেইন্টিং ঝুলছে। আমরা যে মনেস্ট্রি দেখে রাতের খাবার খেতে এলাম। আমাদের খাবার ঘরে প্রবেশ করলে প্রথমে চোখ যায় কোজিন লামা মনেস্ট্রির একটি পুরোনো ছবি। তা ছাড়া স্যুভেনির দিয়ে সাজানো রুমটি। মনে হচ্ছে কোনো রাজকীয় বাড়ির ছোট ডাইনিং হল। খেলাম গরুর মাংসের সালাদ, বিফ স্টেগ খুব তুলতুলে ও রসালো। ছুরি বসানোর সঙ্গে সঙ্গে ডুবে যাচ্ছে মাংসের মধ্যে। খাবার শেষে এল পুডিং।

শহরে মার্কোপোলোর ভাস্কর্য
ছবি: লেখক

রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে মূল সড়কের পাশ থেকে অন্য পাশে যাওয়ার সময় দেখলাম মার্কোপোলোর ভাস্কর্য। যাক মঙ্গোলবাসী তাঁকে ভোলেনি। মঙ্গোলিয়াকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছেন ইতালীয় বণিক ও পর্যটক মার্কোপোলো। মার্কোপোলোই প্রথম ইউরোপীয় যিনি প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন।

আধুনিক উলনবাটোরের মাঝে প্রাচীন উলনবাটোর
ছবি: লেখক

এখন গন্তব্য হোটেল নাইন। সেই যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি, এখনো পথে। অবশেষে একটু থামার অবকাশ পেলাম। উলনবাটোর শহরের গল্প কি এত অল্প! একদম নয়। কাল যাব অন্য শহরে। ফিরব ছয় দিন পর আবারও রাজধানীতে। গল্প কিন্তু বাকি রয়ে গেল চেঙ্গিস খান জাতীয় জাদুঘরের। শিরগিরই ফিরছি মঙ্গোল রাজধানীতে।