দোকানি মধু কবিকে বললেন, ‘আপনি এই কাব্যের ভাষা বুঝতে পারবেন না!’

মাইকেল মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য প্রকাশিত হওয়ার পর বাঙালি শিক্ষিত সমাজে খুব আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অধিকাংশ সাহিত্যিকই তাঁর এমন সৃষ্টিকর্মের স্বীকৃতি না দিয়ে পারলেন না, অনেকে বিভিন্নভাবে সমালোচনাও করতে লাগলেন। মাইকেলের এই সৃষ্টি সত্যিকার অর্থেই বাংলা সাহিত্যে ছিল বড় ঘটনা। এসব কারণে সাহিত্য আড্ডা ও সভা–সমাবেশ থেকে নিজেকে কিছুদিন দূরে রাখলেন মাইকেল। এমন সময় একদিন বাজারে গিয়ে দেখলেন এক অদ্ভুত দৃশ্য! এক সাধারণ দোকানদার খুব মনোযোগসহকারে একটি গ্রন্থ পাঠ করছেন।

কৌতূহলী হয়ে কবি তাঁর কাছে গেলেন। গিয়ে দেখলেন, অবাক এক কাণ্ড, দোকানি তো তাঁর লেখা মেঘনাদবধ কাব্য পড়ছেন! তবু পাঠককে একটু বাজিয়ে দেখতে প্রশ্ন করলেন মাইকেল, ‘কী পড়ছেন মশাই?’

দোকানি মুখ তুলে বললেন, ‘আজ্ঞে এ এক নতুন কাব্য।’

মধু কবি রসিকতা করে বললেন, ‘বাংলা সাহিত্যে তো উল্লেখযোগ্য কবিতাই নেই! আর আপনি বসে কাব্যের বই পড়ছেন?’

দোকানি একটু নড়েচড়ে বসলেন এবার। তারপর উত্তর দিলেন, ‘সে কী মশাই, এই একটিমাত্র মেঘনাদবধ কাব্যই যেকোনো ভাষাকে গৌরবান্বিত করতে পারে!’

মধু কবি বললেন, ‘তা একটু পড়ে শোনান তো আপনার এত ভালো লাগার কাব্য থেকে।’

এক্ষণে দোকানি যে জবাব দিলেন, তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলেন না কবি। তিনি বললেন, ‘আমার মনে হয় আপনি এই কাব্যের ভাষা বুঝতে পারবেন না, শুনে কী লাভ!’

কবি তবু নাছোড়বান্দা। আবদার করলেন, পড়ে শোনাতেই হবে। অগত্যা দোকানি উচ্চ স্বরে মেঘনাদবধ কাব্য থেকে পড়তে শুরু করলেন। কবিও শুনলেন মনোযোগ দিয়ে। কিন্তু দোকানি ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারলেন না, তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন স্বয়ং এই মহাকাব্যের লেখক!

সূত্র: অংশুমান চক্রবর্তীর বঙ্গ মনীষীদের রঙ্গ রসিকতা

  •  গ্রন্থনা: বাশিরুল আমিন